স্মার্টফোন আর স্মার্টকার্ড না থাকায় মেট্রো পরিসেবা থেকে অনেকেই বঞ্চিত

পাতালপথে প্রবেশের মুখেই গার্ডরেল দিয়ে পথ আটকানাে। সেখানে ই-পাস দেখিয়ে তবেই মিলছে ভিতরে প্রবেশের ছাড়পত্র।

Written by SNS Kolkata | September 15, 2020 2:52 pm

নিউ নরমালে প্রায় ছয় মাস পর সােমবার থেকে চালু হল কলকাতা মেট্রোরেল পরিসেবা। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

পাতালপথে প্রবেশের মুখেই গার্ডরেল দিয়ে পথ আটকানাে। সেখানে ই-পাস দেখিয়ে তবেই মিলছে ভিতরে প্রবেশের ছাড়পত্র। আর দেখাতে না পারলে বিমর্ষ হয়ে ফিরতে হয়েছে বহু সংখ্যককে। তার মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু প্রবীণ নাগরিক। গার্ডরেলের ওপারে দাঁড়িয়ে ই-পাস খতিয়ে দেখছেন রক্ষীরা। রেলরক্ষীর পাশপাশি ছিলেন কলকাতা পুলিশের বাহিনী। রাউন্ডে বেরিয়ে ঘণ্টাখানেক পরপরই স্টেশনগুলি ঘুরে দেখছেন শীর্ষ আধিকারিকরা। সােমবার এই চিত্রই ধরা পড়ল কমবেশি প্রায় সকল মেট্রো স্টেশনে।

স্মার্ট ফোনে যথেষ্ট সড়গড় নন তাই ই-পাস জোগাড় করতে পারেননি। ভেবেছিলেন যদি বলে কয়ে কিছু ব্যবস্থা করা যায়। ব্যাঙ্ক থেকে পােস্ট অফিস বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কিছু না কিছু পৃথক বন্দোবস্ত করা থাকে। সেই ভাবনা নিয়ে মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশনে হাজির হয়েছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা সত্তরাের্ধ্ব সন্ময় বসু। কিন্তু তাকে ফেরত পাঠানাে হল।

তবে তিনি একা নন, এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু। কবি সুভাষ থেকে রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনে যাওয়ার ছিল গড়িয়ার ষাটোর্ধ্ব দাশ দম্পতির। পিজি হাসপাতালে নিকট আত্মীয়া ভর্তি। তাঁকেই দেখতেই বাসের ভিড় এড়িয়ে দ্রুত মেট্রোয় চড়ে যাওয়া সম্ভব হত। কিন্তু স্মার্ট ফোন এবং মেট্রোর স্মার্ট কার্ড না থাকায় স্টেশনের সামনে গিয়েও হতাশ হয়ে শেষমেশে বাস ধরলেন দাশ দম্পতি। 

মেট্রোরেলের মধ্যে প্রতিবন্ধী ও বরিষ্ঠ নাগরিকদের জন্য রয়েছে বসার পৃথক সিট। দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষ তেমন কিছু ভাবলে ভালাে হত বলে দৈনিক স্টেটসম্যানের কাছে আক্ষেপ করলেন এমন বেশ কয়েকজন প্রবীণ মানুষ।

নিউ নরমালে প্রায় ছয় মাস পর সােমবার থেকে চালু হল কলকাতা মেট্রোরেল পরিসেবা। আঁটঘাট বেধেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোয় অত্যাধিক ভিড় সামাল দিতে স্টেশনগুলিতে রেলরক্ষীদের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের বাড়তি বাহিনী মােতায়েন করা হয়। এতদিন পর পুনরায় শহরের লাইফলাইন চালু হওয়ায় খুশি হয়েছেন অফিসযাত্রীরা। 

সকাল থেকেই মেট্রোয় ছিল সাজো সাজো রব। পরীক্ষার জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি ছিল সাড়া। কিন্তু গােটা দিনভর যাত্রী সংখ্যা ছিল নামমাত্র। অধিকাংশ মেট্রোর রেকই গেছে একেবারে হাতেগােনা যাত্রী নিয়ে। তবে পাতালপথে প্রবেশের মুখেই ঝক্কি সামাল দিতে হয়েছে কলকাতার পুলিশকর্মী-আধিকারিকদের। বহুসংখ্যককে স্মার্ট ফোনে ই-পাস কিভাবে কাটা যাবে তা দেখিয়ে দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। অ্যানরয়েড ফোন না থাকলে যে ই-পাস পাওয়া সম্ভব নয় তাও বুঝিয়ে বলেন পুলিশ আধিকারিকরা। ই-পাসে মেট্রোর স্লট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে রেলরক্ষীদের জানিয়েছেন অনেকেই।

অন্যদিকে এদিন সকাল থেকেই মাস্ক-ফেন্সশিল্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়েই স্টেশনগুলিতে হাজির হন নিত্যযাত্রীরা। তবে সেই সংখ্যা সকাল থেকেই ছিল হাতে গােনা। কলকতা মেট্রোতে তাও যে কয়জন যাত্রী উঠেছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় তার অর্ধেকও হয়নি। তবে প্রথম দিন বলে হয়তাে এই চিত্র, আগামী দিনে যাত্রী সংখ্যা আশানুরূপ হবে বলে মন্তব্য করেন এক মেট্রো আধিকারিক। 

২৪ টি মেট্রো স্টেশনে ২৬ টি প্রবেশ ও ২৭ টি প্রস্থানপথ রয়েছে। পাতালপথের মুখে কড়া নজরদারি। সকাল থেকেই মেট্রো চালু থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা নামমাত্র। মেট্রো ভিতর স্টেশনে এবং রেলের সিটে দূরত্ববিধি চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ভিতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া হচ্ছে স্যানিটাইজার, শৃঙ্খলা মেনে একএক করে সুরক্ষাবিধি অনুযায়ী তাদের ছাড়ছেন রেলরক্ষীরা। বিকেল ৪ টে পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোয় যাত্রী হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বলে জানান এক আধিকারিক। ফলে ভিড় সামাল দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না। তবে পুজোর আগে কেনাকাটা শুরু হলেই এই যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে বলে আশাবাদী মেট্রোর এক আধিকারিক।