মাত্র এক সপ্তাহেই দেশের মধ্যে সংক্রমণে প্রায় শীর্ষে কলকাতা

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে , ওই রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে।বাকি ৯০ শতাংশের আরটিপিসিআর পরীক্ষা হয়েছে।

Written by SNS Kolkata | January 2, 2022 7:31 pm

মাত্র সাত দিনে কলকাতা শহরে কোভিড সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে , ওই রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হয়েছে।

কলকাতার লাগোয়া হাওড়া শহরে সংক্রমণের হার প্রায় ১১ শতাংশ এর মধ্যে ৩৮ শতাংশের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। বাকি ৬২ শতাংশের কোভিড ধরা পড়েছে আরটিপিসিআর পরীক্ষায়।

কলকাতা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। হিমাচল প্রদেশের লাল স্পিতি সংক্রমণের হারের নিরিখে কলকাতা থেকে ১ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে। উত্তরের ওই শহরে সংক্রমণের হার আপাতত ২৫ শতাংশ।

তবে চিকিৎসকদের অনেকে মনে করছেন, কলকাতায় আরও বেশি পরীক্ষা করালে সংক্রমণের হারে লাহুল-স্পিতিকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

রাজ্য সরকারের কোভিড মোকাবিলা কমিটির সদস্য তথা চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষের কথায় “ফ্রান্সে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষে পৌঁছেছে।

আমাদের যা জনসংখ্যা, তাতে সাবধান না হলে পরিস্থিতি কোথায় যাবে, সেটা এখনও কল্পনাও করতে পারছি না! প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে!”

সৌমিত্র আরও জানাচ্ছেন ডেল্টার ‘আর ভ্যালু’ (রিপ্রোডাক্টিভ রেট)। অর্থাৎ, একজনের থেকে ভাইরাস কতজনের দেহে ছড়াতে পারে, তা পরিমাণ ছিল ১.৩ সেখানে ওমিক্রনের ‘আর ভ্যালু’ ২.৮ থেকে ৩ পর্যন্ত হতে পারে। ফলে ওমিক্রন যে ডেল্টার তুলনায় কতটা ছোঁয়াচে, তা এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট।

সৌমিত্র বলেন , “ মানুষকে সচেতন হতে হবে। মানুষ সচেতন না হলে প্রশান এটা ঠেকাতে পারবে না শহরাঞ্চলে বা যেখানে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, সেখানে মানুষকেই সবচেয়ে আগে সচেতন হতে হবে”।

সৌমিত্রের আরও বক্তব্য, “প্রশাসনের তরফে এবং চিকিৎসকদের তরফে মানুষকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ মানতে চাইছে না। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে!

সপ্তাহেই দেশের মধ্যে শীর্ষে কলকাতা মনে রাখতে হবে , বছরের প্রথম কিছুদিন আমরা সচেতন থাকলে বছরের বাকি দিনগুলো ভাল থাকতে পারব।”

গত বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কলকাতার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। বলা হয়েছিল, কলকাতার সংক্রমণের হার ১২.৫ শতাংশ। শনিবার তা পৌঁছে গিয়েছে ২০ শতাংশে।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীও বলেছিলেন, “দ্রুতগতিতে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। তাই আমাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি কোভিড বিধিও মানতে হবে। ”

শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রেও সেই ইঙ্গিত মিলছিল।জানা যাচ্ছিল, বেসরকারি হাসপাতালে গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে অনেক বেশি মানুষ কোভিড উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন।

পিয়ারলেস হাসপাতালের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত মৈত্রের কথায়, “যে ভাবে এই সপ্তাহে পজিটিভিটি রেট বাড়ছে, তাতে কোথায় গিয়ে থামবে জানি না! যাঁরা আক্রান্ত, তাঁরা ডেল্টায় আক্রান্ত না ওমিক্রনে, তাও এখনও জানা যায়নি।

তবে করোনা তো করোনাই। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনও বলতে পারছি না। তাই শুধু সর্দি-কাশি ভেবে ওমিক্রনকে হেলাফেলা করা উচিত নয়।”

আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের গত সপ্তাহের প্রথম দিকে সংক্রমণের হার ছিল ৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সেখানে সেই হার ছিল ৪৬ শতাংশেরও বেশি।

বৃহস্পতিবার ৫৬ টি নমুনার মধ্যে ২৬টি নমুনায় কোভিড মিলেছিল। বুধবার সেখানে সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। ওই দিন ৫৯ টির মধ্যে ২৫ টি নমুনায় কোভিড মিলেছিল।

তবে চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা হওয়া নমুনা থেকে প্রাপ্ত সংক্রমণের হারকে কলকাতার সার্বিক চিত্র হিসাবে ধরা অনুচিত।

কারণ, সরকারি হোক বা বেসরকারি তেমন অসুস্থ হলে বা কোভিড উপসর্গ থাকলে মানুষ হাসপাতালে আসেন। তাই সেখানে পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।