বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেস ও সিপিএমকে পাশে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী

লােকসভা ভােটে জোর ধাক্কা খাওয়ার পর এবার রাজ্যের বিরােধী দল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টকে সঙ্গে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Kolkata | June 27, 2019 1:48 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

লােকসভা ভােটে জোর ধাক্কা খাওয়ার পর এবার রাজ্যের বিরােধী দল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টকে সঙ্গে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

লােকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় স্তরে ২৩ টি দলের সঙ্গে জোট করে ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার কথা ঘােষণা করেছিলেন তৃণমূলে নেত্রী। কিন্তু সেই ফর্মুলা যে এবারের লােকসভা নির্বাচনে কাজ করেনি, সেকথা পরিষ্কার।

বরং লােকসভায় বিজেপির আসন এই রাজ্যে দুই থেকে আঠেরাে হওয়ায় তা রীতিমতাে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের কাছে। তাই পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টকে পাশে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বললেন, সিপিএম, কংগ্রেস দেশকে ধ্বংস করবে একথা আমি বিশ্বাস করি না। তবে বিজেপি ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে। বিজেপি ছাড়া এই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলিকে সৎ বলেই আমি মনে করি। এর বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে প্রতিরােধ গড়ে তুলতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই আর্জি রাজ্যে বিরােধী দলগুলির প্রতি জোট বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেন, এই রাজ্যে আপনারা যতই বিরােধিতা করুন, কেন্দ্রে সংসদে এবং রাজ্যসভায় আমরা আপনাদেরই সমর্থন করি। এর আগেও আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে ইভিএম-এর বদলে ব্যালটে ভােট করার জন্য একজোট হয়ে আবেদন জানাতে বলেছিলাম।

কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, রাফায়েল সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা আপনাদের সমর্থন করেছি। এখানে আপনারা বামেদের সঙ্গে জোট করবেন কি করবেন না, সেটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু জাতীয় স্বার্থটা দেখবেন তাে?

মুখ্যমন্ত্রী এদিনও জানিয়ে দেন, লােকসভা ভােটের ফলাফল আমি কিছুতেই মানব না। ভােটযন্ত্রে কারচুপির প্রসঙ্গ আবারও তােলেন তিনি। ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশে যেখানে কংগ্রেস জিতেছিল লােকসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগেই, সেখানে তারা কীভাবে শূন্য পায়? ভােটের সময় বিজেপি বিপুল পরিমাণে টাকা ছড়িয়েছে।

এদিন বাম-কংগ্রেসের ‘কাটমানি’ ইস্যু নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণের তির পুরােপুরি বিজেপির দিকে ঘুরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কাটমানি নিয়ে বিতর্ক করছেন, নােটবন্দি থেকে আসা ব্ল্যাকমানি’র কী হল, তা দেখছেন না? এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা ভােটে খরচ হয়েছে তার উৎস কী, কে দেবে এর উত্তর?

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় বলেন, নির্বাচনের সময় বহু টাকা রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঢুকেছে। রাতে সিআইএসএফকে সঙ্গে নিয়ে ভােটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছে। ভােটার পিছু পাঁচ হাজার করে টাকা বিলিয়েছে। লক্ষ লক্ষ বাইক নিয়ে ফেট্টি বেঁধে ঘুরছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপিকে ভােট দিলে কী হয়, তার প্রমাণ ভাটপাড়া। সেখানে এখনও সন্ত্রাস চালানাে হচ্ছে। পুলিশকে বলেছি, স্বতঃপ্রণােদিত মামলা করতে। দু’বার ওখানে গিয়েছিলাম। রাস্তায় লােকে হাঁটতে ভয় পাচ্ছে। ২০১১ সালে ব্যারাকপুরে তৃণমূল জেতার পর তাে কোনও গণ্ডগােল হয়নি। বরং রবীন্দ্রসঙ্গীত আর নজরুলগীতি বেজেছে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে।

তবে এদিন ক্রমাগত মিথ্যে খবর পরিবেশন করার দায়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও অভিযুক্ত করেছেন মমতা। মমতা বলেন, এই রাজ্যকে বঞ্চনার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্র। প্রতি বছর ঋণ কেটে নেওয়া তাে আছেই। তার ওপর তাজপর বন্দর তৈরি না করা, বাণতলায় দেশের বৃহত্তম চর্মশিল্প নগরী প্রকল্প থমকে দেওয়া ইত্যাদির প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দফতরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে চাইছে। কেন্দ্র থেকে অ্যাডভাইসরি পাঠানােরও সমালােচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন তােলেন, উত্তরপ্রদেশে খুনের পর কতবার অ্যাডভাইসরি পাঠানাে হয়েছে? ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানায় অ্যাডভাইসরি পাঠানাে হয়েছে অথচ বিজেপির এখানকার নেতা উত্তরপ্রদেশ থেকে লােক এনে সংঘর্ষ বাধানাের পরেও পুলিশ চুপ করে বসে রয়েছে। মমতা বলেন, আমার মাঝে মাঝে ভয় হয়, দেশের সংবিধানটাই না বদলে দেয়?

মমতা এদিন জানিয়ে দেন, তাঁর সৎসাহস আছে বলেই তিনি দুর্নীতি ধরতে একটা মনিটরিং সেল তৈরি করেছি। আমার দলের লােকেদের কীভাবে চলবে তার জন্য নীতি ঠিক করেছি। তাতে কার কী বলার আছে। আগামী দিনে তিনি কোন পথে চলবেন, সেকথা সর্বসমক্ষে আনতে না চাইলেও এদিন বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, কটা আসন পেয়ে মনে করবেন না তৃণমূল হনুমানের মতাে ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে। আগামীদিনে এই রাজ্য থেকে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে উৎখাত করবই।