করোনা পরীক্ষার জাল চক্র নিয়ে উদ্বেগ মমতার

করোনা নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্যে আশা ও আশঙ্কা দুইই রয়েছে। একদিকে করোনায় সুস্থতার হার বাড়ছে অন্যদিকে করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালচক্রের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে।

Written by SNS Kolkata | August 7, 2020 12:55 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্যে আশা ও আশঙ্কা দুইই রয়েছে। একদিকে করোনায় সুস্থতার হার বাড়ছে অন্যদিকে করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালচক্রের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নবান্নে স্বস্তি ও উদ্বেদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের পক্ষে নেওয়া একাধিক কর্মসূচির কথা জানা গেল নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে। বৃহস্পতিবার নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুখ্যসচিব রাজীব সিন্হা জানান, রাজ্যে করোনায় সুস্থতার হার বাড়ছে। এই মুহূর্তে সেই হার ৭০.৪ শতাংশ। অন্যদিকে মৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে ২.২ শতাংশ। এর মধ্যে ৮৭.৬ শতাংশই কো-মরবিডিটির জন্য।

মুখ্যসচিব এদিন জানান, ৭০ শতাংশ মৃত্যুই ঘটেছে হাসপাতালে দেরি করে নিয়ে আসার জন্য। এই কারণে শরীরে অক্সিজেন লেভেল ৯০-এর কম হলেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। এই মুহুর্তে মোট আক্রান্তের ১৮ শতাংশ ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। এই মুহূর্তে রাজ্যে কোভিড বেডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১, ৫৬০টি। কোভিড রোগির চিকিৎসায় প্লাজমা ব্যাঙ্ক চালু রয়েছে রাজ্যে। কর্ড ব্লাড বাঙ্ককেও কাজে লাগানো যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যে করোনা রোগিদের সুস্থতার হার বাড়ায় কোভিড ওয়ারিয়র, ভলান্টিয়রদের কাজের প্রশংসা করেন। তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দেন আত্মতুষ্টির কোনও কারণ নেই। সংক্রমণ রুখতে আরও কড়া ও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি এদিন ফের জানিয়ে দেন স্বাস্থ্য দফতরে টোল ফ্রি নম্বর (১৮০০৩১৩৪৪৪২২২)-এ ফোন করলে মিলবে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। এছাড়া স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে করোনায় গুরুতর অসুস্থ রোগিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। যা দেশের মধ্যে এই রাজ্যেই প্রথম।

৯৬ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে এই তথ্যসন্ধান দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মৃদু সংত্রমণ থাকলে বা উপসর্গহীন হলে বাড়িতেই টেলি মেডিসিনের সহায়তা মিলবে। এজন্য টেলি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংও শুরু হয়েছে। টেলি মেডিসিন দেওয়ার জন্য একটি হেল্পলাইনও চালু করেছে রাজ্য সরকার। সেই নম্বর হল ৪০৯০২৯২৯। এছাড়া টেলি মেডিসিনের জন্য হেল্পলাইন হল ২৩৫-৭৬-০০১।

কোভিডে পরিষেবা বাড়ানোর জন্য হাউস স্টাফ, নার্সদের কাজে লাগানো হবে। ইতিমধ্যেই ৫০০ হাউস স্টাফ নেওয়া হয়েছে। নার্সদেরও ওয়াক-ইন-ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে কোভিড মোকাবিলায় কাজে লাগানো হবে। রাজ্যে আবাসনে বা একাকী থাকা বয়স্করা রিস্ক জোনে রয়েছেন।

এদেরকে আবাসনের বাসিন্দারাও সাহায্য করতে পারছে না। আবার বাইরে থেকেও লোকজন ঢুকতে পারছেন না। এই ধরনের একা কাটানো বয়স্কদের জন্য একটা ডেটাবেস তৈরি করতে পুরসভাকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের যাবতীয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য পৃথক হেল্প লাইন চালু করতে বলেন।

করোনা আবহে শহরে অসহায় বয়স্কদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য মুখ্যসচিব ও রাজাবাসীর কলকাতার পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারই কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় এরকম একজন একা থাকা বৃদ্ধ অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন।

এরপর ওই বৃদ্ধের তরফে তাঁর কন্যা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে রাজ্যের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ দল করোনার ভুয়ো পরীক্ষার চক্রের হদিশ করা। মুখ্যসচিব জানান, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বৃহস্পতিবার একদিনে রাজ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ২৫,৬০০।

তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, প্রাণের আতঙ্কে ভুয়ো করোনার পরীক্ষার চক্রে পা দেবেন না। ল্যাবরেটরির নাম, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনও এজেন্টের কাছে গিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করবেন না। অনেকেই কোভিড আতঙ্কের ফায়দা তুলতে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা করছে। ল্যাবরেটরি বা হাসপাতালের এজেন্ট বলে দাবি করে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে।

কখনও ভুল রিপোর্ট দিচ্ছে কিংবা যা খুশি চার্জ নিচ্ছে। এরকম কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, জাল করোনা পরীক্ষা চক্রের খপ্পরে পড়লে যাচাই করে নিন। প্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।