যােগির রাজ্য বনাম দিদির রাজ্য গণতন্ত্রের পার্থক্য তুলে ধরলেন মমতা

উত্তরপ্রদেশে বিজেপি শাসনকালেই ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমনকী জামিয়া মিলিয়ায় ঢুকে সেখানেও পড়ুয়াদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ।

Written by SNS Kolkata | December 25, 2019 4:12 pm

শহরে চতুর্থ দিনের মিছিলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে সওয়াল করেন। যেখানে সাধারণ মানুষের আন্দোলনের ওপর নির্বিচারে গুলি করা হচ্ছে সেখানের গণতন্ত্রই থেকে যায় প্রশ্নের মুখে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি শাসনকালেই ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমনকী জামিয়া মিলিয়ায় ঢুকে সেখানেও পড়ুয়াদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানাে হয়েছে। 

মমতা যােগির রাজ্যকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বিজেপি’র বাবুরা সাবধান। সারাক্ষণ চালাবেন না স্টেইনগান। এমনকী গােটা দেশেই যে মানুষের গণতন্ত্র খর্ব করা হচ্ছে তাও উল্লেখ করেন মমতা। 

উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে তৃণমূল কংগ্রেসের ৪ জনের একটি প্রতিনিধিদলকে সেখানে পাঠানাে হয়। সেখানে ছিলেন দীনেশ ত্রিবেদি, নাদিম, আবির, প্রমিতা বিশ্বাসরা। তাদের মধ্যে সাংসদ, কেউ আবার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। সেই প্রতিনিধিদের বিমানবন্দরের বাইরেই পা রাখতে দেওয়া হয়নি বলে সরব হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। 

এদিকে সােমবার বিজেপির মিছিল আয়ােজিত হয় খাস কলকাতা শহরে। সেই কথা তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, চাইলে এক সেকেন্ডে তা বন্ধ করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। গাড়ি করে এসে এখানে মিছিল করতে পারে বিজেপির নেতা নেত্রীরা। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যে ঢুকতে পারেনি তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। গণতন্ত্র কাকে বলে দেখে নিক। আর এর মধ্যে দিয়েই মােদির রাজ্য বনাম দিদির রাজ্যের গণতন্ত্রের বিস্তর পার্থক্য সামনে নিয়ে এলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

তিনি বলেন, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটকে আগুন জ্বলছে। অহংকার ও ঔদ্ধত্যের ফল বিজেপি হাতেনাতে পেয়েছে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বলেও জানিয়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমমা। বার বার বাংলায় ট্রেন বাস জ্বালানাে নিয়ে মমতাকে নিশানা করছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের আন্দোলনকে সামাল দিতে পারছে না যোগির সরকার। এদিকে বাংলায় নাকি আইনের শাসন নেই বলা হচ্ছে বলে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযােগ একবাক্যে নস্যাৎ করে দেন তৃণমূল নেত্রী। 

অন্যদিকে এদিন ফের নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় মুখর হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এনআরসি’র প্রতিবাদেও সুর চড়ালেন মমতা। এবং সেই সাথে মােদি-শাহকেও নিশানা করেন তিনি। মােদি ও অমিত শাহ’র কথা পরস্পরবিরােধী বলে মন্তব্য করেন। এনআরসি নিয়ে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন সারা দেশে তা কর্যকর করা হবে। তখন তা নিয়ে উল্টো সুর গাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। 

এছাড়া অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করার পর তা নিয়ে চরম অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিজেপি শাসিত সেই রাজ্যে। আতঙ্কে মৃত্যুর মিছিল দেখেছে মানুষ। এরপরেও কেন্দ্রের শাসকগােষ্ঠির তরফ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বলা হচ্ছে এমন কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু’জনেই মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন তাও উল্লেখ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। 

পাশাপাশি এদিন ফের মতুয়া সমাজ নিয়েও বিজেপিকে কটাক্ষ করেন মমতা। গত ৩০ বছরে বড়মা ও মতুয়া সমাজের পাশে কিভাবে থেকেছেন মমতা তা এদিন বেলেঘাটার সভা থেকে ফের একবার স্মরণ করান। বড়মার চিকিৎসার সমস্ত দায়ভার নিয়েছিল বর্তমান সরকার। এমনকী মতুয়াদের জন্য পৃথক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনও হয়েছে এই সরকারের আমলে। সেখানে ভােটের আগে মতুয়া মন জয়ের অপচেষ্টা করছে বিজেপি বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়া হােক বা আদিবাসী জনজাতি নাগরিকত্বের জন্য কেন ফের লাইনে দাঁড়াতে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তােলেন তৃণমূল নেত্রী। যে ভােটার কার্ডের জোরে এতদিন একের পর এক সরকার তৈরি করেছে মানুষ, সেখানে ফের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে কেন বলে সওয়াল করেন। ওরা হিন্দু মুসলিম করতে চায় আর আমরা হিন্দুস্তানের আন্দোলন করতে চাই, বলেন বাংলার মমতা।