• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

গড়িয়ায় শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করায় দম্পতিকে মারধর ও শ্লীলতাহানি

দম্পতির বিরুদ্ধে আবার পাল্টা অভিযোগ স্থানীয়দের

উৎসবের উল্লাসের আড়ালে ফের উন্মত্ততার ছাপ। কালীপুজোর বিসর্জনের রাতে শব্দবাজির দাপটে গড়িয়ায় চরম অশান্তি। অভিযোগ প্রতিবাদ করায় স্থানীয় মত্ত যুবকদের হাতে মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার এক দম্পতি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গোটা পরিবার। আবার এই ঘটনার পাল্টা ছবি তুলে ধরেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দম্পতির অভিযোগ একতরফা ও মিথ্যা। বরং ওই দম্পতিই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অশান্তির সৃষ্টি করেছিলেন। এমনকি তিনতলা থেকে চকোলেট বোম ছোঁড়েন তাঁরা। ফলে আহত হয়েছে এক শিশু।

ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়ার নেতাজিনগর থানা এলাকায়। বৃহস্পতিবার ভাই ফোঁটার রাতে স্থানীয় একটি ক্লাবের তরফে কালীপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয়। অভিযোগ, সেই শোভাযাত্রা থেকে একের পর এক শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছিল। হঠাৎই একটি বোমা গিয়ে ফেটে পড়ে এক মহিলার পায়ের পাশে। আতঙ্কিত হয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। আর সেই প্রতিবাদের জবাবেই মত্ত যুবকেরা চড়াও হয় তাঁর উপর।

Advertisement

নিগৃহীতা মহিলার স্বামী অরিজিৎ কর জানান, ‘ভাইফোঁটার অতিথিরা ফিরে যাওয়ায় বাড়ির নীচে নেমেছিলাম। তখনই আমার স্ত্রীর পায়ের কাছে শব্দবোমা ফাটে। তখন স্ত্রী বলেছিলেন, ‘এভাবে কেউ বাজি ফাটায়? সেকথা শুনেই কয়েকজন যুবক তেড়ে এসে রাস্তায় ফেলে দেয় তাঁকে। লাথি, ঘুষি, চুল টানা সবই চলে তাঁর উপর। তৎক্ষণাৎ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মারধরের জেরে মুখ ফেটে গিয়েছে তাঁর, সেলাইও পড়েছে।’

Advertisement

অরিজিৎ আরও বলেন, এখানেই থেমে থাকেনি দুষ্কৃতীরা। পরে তাঁদের তিন তলার ফ্ল্যাটে দরজা ভেঙে ঢুকে স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি করে। থানায় যাতে অভিযোগ না জানানো হয় তার জন্য ভয় দেখানো হয়। রাতভর আতঙ্কে কেটেছে। ঘটনার জেরে দম্পতির ছেলেও আতঙ্কে রয়েছে। ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। নিগৃহীতা মহিলা পেশায় একজন শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী একজন ব্যবসায়ী। পরিবারের দাবি, হামলাকারীরা স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই।

আবার এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, ‘রাত ১১টা নাগাদ আমরা ঠাকুর নিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই দম্পতি থাকেন তিন তলায়। হঠাৎ নীচে নেমে এসে উল্টে আমাদের দিকেই বাজি ফাটাতে শুরু করেন। আমাদের দিক থেকে একটি বাজি তাঁদের কাছে গিয়ে ফাটলে ওই মহিলা এক ক্লাব সদস্যকে ধরে কান ধরে ওঠবোস করান। এরপর ধাক্কাধাক্কি হয়। দম্পতিরা দুজনেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। রাস্তায় পড়ে গিয়েও হাত-পা চালাচ্ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ওই মহিলা পরে  তিনতলা থেকে একটি চকোলেট বোম ছোঁড়েন, যা এক শিশুর পায়ে গিয়ে লাগে। শিশুটির পায়ের আঙুল পুড়ে যায় বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়েরা।

দম্পতির তরফে বৃহস্পতিবার রাতেই নেতাজিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাঁদের অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে পুলিশ শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট চাইলে তাঁরা বাঘাযতীন হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে অভিযুক্তদের কয়েকজন আগে থেকেই উপস্থিত থেকে ভয় দেখায় তাঁদের। পরে ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চান তাঁরা।

নেতাজিনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, উভয় পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, যদিও ক্লাব সদস্যদের তরফে এখনও পর্যন্ত দম্পতির বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং পুলিশের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এবছর কালীপুজো ও বিসর্জনের সময় জুড়ে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় এক আলাদাই চিত্র ফুটে উঠেছে। এলাকায় এলাকায় ফেটেছে দেদার শব্দবাজি। তবে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগ ও নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বিশৃঙ্খলার ঘটনাটি নিয়ে গড়িয়ার নেতাজিনগর থানা এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement