৩৫৬ জারি হলে ২৫০ আসনে জিতব: অভিষেক

সকলেরই নজর ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি বলেন, তা জানার। মল্লিকবাজারে যখন তাদের গাড়ি এসে পৌঁছায়, মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে।

Written by পিয়ালি আচার্য Kolkata | April 8, 2022 5:14 pm

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয়র সমর্থনে রোড শো করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে মল্লিক বাজার নিউরো মোড় পর্যন্ত হয় এই রোড শো। বক্তব্য রাখেন মালা রায়, দেবাশিস কুমার, জাভেদ খান মণীশ গুপ্ত ছিলেন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ও।

কিন্তু সকলেরই নজর ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি বলেন, তা জানার। মল্লিকবাজারে যখন তাদের গাড়ি এসে পৌঁছায়, মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্যের শুরুতেই পবিত্র রমজান মাস ও চৈত্র নবরাত্রির শুভেচ্ছা জানান সকলকে।

তাঁর বক্তব্যে ঘুরে-ফিরে আসে বালিগঞ্জ বিধানসভায় প্রয়াত বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম। তিনি বলেন, আমরা চাইনি বালিগঞ্জে এইরকম উপনির্বাচন হোক। এই এলাকার যিনি বিধায়ক ছিলেন, সেই বর্ষীয়ান নেতা তিনি শুধু আমাদের সকলের নেতা তাই নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতি শুরু করেছেন।

তাঁর নাম এই এলাকায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের যে কটি অসম্পূর্ণ কাজ আছে এলাকায়, আমরা তা সম্পূর্ণ করব কথা দিচ্ছি। বাবুল সুপ্রিয় যেহেতু কিছুদিন বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন, তাই তাঁর প্রতি মানুষের দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব থাকতে পারে।

এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল অভিষেক বলেন, আপনারা বাবুল সুপ্রিয়কে ভোট দেওয়া মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দেওয়া। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতীককে ভোট দেওয়া। বাবুল সুপ্রিয় জয় শ্রী রাম স্লোগান ছেড়ে জয় বাংলা, জয় হিন্দু স্লোগান বলেছেন, তাই তাঁকে নেওয়া হয়েছে।

মনে রাখবেন, বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোড়া ফুলে এক নম্বর বোতাম টিপে ভোট দিন এবং বাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত করে দিন অভিষেক তাঁর বক্তব্যে বিজেপির প্রতি তীব্র আক্রমণ শানান।

আর কি বা ২০০ পার, বলেছিলেন তো অনেক কিছু। কিন্তু দেখা গেল ৭০। সবে তো শুরু আমরা দরজা খুললে ওই দলটা উঠে যাবে বিধানসভায় গোহারান হারার পর সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। কেন তাঁর দোষ কি?

তিনি ৭৩ হাজার ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন। অভিষেকের ভাষণে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াও দেখা যায়। বলেন কংগ্রেস-সিপিএম জগাই-মাধাই আর বিজেপি বিদাই। নিজের ভঙ্গিমাই বলেন জগাই-মাধাই ইডি-সিবিআই।

রাজ্যে ৩৫৬ জারি হলে আমরা ২৫০ আসনে জিতব। বালিগঞ্জের মানুষকে এসব লোকেদের গালে গণতান্ত্রিকভাবে থাপ্পড় মেরে জবাব দিতে হবে। সুব্রত মুখোপাধ্যায় নারদা কেসে জেলে যেতে পারেন, আর চাদর মোড়া দিয়ে টাকা নিতে দেখা গেল তিনি কি ধোয়া তুলসি পাতা? স্পষ্ট ইঙ্গিত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে।

বাবুলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বাবুল নিজে সাংসদ হিসেবে পদত্যাগ করে তবে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। আর আপনার পরিবারের লোকেরা এখনও রিজাইন করেনি। বলুন তাদের রিজাইন করতে, যদি সৎ সাহস থাকে আবার বলে কিনা প্রেসিডেন্ট রুল। ২১৩ টা জিতেছি ২৫০ আসনে জিতব।

আমরা বসন্তের কোকিল নই যে ভোটের সময় আসি। এনআরসি-র সময় সিপিএম কোথায় গিয়েছিল? আমরা এনআরসি-র বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে ক্যাম্পেন্ন করেছি। কোভিডের সময় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা জীবন বিপন্ন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

আর এরা দেশটার কি পরিস্থতি করেছে? মূল্যবৃদ্ধি, নারী নির্যাতন, সব ক্ষেত্রেই মানুষ চরম দুর্দশার শিকার। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, জীবনদায়ী ওষুধ একের পর এক তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কি ভাবে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।

এদিকে সিনেমাকে করমুক্ত করা হচ্ছে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হু হু করে বাড়ছে। এ জিনিস আমরা হতে দেব না। আমরা বিজেপিকে একফোঁটা জমি ছাড়ব না।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি বলি, প্রতি রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস যাবে এবং লড়বে। গোয়ায় আমরা ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছি ২৬টি আসনে লড়াই করেছি। সেখানে ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছি। বিজেপির কতদিন লেগেছে শতাংশ ভোট পেতে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের আরও ভয়ংকর।

অর্থাৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত যে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে তুলে ধরেন। বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, সামনাসামনি বসুন। ৭ বছরে কি করেছেন, আর ১০ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কি করেছে? কথা দিচ্ছি ১০-০ গোলে হারাবো।

সিপিএমও বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, অধীর চৌধুরী বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, বিজেপি বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আসলে এই দলগুলো বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা লড়াই করেছি। সিবিআই ইডি লাগাচ্ছে।

আমি ৯ ঘণ্টারও বেশি প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু আমার মাথা কেউ নত করতে পারেনি। আমার গলা কেটে দিলেও একটাই কথা বেরোবে ‘টিএমসি জিন্দাবাদ’, আমার হাত কেটে দিলেও বেরোবে ‘জয় বাংলা’।

আমাকে দমানো এত সহজ নয়। আমাদের দল হল ঘাস ফুল। যত কাটবে, তত বাড়বে। লিখে রাখুন, আপনাদের ভালোবাসা, দোয়া, আশীর্বাদ পেলে এখানে বাবুল সুপ্রিয় ৭০ হাজারের বেশি ভোটে জিতবে। আর আসানসোলে আমাদের প্রার্থী ২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতবে।

বিজেপির আচ্ছে দিনকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, আচ্ছে দিনের নামে কি অবস্থা করেছে দেশের। একনায়কতন্ত্র, একাধিপত্য যারা দেখাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে একটা ভোট মানে রাজনৈতিক ভাবে সপাটে চড়।

ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, করজোরে, নতমস্তকে অনুরোধ করছি, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে ১ নম্বর বোতাম টিপে ভোট দিন। উনি আপনাদের এলাকার উন্নয়ন করবেন। যদি এক্ষেত্রে কোন কিন্তু থাকে, তাহলে বলি তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিন।

আমি কথা দিচ্ছি, আগামী ৫ বছরে উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত মাথা নিচু আমি করব না। ২০২১ দেখিয়ে দিয়েছে, বহিরাগত আসে, বহিরাগত যায়, বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।

আমি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলছি, বুক চিতিয়ে, মাথা উঁচু করে রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীদের উৎখাত করব। এখানে ভোটে জেতা মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানো, সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জেতানো।