রাজ্যজুড়ে এসআইআর প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বাড়তে থাকা অস্বস্তি ও মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে শনিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে ডেপুটেশন জমা দিল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ পার্থ ভৌমিক, বাপি হালদার। তাঁদের অভিযোগ, এসআইআর প্রক্রিয়া পরিচালনায় চূড়ান্ত গাফিলতি করছে নির্বাচন কমিশন, যার জেরে অযথা চাপের মধ্যে পড়ে একের পর এক বিএলও-সহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ডেপুটেশন জমা দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় দলটি।
অরূপ বিশ্বাস জানান, কমিশনের অব্যবস্থাপনাই একাধিক মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাঁর অভিযোগ, বিএলওদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি, অথচ দুই বছরের কাজ দুই মাসে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে অতিরিক্ত কাজের চাপ তৈরি হয়েছে এবং তার ফলেই একের পর এক বিএলওর মৃত্যু ঘটছে। এদিন সকালে কৃষ্ণনগরে আত্মঘাতী হন রিঙ্কু তরফদার নামে এক মহিলা বিএলও। সুইসাইড নোটে তিনি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন বলে দাবি তৃণমূলের।
এ নিয়ে মোট তিনজন বিএলওর মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছে শাসক দল। শুধু বিএলও নয়, রাজ্যে এসআইআর আতঙ্কে মোট ৩৪ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করে তৃণমূল। অরূপ বিশ্বাসের আরও মন্তব্য, ইচ্ছাকৃতভাবেই ভোটার তালিকায় ভুল ছবি দেওয়া হচ্ছে, ওয়েবসাইট ত্রুটিপূর্ণ, এবং প্রতিটি বুথে ১৫০ থেকে ২০০ জন বৈধ ভোটারের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে বিজেপির ‘বি টিম’ হিসেবে আচরণ করছে।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন সীমান্ত সুরক্ষা ও অনুপ্রবেশ নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, সীমান্ত দিয়ে কারা প্রবেশ করছে তার দায়িত্ব কার? অথচ মানুষের বৈধ ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে উলটো পথে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএলওদের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে যে তাঁদের ঘুম পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কাজের চাপে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন বিএলও এবং গোটা রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও বহু মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এসআইআর প্রক্রিয়া চলানো অমানবিক বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া চলবে না, এবং তৃণমূল কংগ্রেস স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। তাঁর বিশ্বাস, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২৫০-র বেশি আসন নিয়ে ফের ক্ষমতায় আসবে।
সাংসদ পার্থ ভৌমিকও অভিযোগের সুর চড়িয়ে বলেন যে নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে খুশি করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তাঁর বক্তব্য, “এসআইআর প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের সৃষ্টি। নাম বাদ দেওয়ার জন্য আগে থেকেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে এসেছি—একজন বৈধ ভোটারের নামও বাদ দেওয়া যাবে না। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই তৃণমূল চালিয়ে যাবে।” তিনি আরও জানান যে কমিশনের ভূমিকা এতটাই প্রশ্নবিদ্ধ যে বহু মানুষ নিজেদের নাম হারিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন এবং তাতে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে তড়িঘড়ি করে এসআইআর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আগে থেকেই কত ভোটারের নাম বাদ যাবে তা ঠিক করা হয়েছে—এমনই দাবি করে তাঁরা কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের মতে, কমিশনের কার্যকলাপ নির্বাচনী পরিবেশকে কলঙ্কিত করছে এবং সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মুখে ফেলছে।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে এসআইআর প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এত কম সময়ে এত সংবেদনশীল একটি কাজ করা অসম্ভব এবং এতে ভুলভ্রান্তির আশঙ্কা প্রবল। এতে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে সতর্ক করেছেন তিনি। এর আগে কলকাতার রাজপথে এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Advertisement