জঙ্গলমহলের মন জয়ের চেষ্টায় আদিবাসী আবেগ উসকে দিলেন মমতা

বিজেপির কৌশলকে কাউন্টার করতে সােমবার জেলার সেই জঙ্গলমহলকেই বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Bankura | November 24, 2020 5:17 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (Photo: Statesman News Service)

গত লােকসভায় জেলার দুটো আসনই দখল করেছিল বিজেপি। বিশেষ করে জেলার জঙ্গলমহলের ভােটাররা তাে দু’হাত তুলে ভােট দিয়েছিল বিজেপিকে। আদিবাসীদের সেই ভােটব্যাঙ্ক অটুট হাজির রাখতে বিজেপি যারপরনাই সচেষ্ট। চলতি মাসের ৫ তারিখে বাঁকুড়া সফরে এসে শহর সংলগ্ন আদিবাসী বাড়িতে গিয়ে মধ্যাহ্ন ভােজন সেরেছিলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। 

বিজেপির ওই কৌশলকে কাউন্টার করতে সােমবার জেলার সেই জঙ্গলমহলকেই বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন খাতড়ার সিধু কানু স্টেডিয়ামে আয়ােজিত সরকারি সভা থেকে একদিকে যেমন বিজেপি নেতা অমিত শাহকে একহাত নিলেন অন্যদিকে জেলার উপভােক্তাদের হাতে সরকারি পরিষেবাও তুলে দিলেন। তবে বীরসা মুন্ডার মূর্তিতে অমিত শাহের মাল্যদানকে ঘিরে সম্প্রতি যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাতে প্রয়ােজনীয় ঘি ঢেলে মমতা’র আদিবাসী মন জয় করার মরিয়া চেষ্টাও এদিন কারও নজর এড়ায়নি। 

রবিবার মুকুটমনিপুরে সেচ দফতরের বাংলােতে রাত কাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন দুপুরে খাতড়ার সিধু কানু স্টেডিয়ামে হাজির হন। সেই সরকারি সভা থেকে মমতা ৩৫৩ কোটি টাকা মূল্যের একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। মেজিয়া জল সরবরাহ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) পাঁচমুড়ায় ৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন খাতড়া ব্লকে বিদ্যুত দফতরের প্রশাসনিক ভবন নির্মান বাঁকুড়া শহরে প্রতিটি ঘরে অস্রুত প্রকল্পের আওতাধীন বিশুদ্ধ পানীয় জল সংযােগ পরিষেবা সহ এদিন মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

জিঘাটী ব্লকের দেউলিয়া মৌজায় শিল্প উদ্যান নির্মান ও রাঙামাটি মৌজায় বাউরি সমাজের জন্য কমিউনিটি হল নির্মান বাঁকুড়া পৌর এলাকায় জেলা উদ্যান ভবন নির্মানের মতাে এদিন একগুচ্ছ নয়া প্রকল্পের শিলান্যাশও করেন তিনি। সেইসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন উপভােক্তার হাতে কন্যাশ্রী শিক্ষাশ্রী ঐক্যশ্রী সবুজসাথীর মত বেশ কিছু সরকারি পরিষেবাও তুলে দেন তিনি। 

এদিন সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী একটি নয়া কর্মসূচী ঘােষনা করেন। ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ নামের ওই কর্মসূচী অনুযায়ী ব্লক ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা সাধারন মানুষের দুয়ারে পৌঁছে পরিষেবা তুলে দিয়ে আসবেন। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে গােটা রাজ্যের সবকটি ব্লকে শুরু হবে ওই কর্মসূচী। চলবে আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারী পর্যন্ত। 

শাসক দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া জঙ্গলমহল বাসীর মন জয় করতে এটি মমতার মাস্টারস্ট্রোক বলেই রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের দাবি। 

গত ৫ নভেম্বর বাঁকুড়া পুরুলিয়া জাতীয় সড়কের উপর পুয়াবাগান মােড়ে বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে অর্মিত শাহের মাল্যদান বিতর্ক নিয়েও এদিন তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা। সেইসঙ্গে উসকে দেন আদিবাসী আবেগকেও। তিনি সাফ জানান, ‘যে মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়েছিল তা তাে বিরসা মুন্ডারই নয়। একটা আদিবাসী শিকারির। আমি শিকারি বলে তাকে ছােট করছি না। সেও আমার ভাই। কিন্তু এই মিথ্যাচারটা হল কেন?’ 

বাঁকুড়া সফরে এসে আদিবাসী বাড়িতে অমিত শাহের মধ্যাহ্ন ভােজনের প্রসঙ্গ টেনেও এদিন অমিতকে একহাত নেন মমতা। তিনি জানান স্টার হােটেল থেকে খাবার এনে আদিবাসীদের বাড়িতে খেয়েছেন ওই বিজেপি নেতা। বিজেপির ওই দ্বিচারিতা রাজ্যের মানুষ ধরে ফেলেছেন বলে মমতার দাবি। 

খাতড়ার বেঁকিয়ে গ্রামের সর্দার পাড়ায় আচমকা হাজির হন মমতা। সেখানে খাটিয়ায় বসে সাধারণ মানুষজনের সমস্যার কথাও শােনেন। মঙ্গলবার বাঁকুড়া রবীন্দ্রভবনে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করেনা ভ্যাকসিন সম্পর্কিত ভার্চুয়াল মিটিংয়েও অংশ নেবেন।