অমিত শাহ’কে জবাব দিলেন মমতা

এদিন বিধানসভায় উপস্থিত বিজেপি বিধায়ক মনােজ টিগগার মাধ্যমে বিজেপি’কে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলা উত্তরপ্রদেশ নয়। এখানে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর করতে দেব না।

Written by SNS Kolkata | February 15, 2020 2:24 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (File Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

দিল্লিতে নির্বাচনী জনসভায় অনুরাগ ঠাকুরের ‘গোলি মারাে’ হুমকির পরে নিশ্চুপই ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নির্বাচনী ফলাফলের পর অবশ্য আক্ষেপ করে বলেছে, এই মন্তব্যের ফল ভালাে হয়নি। শুক্রবার বিধানসভায় অমিত শাহর এই দ্বিচারী ভূমিকা নিয়ে তােপ দাগেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, প্রথমে ক্ষেপিয়ে দিয়ে পরে আক্ষেপ করে কোনও লাভ হয় না। এটা ঠিক রােগি মারা যাওয়ার পর ডাক্তার ডেকে আনার মতােই ব্যাপার।

মমতা এদিন বিধানসভায় উপস্থিত বিজেপি বিধায়ক মনােজ টিগগাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নিজেদেরকে শােধরান। এখন নিজেদের না সামলালে পরে আর সামাল দিতে পারবেন না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। সেই সঙ্গে এই গুলি বন্দুকের রাজনীতি যে বাংলায় চলবে না, সেই হুঁশিয়ারিও দিলেন মমতা।

শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্যপালের জবাবী ভাষণে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার সমালােচনা, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ, বন্ধ চা বাগান না খােলা, জোর করে ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা। সেই সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের উদ্বোধনে তাঁকে ব্রাত্য করে রাখার জন্য ক্ষোভও উগরে দেন বিজেপি’র ওপর।

প্রসঙ্গত দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব আইন বিরােধী প্রতিবাদী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে অনুরাগ ঠাকুর নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, দেশ কি গদ্দারো’কো। উত্তরে জনতা গলা মিলিয়ে বলেছে গােলি মারো সালো কো। এই বক্তব্যের পরে দিল্লিতে আপ ঝড়ে বিজেপি’র সাফ হয়ে যাওয়ার পর সম্বিৎ ফিরেছে অমিত শাহর। শুক্রবার বিধানসভায় রাজ্যপালের জবাবী ভাষণের আলােচনায় অমিতের এই বিলম্বিত বােধােদয়ের সমালােচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন বিধানসভায় উপস্থিত বিজেপি বিধায়ক মনােজ টিগগার মাধ্যমে বিজেপি’কে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলা উত্তরপ্রদেশ নয়। এখানে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর করতে দেব না। এনপিআর যাতে না হয়, সেজন্য অন্য রাজ্যকে চিঠি দেব। অন্য রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেব। তিনি মনােজ টিগগার কাছে সরাসরি প্রশ্ন করেন, আপনাদের দলের লােক কেন জায়গায় জায়গায় লােক পাঠাচ্ছে ডেটা সংগ্রহ করতে? কে এসব করতে বলেছে? জানবেন, মাথায় ফেট্টি বেঁধে রাজনীতি এই বাংলায় করতে দেওয়া হবে না। সরকারি ওয়েবসাইট থেকে অসমের এনআরসি তথ্য উধাও হয়ে যাওয়াকে কটাক্ষ করে মমতা বিধানসভায় বলেন, এটা কালিদাসের ডাল কাটার মতাে হয়ে যাচ্ছে।

এই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে বিরােধীদের আক্রমণের উত্তরে মমতা বলেন, এখানে এখনও উত্তরপ্রদেশের মতাে কোনও ঘটনা ঘটেনি। গণবিবাহের নাম করে ধর্মান্তরকরণ নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেন মমতা। মমতার হুঁশিয়ারি আদিবাসীদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করবেন না। আমরা সব খোঁজখবর রাখছি। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে প্রায়ই শাসক সরকারকে আক্রমণ করে বিরােধীরা। এই অভিযােগ খণ্ডন করে মমতা বলে, এই রাজ্যে কোনও অভিযােগ নিয়ে গেলে পুলিশ তৎক্ষণাৎ এফআইআর নেয়। তিনদিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়। পুলিশ জেলা, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করে অপরাধের বিচার করা হয়। রাজনৈতিক হত্যার ঘটনা বাম আমলের তুলনায় এখন অনেক কম হচ্ছে এই রাজ্যে।

এদিন মমতা এয়ার ইন্ডিয়া, বিএসএনএল, রেল, সেইল, এলআইসি ইত্যাদি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার বিলগ্নিকরণ নিয়ে বিজেপি’কে আক্রমন করেন। এর ফলে বেকারত্ব আরও বাড়বে। মমতা বলেন, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ব বিমা সংস্থা এলআইসি। তারও অংশীদারিত্ব বেচে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের চিন্তা বাড়ছে, কর্মীদের মাথায় হাত। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কও সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে চাকরি সুযােগ কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের হেড কোয়ার্টার কলকাতা থেকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।

এদিন বন্ধ চা বাগান নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলােধনা করেন মমতা। নির্মলা সীতারামণ শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গে পাঁচটি চা বাগান খােলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার কোনও চা বাগান অধিগ্রহণ করেনি। বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের দু’টাকা কেজি দরে চাল এবং বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। চা সুন্দরী প্রকল্পে তাদের জন্য আবাসের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।

রাজ্যপালের জবাবী ভাষণে এদিন সিংহভাগ জুড়ে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ। এদিন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় খেতমজদুরদের নিয়ে আসা।