করোনা রুখতে রাজ্যকে একগুচ্ছ পরামর্শ নোবেলজয়ী অভিজিৎ ও তার বোর্ডের

করোনা মোকাবিলায় রাজ্যকে পরামর্শ দিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড।

Written by SNS Kolkata | July 16, 2020 8:08 pm

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা মোকাবিলায় রাজ্যকে পরামর্শ দিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার পরে সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ নেই। একথা মাথায় রেখে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে আরও বেশি করে প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে বোর্ডের তরফে।

যাদের কো-মৰ্বিডিটি রয়েছে তাদের হাসপাতালের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হোক। কম উপসর্গ বা উপসগহীন হলে হাসপাতালের বদলে রোগীদের কমিউনিটি কেয়ার সেন্টারে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বোর্ডের তরফে। বুধবার বোর্ডের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে ৬টি নতুন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

১/ লকডাউনের পর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। উচ্চমানের মাস্ক কিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলা হচ্ছে। উচ্চমানের মাস্ক পরলে কি কি সুবিধা হবে তাও গুরুত্ব দিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করার জন্য বলেছে বোর্ড। রাজ্য সরকার যেন এবিষয়ে উদ্যোগী হয়।

২/ যেসব জায়গায় করোনা উচ্চহারে সংক্রমণ ঘটাতে পারে সেইসব ক্লাস্টারগুলিকে চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। ওই এলাকাগুলোকে কনটেনমেন্ট জোন করে পরীক্ষা আরও বাড়ানো উচিত এবং আরও পদ্ধতি ব্যবহার করে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

৩/ করোনার জেরে লকডাউন এবং তার ফলে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে এই প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলিকে চিহ্নিত করে বিশেষ নজর দিতে হবে, প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

৪/ যাদের কো-মবিডিটি (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, সিওপিডি, ক্যানসার, কম প্রতিরোধ ক্ষমতা) আছে তাদেরকে বিশেষ নজরে রাখতে হবে। বয়স্কদের কাছে রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি। ওই সব ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠরা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, মাস্ক পরেন, ভিড় স্থান এড়িয়ে চলে তা দেখতে হবে।

এদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে তারা যেন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে। ঝুঁকির প্রবণতা যাদের বেশি বা ঝুঁকি রয়েছে তাদের হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োজিত করতে হবে এই কাজে। করোনার প্রকোপ বাড়ছে, সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তর কথা মাথায় রেখে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, বিভিন্ন ওষুধ যা অনুমোদিত তা পর্যাপ্ত রাখতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়অজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ১৫ দিন অন্তর, কারণ পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। সেই কারণে নীতিনির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫/ উপসর্গহীন বা কম উপসর্গ, যাদের ঝুঁকি কম রয়েছে তাদের হোম-আইসোলেশনে রাখা উচিত। যদি বাড়িতে জায়গা না থাকে তাহলে কমিউনিটি সেন্টারে। সরকার বোর্ডকে জানিয়েছে, সেফ হোম তৈরি করা হয়েছে। সেই সেফ হোমে যথেষ্ট শয্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কমিউনিটি কেয়ার সেন্টারের মান বজায় রাখতে হবে।

৬/ করোনাকে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যেসব পরিবারে সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাদের একঘরে করে। দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বাংলার ঐতিহ্য নিয়ে যে গর্ব আমরা করি, তা ছোট হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে মানুষ তার সংক্রমণ লুকিয়ে রাখতে উৎসাহ পাবে। এধরনের আতঙ্ক অনভিপ্রেত।

সামাজিক যে পরিমণ্ডল রয়েছে তার বুননটাকে অক্ষত রেখে আমাদের এই রোগটাকে জয় করতে হবে। যারা এর বিরোধিতা করবে বা করোনা আক্রান্তদের ওপর অত্যাচার করবে তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তৈরি করতে হবে কোভিড উইনার্স-এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সঙ্গে গোষ্ঠীর সাহায্য নিতে হবে। যুব সমাজকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে