সংরক্ষণের কাঁচিতে তৃণমূলের অনেক হেভিওয়েটের হাতছাড়া নিজের ওয়ার্ড

শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারােটা নাগাদ রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করল কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের সংরক্ষণ তালিকা।

Written by SNS Kolkata | January 18, 2020 4:22 pm

তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পুরসভার ভােট হওয়ার কথা। পুরসভা ভােটের সংরক্ষণ তালিকা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কাউন্সিলররা। শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারােটা নাগাদ রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করল কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের সংরক্ষণ তালিকা। দেখা গেল, সংরক্ষণের কাঁচিতে নিজের এলাকা থেকে কাটা পড়েছেন প্রায় দশজন হেভিওয়েট তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। যাঁদের মধ্যে চারজন মেয়র পারিষদ এবং দু’জন বরাে চেয়ারম্যান।

কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের যে সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৮ টি ওয়ার্ড তফশিলি জাতি ও উপজাতি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া ৪৫ টি জেনারেল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩,৭৮ এবং ১২৭ নম্বর ওয়ার্ড তফশিলি উপজাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ৫৮,১০৭,১১০,১৪১ এবং ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে লড়বেন তপশিলি জাতিভুক্ত মহিলারা। এছাড়াও ৩,৬,৯,১২,১৫,১৮,২১,২৪,২৭,৩০,৩৪,৩৭,৪০,৪৩,৪৬,৪৯,৫২,৫৫,৫৯ ইত্যাদি ৪৫ টি ওয়ার্ড জেনারেল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। এই সংরক্ষণের হিসেবে নিকেশেই দেখা গেল নিজেদের গড় হারাতে বসেছেন বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা।

যেমন ৯০ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। এর ফলে ওই ওয়ার্ড থেকে জিতে আসা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় নিজের এলাকা থেকে আর লড়তে পারবেন না। একই অবস্থা ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের। আগে তিনি ছিলেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। গত পুরভােটে এই ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন। ফের তাঁর ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডটি তপশিলি জাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় আবার নতুন ওয়ার্ড খুঁজতে হবে স্বপন সমাদ্দারকে। একইভাবে নিজের ৯৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়তে পারবেন না এখানকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদের সদস্য দেবব্রত মজুমদার।

একই যুক্তিতে নিজের ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড হারাতে চলেছেন রতন দে। তিনিও মেয়র পারিষদের সদস্য। সংরক্ষণের জন্য গড় হারাচ্ছেন দীর্ঘদিনের দুই তৃণমূল কাউন্সিল। এঁদের মধ্যে রয়েছে ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপন সাহা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেন। নিজেদের ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় বাদ পড়লেন ৭ ও ১৬ নম্বর বরাের দুই চেয়ারম্যান। এঁরা হলেন ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুশান্ত ঘােষ এবং ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য।

এছাড়া তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ নাকতলা এলাকার বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের ১১০ নম্বর ওয়ার্ডটি চলে গিয়েছে তপশিলি জাতির মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের আওতায়। তবে এখনও পর্যন্ত বেহালার শােভন চট্টোপাধ্যায়ের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডটি সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত হয়নি। তবে এই মুহুর্তে শােভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অবস্থানটি স্পষ্ট নয়। সেজন্য শােভনের ওয়ার্ডে তিনি নিজেই আবার প্রার্থী হবেন কিনা এবং প্রার্থী হলে তা তৃণমূলের নাকি বিজেপির ব্যানারে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। কানাঘুষাে শােনা যাচ্ছে, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে শােভন-জায়া রত্নাকে প্রার্থী করা হতে পারে।

সংরক্ষণের জন্য বাদ পড়া মেয়র পারিষদরা জানিয়েছেন, তাঁরা দল এবং নেত্রীর নির্দেশ মেনেই চলবেন। নিজেদের গড়ে তাদের অনুগামীদেরই দাঁড় করানাে হবে। সেক্ষেত্রে সেই অনুগামীদের জিতিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্বও। তৃণমূলের ওই হেভিওয়েট নেতাদের ওপরই থাকবে। অন্যদিকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ওয়ার্ড সংরক্ষিত হওয়ার জন্য যাদের নাম বাদ গেল, তাদের বিষয়টি দলের মধ্যে আলােচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূল সুপ্রিমাে।

সংরক্ষণের জন্য বাদ পড়া মেয়র পারিষদরা জানিয়েছেন, তারা দল এবল নেত্রীর নির্দেশ মেনেই চলবেন। নিজেদের গড়ে তাদের অনুগামীদেরই দাড় করানাে হবে। সেক্ষেত্রে সেই অনুগামীদের জিতিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব তৃণমূলের ওই হেভিওয়েট নেতাদের ওপরই থাকবে। অন্যদিকে মেয়রা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ওয়ার্ড সংরক্ষিত হওয়ার জন্য যাদের নাম বাদ গেল, তাদের বিষয়টি দলের মধ্যে আলােচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূল সুপ্রিমাে।

এদিকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনটি বিজেপি প্রার্থীদের কাছে সেমিফাইনালের মতাে এবং তৃণমূলের কাছে ফাইনালের মতাে। সেমিফাইনালে জিততে হলে ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৭৩ টি ওয়ার্ড বিজেপির হাতে আসতে হবে। যদিও লােকসভা ভােটের ফলাফলের নিরিখে ৫০ টির মতাে ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারিয়েছে বিজেপি। তবে পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি কাকে মুখ হিসেবে তুলে ধরবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যােগ দেওয়া সব্যসাচী দত্তকে পুরসভা ভােটে দক্ষিণ কলকাতার সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করছে বিজেপি।

এদিকে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে জনসংযােগকে আরও জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। বলেছেন রাজনীতি বা সমালােচনা করে নয়, উন্নয়নের কর্মসূচিকে সামনে রেখেই প্রচার চালাতে হবে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভােটগুরু প্রশান্ত কিশােরও। জোর দিয়েছেন জনসংযােগের ওপর। পুর ও নগরােন্নয়ন দফতর থেকে। থেকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে, মার্চ মাসের আগেই বকেয়া শেষ। করে ফেলতে হবে। প্রথমে কলকাতা পুরসভার ভােট হওয়ার পর অন্য পুরসভাগুলির ভােট হওয়ার কথা। এই ভােটকে ঘিরে জোরদার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয় দলই।