রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাতের আবহ চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে এমনই এক পরিস্থিতিতে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । এদিন ১২টা নাগাদ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দু’জনের বৈঠক হয়। তবে, ঠিক কি কি বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি।
দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। তিনি লখনউ হয়ে কলকাতায় ফিরতে পারেন। এর আগে একাধিক টুইটে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল।
তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। রাজ্যের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে এবং কিভাবে রাজ্য প্রশাসন চলছে তা তিনি জানাবেন। প্রসঙ্গে সেই সময় তিনি বলেছিলেন, রাজ্যবাসীর কল্যাণ আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষকে দুর্দশামুক্ত করার কাজ তিনি চালিয়ে যাবেন।’
পশ্চিমবঙ্গবাসীর প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার যে শপথ তিনি নিয়েছেন তাও তিনি টুইটে উল্লেখ করেছিলেন। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সংঘাতের আবহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিও তার মধ্যে রয়েছে। কখনও করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর সংখ্যা কখনও বা চিকিৎসা ব্যবস্থা, করোনা আক্রান্তের দেহ পোড়ানো, এই নিয়ে বিগত কয়েক মাস ধরে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত পশ্চিমবঙ্গবাসীর অজানা নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর পত্ৰযুদ্ধও হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা হাজির না হওয়ায় সেই সংঘাত আরও বেড়েছে। ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। যদিও শিক্ষা দফতরের থেকে বলা হচ্ছে, বিধি মেনে এই বৈঠক ডাকেননি রাজ্যপাল, সেই কারণেই উপাচার্যরা এই বৈঠকে হাজির হননি।
রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে বহ্বার প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। প্রায়শই নবান্নকে চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর চাইছে রাজ্যপাল। সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে করোনা সামলাব নাকি ওঁনার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেব? যেন আমরা সবাই চাকরবাকর!
যদিও এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি রাজ্যপাল। বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মন্তব্য করে রাজ্যপাল সংঘাত বাড়িয়েছেন। বাম ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা রাজ্যপালের সব মন্তব্যকে যে স্বাগত জানিয়েছেন এমন নয়। কিন্তু রাজ্যপাল রয়েছে নিজস্ব ছন্দে। তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠক নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
সেই জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সোমবারই বিজেপির রাজ্য সভাপতির দিল্লি যাওয়ার কথা। তবে, তিনি দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আদৌ দেখা করবেন কিনা, তা এখনও জানা যায়নি। বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে দরজায়। অন্যদিকে করোনা আবহ। সব মিলিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।