ভোটারদের বাড়ি বাড়ি এনুমারেশন ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের পর্ব শেষ হলেও পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর ঘিরে বিতর্ক যেন কিছুতেই থামছে না। গত কয়েক দিনে এই প্রক্রিয়া নিয়ে একের পর এক অভিযোগ সামনে এসেছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাল্টা বিজেপি কমিশনের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। এর মধ্যেই নতুন অভিযোগ তুলে কমিশনের কাছে চিঠি দিল প্রদেশ কংগ্রেস।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, একই পরিবারের ক্ষেত্রে এনুমারেশন ফর্ম পাওয়া ও না-পাওয়া নিয়ে গুরুতর গরমিল ধরা পড়েছে। তাঁর দাবি, শুকদেব রূপরায় নামে এক জীবিত ভোটারের বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছয়নি। অথচ কমিশনের নথিতে তাঁকে মৃত ভোটার হিসেবে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, শুকদেবের মা পঞ্চুবালা রূপরায় ইতিমধ্যেই প্রয়াত হলেও তাঁর নামেই বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ‘চরম অসতর্কতা’ বলে উল্লেখ করে কমিশনের কাছে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়েছে কংগ্রেস। আশুতোষের অভিযোগ, এই বিষয়ে কমিশনের তরফে শুকদেব বা তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গেই কোনও যোগাযোগ করা হয়নি।
Advertisement
এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই নির্বাচন কমিশনের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু শুকদেব রূপরায় নন, রাজ্যের এমন বহু ভোটার রয়েছেন, যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম পাননি। এর কারণ হিসেবে কমিশন জানিয়েছে, যাঁদের কাছে ভোটার পরিচয়পত্র রয়েছে, কিন্তু ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই, তাঁরা কেউই এনুমারেশন ফর্ম পাননি। কমিশনের বক্তব্য, এটি কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, বরং তালিকা সংশোধনের সময় এমন পরিস্থিতি আগেও দেখা গিয়েছে।
Advertisement
তবে এতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের নাম ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নেই, তাঁদের করণীয় কী? কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার এসআইআর-এর খসড়া তালিকা প্রকাশের পর ওই ভোটারদের নতুন করে নাম তুলতে হবে। ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ফর্ম ৬ পূরণ করে তাঁরা এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন।
এতেই শেষ নয়। অনেক ভোটারের মনেই প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ভোটার পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁদের নাম ২০২৫ সালের তালিকা থেকে বাদ গেল। এই প্রশ্নের উত্তরে কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা বাদ যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বুথ স্তরের আধিকারিকরা। নাম তোলা বা ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার প্রাথমিক দায়িত্ব তাঁদেরই। ফলে এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ হলেও ভোটার তালিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও প্রশ্ন যে এখনও পুরোপুরি কাটেনি, তা স্পষ্ট।
Advertisement



