লকডাউনের নিয়মে একগুচ্ছ ছাড় ঘোষণা মমতার

বৃহস্পতিবার নবান্নে শিল্পসংস্থা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা বাড়ছে, লকডাউন ভাঙা যাবে না। উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে মানতে হচ্ছে।

Written by SNS Kolkata | April 10, 2020 8:15 pm

দেশজুড়ে লকডাউন (File Photo: AFP)

করোনা লকডাউনের মেয়াদবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার নবান্নে শিল্পসংস্থা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা বাড়ছে, লকডাউন ভাঙা যাবে না। উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে মানতে হচ্ছে। আগামী দু-তিন সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে বঙ্গবাসীর দিনযাপন সচল রাখতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। লকডাউনের নিয়মে কিছুটা ছাড় দেওয়া হল। ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের মেয়াদ বৃদ্ধি, হোম ডেলিভারির জন্য রাস্তায় অল্প কিছু ট্যাক্সি নামানো এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।

এদিন নবান্ন সভাঘরের বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ভারত চেম্বার অফ কমার্স এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ট্যুরিজম সেন্টার, হোটেল, ওষুধ, স্পেনসার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং পার্টস ইত্যাদির বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীরা। উপস্থিত ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এদিন লকডাউনে তাদের বিভিন্ন সমস্যা, দাবিদাওয়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। সেইসঙ্গে লড়াইনের লড়াইতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন।

প্রত্যেক ব্যবসায়ী সংগঠনই মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, রাজ্যের করোনা এমার্জেন্সি রিলিফ ফান্ডে তারা টাকা দিতে চান। এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা যে আমাদের জন্য এতটা ভেবেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ। তবে আপনারা বরং আমাদের রিলিফ ফান্ডে যে টাকা দেনে ভেবেছিলেন, তার পঞ্চাশ শতাংশ দিন। বাকি পঞ্চাশ শতাংশ আপনাদের শ্রমিকা, কর্মচারীদের বেতন দিতে খরচ করুন। ওটাও মানুষের কাজেই লাগবে।

এদিনের বৈঠকে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, দিদি এই করোনাভাইরাস চলে যাওয়ার পর মন্দার রাক্ষস অপেক্ষা করে রয়েছে আমাদের জন্য। ভাইরাস চলে গেলেও এই রাক্ষসের গ্রাসে আগামী দেড় বছরেও আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না। উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলার ব্যবসায়ীরাই নয়, সারা দেশ, সারা বিশ্বের অর্থনীতিই তো ধাক্কা খেয়েছে। এর মধ্যেই আমাদের সবটা করতে হবে। আমাদের মানবিক হয়েই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার আগামী দিনে করোনা মোকাকিলরা সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন কর্মসুচি চালানো নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে রাজ্য সরকার। লকডাউনের মেয়াদবৃদ্ধি হলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে বৃহস্পতিবার কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন মমতা।

জরুরি ভিত্তিতে পণ্য সরবরাহের স্বার্থে পরিবহণে ছাড়ের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন হোম ডেলিভারির সুবিধার জন্য গতিধারা প্রকল্পের কিংবা নীল সাদা কিছু সরকারি ট্যাক্সিকে নামানো হবে রাস্তায়। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থেকে দু-তিন জনকে তোলা হবে ট্যাক্সিতে। ফোন মারফত এই ট্যাক্সিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।

লকডাউনের আওতা থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের আগেই বাইরে রাখার সুপারিশ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু উত্তরবঙ্গে করোনা সংক্রমণের গুরুত্ব বুঝে চা বাগান খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মমতা জানান, চা বাগানের শ্রমিকদের ১৫ শতাংশকে কাজের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই হিসেব মেনে রোটেশন পদ্ধতিতে চা বাগানের শ্রমিকদের কাজে লাগাতে হবে। তবে প্রত্যেক শ্রমিকের স্যানিটাইজেশনের দিকে নজর রাখতে হবে কোম্পানিগুলিকে। কাজের সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চা পাতা এখন না তুললে পরে আর তা কাজে লাগানো যাবে না, তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই চা বাগান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আসন্ন ধান কাটার মরুসুমে কৃষকরাও মাঠে নামতে পারেন। সোস্যাল ডিসট্যান্সিং-এর নিয়ম মেনে।

এছাড়া যে সমস্ত কারখানা অত্যাবশকীয় পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এবং যাদের কিছু উৎপাদনের কাজ চালু থাকা অবস্থাতেই বন্ধ রাখতে হয়েছে সেখানে পঞ্চাশ শতাংশ শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে (বাই রোটেশন) কাজে লাগানো যেতে পারে। উপযুক্ত স্যানিটাইজেশন এবং সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে।

তবে তার মানে এই নয় যে রাজ্যের সব কারখানা খুলে যাবে। কোন কোন কারখানা কী ধরনের পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত মুখ্যসচিরে পর্যালোচনার সাপেক্ষেই সেগুলি খোলার অনুমতি মিলবে।

ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের মেয়াদ বাড়ানো হল ৩০ জুন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে সমস্যা না মিটলে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স রিনিউ করে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।

শিল্প সংস্থাগুলিকে এক একটি বাজারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে কাপড়ের মাস্ক বানাতে বলা হয়েছে। এদিন ওষুধ ব্যবসায়ীদের তরফে বলা হয়, বাংলায় ওষুধের কোনও অভাব নেই। তাই আতঙ্কিত হয়ে কেউ যেন বেশি ওষুধ একসঙ্গে কিনে না ফেলে। তাতে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান বাংলায় যারা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরি করত তাদের কী অবস্থা? ওই ব্যবসায়ী জানান, একসময় সি আর ল্যাবরেটরি এবং বেঙ্গল কেমিকেল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরি করত। তবে এখন আর বেঙ্গল কেমিকেলের কাছে এই ওষুধ তৈরি করার মতো কাঁচামাল নেই। তাই এরা এখন আর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরি করে না। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এদিন সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন মজুত আছে।