অগ্নিগর্ভ এনআরএস

রােগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

Written by SNS Kolkata | June 12, 2019 10:34 am

এন আর এস চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী(Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

প্রাণদাতার প্রাণ সংকটে ! রােগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।সােমবার রাতে খণ্ড যুদ্ধ হয় রােগীর পরিবারের লােকজনের সঙ্গে জুনিয়ার ডাক্তারদের।রােগীর আত্মীয়দের প্রহারে গুরুতর অসুস্থ নিজ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এক জুনিয়র চিকিৎসককে।

বিষয়টি ঠিক কি ? সূত্রের খবর,রবিবার শ্বাসকষ্ট ও হৃদরােগের সমস্যা নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি হন ট্যাংরার বাসিন্দা মহম্মদ শাহিদ (৬৫)। প্রাথমিকভাবে ‘জেনারেল বেডেই’ রাখা হয়েছিল তাকে।পরে অবশ্য শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয় মহম্মদ শাহিদকে।সেখানেই সােমবার রাতে মৃত্য হয় তার।

রােগীর পরিবারের লােকজনের অভিযােগ,ঠিকমতাে চিকিৎসা না হওয়াতেই মৃত্যু হয়েছে এই ব্যক্তির।তাদের দাবি,রাতের বেলা একাধিকবার ডাকাডাকি সত্ত্বেও সময়মতাে ডাক্তার এসে পৌঁছায়নি।বিষয়টি নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার এবং রােগীর পরিবারের লােকজনের মধ্যে বচসা শুরু হয় এবং তা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছায়।

এদিকে রােগীর পরিবারের লােকজনের তরফে দাবি করা হয়েছে,মৃতদেহ বাইরে আনতে বাধা দেওয়া হয় তাদের।ওদিকে ডাক্তারদের অভিযােগ,রােগীর পরিবারের লােকজন হাত তােলে ডাক্তারদের ওপর।শুধু তাই নয়,ডাক্তারদের লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি ছোঁড়ারও অভিযােগ ওঠে।

সােমবার পুরাে ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় এনআরএস চত্বরে।শেষমেশ পুলিশি হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি।মৌলালির মােড়ে অনভিপ্রেত ঝামেলা এড়াতে মােতায়েন করা হয়েছে বিরাট পুলিশ বাহিনী।এই ডাক্তারদের গণ্ডগােলে আতঙ্ক ছড়ায় এনআর এস-এ ভর্তি থাকা অন্যান্য অসুস্থ রােগী ও তাদের পরিবারের মধ্যে।

জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ দেখানােয় চিকিৎসা পরিষেবা পেতেও বিপাকে পড়তে হয় অন্যান্য রােগীকে।যদিও অন্যান্য রােগীর চিকিৎসায় কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

এদিকে ঘটনার জেরে গুরতর আহত হন এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক পরিবহ মুখােপাধ্যায়।এছাড়াও চোট পান বেশ কিছুজন।পরিবহ মুখােপাধ্যায়কে ইন্সটিটিউট অফ নিউরােসায়েন্সে ভর্তি করা হয়।পাঁচ চিকিৎসকের একটি বিশেষজ্ঞদের দল তার চিকিৎসা করছেন বলেও জানা গেছে।মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে পরিবহের শারীরিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানিয়েছেন,আপাতত বিপন্মুক্ত এই ডাক্তার।তবে তাঁকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হ্যেছে।পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের করোটীর ডানদিকের হাড় ভেঙ্গেছে বলে জানা গেছে।

পুরাে ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে চিকিৎসক মহল।নিরাপত্তার দাবিতে এনআরএস হাসপাতালের দুটো দরজা বন্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন জুনিয়র ডাক্তার এবং ইন্টার্নরা।সােমবার সারারাত হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা জানা গেছে এমনটাই।

মঙ্গলবার সারাদিন উত্তপ্ত ছিল হাসপাতাল চত্বর।জুনিয়র ডাক্তারদের কথায়,কোনও রােগীকে বাঁচানাের বা সুস্থ করাটা শুধু চিকিৎসকদের কর্ম নয়,ধর্মও।কিন্তু বিভিন্ন সময় তাদের পেশাদারিত্বরও ওপর প্রশ্ন করে।শারীরিকভাবে প্ৰহৃত করা হয়েছে তাঁদের।নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা,দাবি জুনিয়ার চিকিৎসকদের একাংশের। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল এনআরএসে যায়।পরিস্থিতির সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য নেন তাঁরা।

এছাড়াও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এদিন  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও।এদিকে জুনিয়ার ডাক্তার প্রহৃত হওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণােদিত বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।তাঁর কথায়,তৃণমূলের প্ররােচনায় এই ঘটনা ঘটেছে।এই মন্তব্যের তীব্র বিরােধিতা করে এক তৃণমূল নেতার দাবি,সব বিষয়ে রাজনৈতিক রং মেশানাে বিজেপির চরিত্র।এই যুক্তি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তিনি।