• facebook
  • twitter
Saturday, 14 June, 2025

শুরু হল মাধ্যমিক পরীক্ষা, চালু কন্ট্রোল রুম ও হেল্পলাইন নম্বর

টোকাটুকি রুখতে কঠোর ব্যবস্থা

ছবি: বিশ্বজিৎ ঘোষাল

নির্ধারিত ১০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সকাল ১০টা থেকে রাজ্যে শুরু হল মাধ্যমিক পরীক্ষা। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই পরীক্ষা চলবে। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে প্রথম দিনে বাংলা পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এবারের মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫৩ জন। যার মধ্যে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৮০৩ জন ছাত্র ও ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৫০ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছেন। মোট ২ হাজার ৬৮৩টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে।

পরীক্ষার প্রথম দিন সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে হলে প্রবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে সকাল ১০টাতেও পরীক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করতে পারবেন।

পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে বিশেষ বাস পরিষেবারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ১০, ১১, ১৫, ১৭, ১৮, ১৯, ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি এই স্পেশাল বাস পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার শুরুর আগে এবং পরীক্ষা শেষের পর এই বাস পরিষেবা পাওয়া যাবে। পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে এই স্পেশাল বাস পরিষেবা চালু হবে এবং পরীক্ষার পর ২টো ১৫ মিনিট থেকে স্পেশাল বাস ছাড়া হবে। এই বিশেষ বাসগুলির প্রত্যেকটিতে একটি বিশেষ বোর্ড লাগানো থাকবে। তবে সেই বাসে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীরাও যাতায়াত করতে পারবেন।

এদিকে পরীক্ষা চলাকালীন কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করলে তাঁর পরীক্ষা বাতিল করা হবে। শুধু মোবাইল নয়, কোনও স্মার্ট গ্যাজেট নিয়ে প্রবেশ করলেও সেই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হবে। টোকাটুকি রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি পরীক্ষা কেন্দ্রের টয়লেটগুলিতেও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হবে, সেখানে কোনও স্মার্ট গ্যাজেট লুকিয়ে রাখা আছে কিনা।

পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হলে যাতে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসন সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে, সেজন্য ২৪ ঘন্টার জন্য একাধিক হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। যে কোনও সমস্যায় পড়লে সেই নম্বরে ফোন করা যাবে। বিশেষ এই হেল্পলাইন নম্বরগুলি হল- ০৩৩-২৩২১৩৮১৩, ০৩৩-২৫৩৯২২৭৭। কলকাতা পুলিশও একটি বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। শহরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য সেই জরুরি নম্বরটি হল ৯৪৩২৬১০০৩৯। এছাড়া, জেলা বা আঞ্চলিক স্তরেও চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। যেমন– বর্ধমানের আঞ্চলিক অফিসের নম্বর ০৩৪-২২৬৬২৩৭৭, মেদিনীপুরের আঞ্চলিক অফিসের নম্বর ০৩২-২২২৭৫৫২৪ এবং উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অফিসের নম্বর ০৩৫-৩২৯৯৯৬৭৭ বা ৮২৪০৭৫৬৩৭১।

এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সমাপ্ত হলেও কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। এক অন্তঃসত্বা মহিলা পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষা হলেই প্রসব যন্ত্রনা অনুভব করেন। যার ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় ওই পরীক্ষার্থীকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের বেডে বসেই তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, ওই পরীক্ষার্থী কান্দির বাঘডাঙা রামেন্দ্র সুন্দর বিদ্যাপীঠের ছাত্রী। তিনি মুর্শিদাবাদের কান্দির রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। ওই পরীক্ষার্থী যখন পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন, তখন তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না। কিন্তু যখনই পরীক্ষা শুরু হবে, সেই সময় তিনি প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন কান্দি থানার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।

এদিকে এই প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে নাবালিকা ওই ছাত্রীর বিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তাঁর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। এবিষয়ে ওই ছাত্রীর মা জানিয়েছেন, ‘বাড়িতে দেখাশোনার কেউ নেই। অর্থের অভাব। তাই বিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। পরীক্ষা দিতে গিয়ে এবার প্রসব যন্ত্রণা হল। স্কুলকে সবকিছু বলা হয়েছিল। পুলিশ এসে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দিয়েছে মেয়ে। এখন সুস্থ আছে। আমি মেয়ের সঙ্গে রয়েছি।’

আরও একটি ঘটনা ঘটেছে হুগলিতে। এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর হয়ে পরীক্ষা দিতে হাজির হন অন্য এক তরুণী। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই তাঁকে ধরে ফেলেন পরীক্ষকেরা। অভিযুক্তকে হুগলির চণ্ডীতলা থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। কোন পরীক্ষার্থীর হয়ে তিনি পরীক্ষা দিতে হাজির হয়েছিলেন, তাঁর পরিচয় কী, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের কেবলপাড়া হাইস্কুলে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে টুকলি সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে।

হুগলিতে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে হুগলিতে। এখানকার চাকুন্দি হাই স্কুলের এক পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্র গুলিয়ে ফেলে। ওই পরীক্ষার্থীর নাম সুখিয়া খাতুন। তার পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে কানাইপুর হাই স্কুলে। কিন্তু পরীক্ষাকেন্দ্র কোথায় বুঝতে না পেরে সে চাকুন্দি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ডানকুনি পুরসভার পুরপ্রধান হাসিনা শবনমের নজরে আসে বিষয়টি। তিনি সেখানে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টরকে বিষয়টি জানান। ছাত্রীর অ্যাডমিট কার্ড দেখেন সৌরভ ব্রহ্মচারী নামে ট্র্যাফিক অফিসার। এরপর ওই ছাত্রীকে বাইকে বসিয়ে চাকুন্দি থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে কানাইপুর হাইস্কুলে পৌঁছে দেন।

অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়াতে ঘটেছে আরও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর জখম হল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এর জেরে পরীক্ষায় বসা হল না। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার সকালে ছাদে থাকা জামাকাপড় তুলতে গিয়ে পিছলে নীচে পড়ে যায় সে। হাবড়ার রাউতাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই পরীক্ষার্থীর নাম শাবনুর বিশ্বাস।