• facebook
  • twitter
Wednesday, 17 December, 2025

ছক কষেই অশান্তি, মুর্শিদাবাদে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী

সুতির মোড়ে বিএসএফ গুলি না চালালে পরের দিন সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের হিংসার ঘটনা এড়ানো যেত বলেই দাবি করেছেন তিনি।

ফাইল চিত্র

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে অশান্তির ঘটনার জন্য ফের বিএসএফকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতির মোড়ে বিএসএফ গুলি না চালালে পরের দিন সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের হিংসার ঘটনা এড়ানো যেত বলেই দাবি করেছেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, চক্রান্ত করে মুর্শিদাবাদে অশান্তি হয়েছে। এর পিছনে দুই–তিন জন মানুষ রয়েছেন। কিছু দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে আনা হবে। পাশাপাশি দাঙ্গাবাজদের ‘বাংলার শত্রু’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। পাশাপাশি অশান্তির ঘটনা নিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

দুই দিনের মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে তাঁর বিমান বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়্যার ময়দানে নামে। সেখান থেকে তিনি যান সার্কিট হাউসে। কিছুক্ষণ পরে বহরমপুরের প্রশাসনিক ভবনে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মুর্শিদাবাদ জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির কনফারেন্স হলে জেলার সাংসদ-বিধায়ক ও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তারপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একাধিক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বহরমপুর থেকে হিংসা উপদ্রুত এলাকা ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ ও সুতিতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।

Advertisement

এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় একযোগে বিএসএফ ও বিরোধীদের তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজদের ‘ক্রিমিনাল’ ও ‘বাংলার শত্রু’ বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তিনি কোনও সম্প্রদায়কে দোষ দেবেন না। কয়েকজন বহিরাগত ধর্মের নামে বিধর্মী কথা বলে ধর্মীয় নেতা সাজছেন। দুই তিনজন এই গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। কারা, কীভাবে এই অশান্তির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা। মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। সম্পূর্ণ তথ্য হাতে পেলে তা দ্রুত প্রকাশ করার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আমি নিজে হিন্দু। আমি কেন হিন্দু-মুসলিম বা অন্য ধর্মের মধ্যে বিভেদ করব? চক্রান্ত করে কিছু লোক এ সব করছে। আমি কারও বিরুদ্ধে নই। আমি চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।’ মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজনীতি করলে বা চেয়ারে থাকলে তাঁর কাছে সব ধর্মই সমান। সব ধর্মের মানুষই সমান। তিনি চান না রাজ্যে কোনও ধর্মের মানুষ আক্রান্ত হোক।

Advertisement

উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনায় নিহত বাবা–ছেলে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের পরিবারকে নিয়ে রবিবার থেকে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ঘটনার পরেই রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তা নিতে অস্বীকার করেন হরগোবিন্দের পরিবারের সদস্যরা। মুখ্যমন্ত্রীর মুর্শিদাবাদ সফরের সময় হরগোবিন্দের পরিবারের সদস্যরা মুর্শিদাবাদে উপস্থিত নেই। তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলে কলকাতায় এসেছেন। তাঁদের অপহরণ করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে রবিবার সল্টলেকের সেফ হোমে অভিযান চালায় পুলিশ। যদিও অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে বহরমপুর থেকে মমতা জানান, মুর্শিদাবাদ থেকে লুকিয়ে হরগোবিন্দর পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অশান্তি অন্য কেউ করলে গালাগালি কেন তাঁকে শুনতে হবে এই প্রশ্ন করেছেন মমতা। অশান্তির ঘটনার পরের দিনই কীভাবে মানবাধিকার কমিশন রাজ্যে চলে এল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতে বলতে গিয়ে মমতার অভিযোগ, পরিকল্পনা করে অশান্তি পাকানো হয়েছে। উস্কানি দেওয়া হয়েছে।

মুর্শিদাবাদে গিয়ে নিহতদের পরিবারের হাতে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দিতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু নিহত বাবা–ছেলের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে মুর্শিদাবাদে না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে মমতা জানিয়েছেন, যারা মুর্শিদাবাদে রয়েছেন তাঁদের সঙ্গেই কথা বলবেন তিনি। কেউ আর্থিক সাহায্য না নিতে চাইলে কিছু করার নেই।

অশান্তির ঘটনায় নাম না করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সন্ন্যাসীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই সংগঠনকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। তবে মুর্শিদাবাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদ। মমতার অভিযোগ, এক সংগঠনের নেতা উস্কানি দিয়েছেন। অশান্তির সময় ৪৮ ঘণ্টা আলো নিভিয়ে রেখেছিলেন। এটা করা যায় না। তিনি কী লুকোতে চাইছিলেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক অশান্তি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে বিরোধীদের তোপ দেগেছেন মমতা। এই নিয়ে রাজনীতি না করে দেশের নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়ার জন্য বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি। আরও দায়িত্বশীল হতে বলেছেন। তাঁর আর্জি, সাম্প্রদায়িক অশান্তি নিয়ে রাজনীতি না করে সীমান্তের দিকে নজর দিক কেন্দ্র। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন সেই পরিবারগুলিকে বিচার দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

Advertisement