বাংলায় এনআরসি হতে দেব না, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এনআরসি নিয়ে এদিন ফের আরও একবার এমএমআই প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Berhampore | November 21, 2019 12:52 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

বুধবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একদিকে যখন বলছেন, সারা দেশে এনআরসি হবে, ঠিক অন্যদিকে তখন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির প্রশাসনিক সভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় আরও একবার ঘােষণা করে বলেন, ‘আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। একথা মাথায় রাখবেন’।

এনআরসিকে তিনি এদিন খুঁড়োর কল বলেও কটাক্ষ করেন। একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করতে এবং বহু প্রকল্পের পরিষেবা দিতে এদিন সাগরদিঘির ধুমারপাহাড় গ্রামে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সভাতেই তিনি এনআরসি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নাম না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং এমএমআই প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসিকে নিশানা করেন।

মমতা এদিন সাগরদিঘিতে প্রায় ত্রিশ মিনিট বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের বেশ কিছু অংশ জুড়েই ছিল এনআরসি’র প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম উল্লেখ না করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘আপনারা জানেন, কিছু কিছু লােক বদমায়েসী করে এনআরসি’র নাম করে নানাভাবে আপনদের উত্যক্ত করছে। একটা কথা বিশ্বাস রাখবেন, বাইরের আমদানি করা কোন নেতার কথা বিশ্বাস করবেন না। সে হিন্দুই হােক আর মুসলমানই হােক। বিশ্বাস করবেন আমরা যারা এই মাটিতে থেকে লড়াই করি, আর আপনাদের পাশে আছি। এনআরসি এ রাজ্যে হবেনা। এটা মাথায় রাখুন। চিন্তা করার কোন কারণ নেই প্রত্যেকেই আপারা এ দেশের নাগরিক। একটা লােককেও আমরা এখন থেকে বিতাড়িত করতে দেব না। এটা মাথায় রাখছেন’।

তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন আগুন যখন লাগে, হিন্দু-মুসলমান, শিখ-খ্রিস্টান, তপশিলি-আদিবাসী কেউই রেহাই পায় না। দাঙ্গা যখন লাগে, সবার ঘরেই আগুন জ্বলে। ওরা বলেছিল, অসমের এনআরসি তালিকা থেকে একজন হিন্দুর নামও বাদ যাবে না। কিন্তু দেখুন, সেখানে যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪ লক্ষ হিন্দু বাঙালির নাম বাদ হয়েছে। এছাড়াও মুসলামন, পাহাড়ি, রাজবংশী, বিহারী এদের নামও বাদ হয়েছে। এরা সব ডিটেনশন ক্যাম্পে আছে। অস্থায়ী জেল। বাংলায় এসব হয় না। বাংলায় এসব হবে না। বাংলা আপনাদের জায়গা। মা-মাটি-মানুষ, মা-আম্মার জায়গা, ভাই-বােন, রাখীবন্ধনের জায়গা। সভ্যতা-সংস্কৃতি-শিক্ষার জায়গা। ভয় পাবেন না’।

এনআরসি নিয়ে এদিন ফের আরও একবার এমএমআই প্রধান আসাউদ্দিন ওয়াইসিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে তাকে বিজেপি’র সবচেয়ে বড় দালাল বলেও এদিন কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোন অপপ্রচারে পা দেবেন না। কেউ কেউ বাইরে থেকে এসে মিটিং করে বলবে, তাদের জন্য আমরা লড়ব। আমরা কোন সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিই না। সে হিন্দু হােক আর মুসলমান হােক। কেউ কেউ হায়দ্রাবাদ থেকে টাকার থলি নিয়ে এসে মিটিং করে বলবে, তােদের জন্য আমরা লড়ব। কি করে লড়বে? তােমরা তাে বিজেপির সবচেয়ে বড় দালাল। তােমরা কোনদিনও লড়তে পারবে না। লড়লে আমরাই লড়ব। যারা লড়াই করছি। যারা লড়াইয়ের সাথে আছি। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী ঘােষণা করেন, আমরা বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। একথা মাথায় রাখবেন। ওই খুড়াের কল, উপরেই ঝুলবে। বাংলার মাটি থেকে একজনকেও তুলতে দেব না’।

এদিন সাগরদিঘি থেকে বেরিয়ে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বৈঠকেও তিনি পুলিশ আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, উভয় সম্প্রদায়েরই কেউ কেউ বাইরে থেকে এসে যেন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে উস্কানি দিয়ে চলে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখার। শুধু জেলা পুলিশ সুপার নন, এক্ষেত্রে বিভিন্ন থানার আইসি, ওসি’দেরও নজর রাখতে বলেন তিনি।