করোনায় দূরত্ব আম্ফানে কাছাকাছি

মহামারীতে পোলিটিক্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় ছিল। কিন্তু মহাপ্রলয়ে ঘুঁচিয়ে দিল সেই দূরত্ব।

Written by SNS Kolkata | May 24, 2020 3:12 pm

আম্ফানে গাছ পড়ে ধ্বংস বাড়ি। (Photo by Dibyangshu SARKAR / AFP)

মহামারীতে পোলিটিক্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় ছিল। কিন্তু মহাপ্রলয়ে ঘুঁচিয়ে দিল সেই দূরত্ব। জাতীয় রাজনীতিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সম্পর্কের এই একশো আশি ডিগ্রি ঘূর্ণন এখন রীতিমতো চর্চার বিষয়।

করোনা পর্বের গোড়ার দিকে লকডাউন বজায় রাখার রাজ্যে আধা সেনা নামানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কেও একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, যাতে মুখ্যমন্ত্রী আধাসেনা মোতায়েন করেন রাজ্যে। কিন্তু তাতে সায় দেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তখন থেকে রাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে দিয়েই লকডাউন কার্যকর করে চলেছে রাজ্য সরকার।

কিন্তু আম্ফান বিপর্যস্ত রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাকি করতে সেনাবাহিনীরই সাহায্য চাইল মমতা সরকার। তবে রাজ্য সরকারের এই মনোভাব পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যে আগমন। আম্ফান বিধ্বস্ত বাংলার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ট্যুইট করতে ২৩ ঘন্টা লাগলেও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে এই রাজ্য পরিদর্শনে আসার সিদ্ধান্ত নিতে ২৪ ঘন্টাও লাগেনি প্রধানমন্ত্রীর।

করোনার সময় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত হতেও দ্বিধা থাকত, আম্ফান বিধ্বস্ত রাজ্য পরিদর্শনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই বায়ুযানে সামিল হলেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো থেকে কোন কোন বিপর্যস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন তার একটা ম্যাপও তিনি সঙ্গে নিয়ে এলেন।

প্রায় এক ঘন্টা আকাশপথে একই চপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয় শহর কলকাতার বিপর্যস্ত ছবিও প্রধানমন্ত্রীকে দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের সঙ্গে একই কপ্টারে ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও।

আম্ফান পরবর্তী অবস্থা মোকাবিলায় সেনা কর্তৃপক্ষ রাজ্যে পাঁচ কোম্পানি সেনা পাঠিয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্মীরা কলকাতা শহর সহ রাজ্যের অন্যান্য অংশে ভেঙে পড়া অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করছে। পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় আম্ফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়া গা, বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কাজে সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে রাজ্য সরকার।

সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানীয় জল, শৌচালয় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা অবিলম্বে চালু করার জন্য সংবদ্ধ সর্বোচ্চ সংখ্যক কমান্ড ভিত্তিক চব্বিশ ঘন্টা কাজের উপযোগী ব্যবস্থার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। আম্ফানের তাণ্ডব শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও রাজ্য বিজেপি প্রধান দিলীপ ঘোষ।

প্রধানমন্ত্রী সরেজমিন পর্যবেক্ষণের পর ১০০০ কোটি টাকার ত্রাণের আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্যের রাজধানী কলকাতাতেও পাঁচ হাজারের বেশি গাছ পড়ে শহরের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আম্ফানে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে আশি জনের।

দেখা যায়, শনিবার দুর্যোগ কেটে যাওয়ার ৭২ ঘন্টা পরেও ধ্বংসের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই বহু জায়গায়। শহরের বহু জায়গায় বাড়ছে বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মরীয়া রাজ্য সরকার। তাই রাজনীতি দূরে সরিয়ে রেখে বিধ্বস্ত বাংলাকে ছন্দে ফেরাতে এবার সেনার সাহায্য চাইল মমতা সরকার।

লকডাউনের মধ্যে দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিতে রেল, বন্দর এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও লোনের জন্য আর্জি জানাল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর।

করোনার সময়ে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে যে সংঘাতের আবহ ছিল আম্ফানের আগমনে তা পুরোপুরি উধাও। শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত বাংলা পরিদর্শনে এসে রাজ্যকে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অগ্রিম হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও ঘোষণা করেছেন।

কিন্তু বিধ্বস্ত বাংলার পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন লোকবলের। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এখনও জলমগ্ন। সেখানে আটকে রয়েছে বহু মানুষ। শহর কলকাতায় বহু গাছ কাটা হলেও তা এখনও পুরোপুরি সরানো যায়নি। এই অবস্থায় গ্রামাঞ্চলে দুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে রাজ্য সরকার।

শনিবার এই মর্মে ট্যুইট করা হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে। শনিবার টুইটে স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করার জন্য সেনা সমর্থন চাইছে বাংলা।

ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর একযোগে কাজ করছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। রেল, বন্দর এবং বেসরকারি সংস্থাকেও বলা হয়েছে এগিয়ে আসতে। স্বরাষ্ট্র দফতরের আর্জি শুনে রাজ্যের অনুরোধে পাঁচ কোম্পানি সেনা তৎক্ষণাৎ পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র। এখন দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরেও এই সমঝোতা কতটা বজায় থাকে, সেটাই দেখার।