বিরোধীদের নিয়ে আম্ফান মোকাবিলায় গড়া হল কমিটি

করোনা ও আম্ফান পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল নবান্ন সভাঘরে। আম্ফানের ত্রাণ এবং করোনার হ্রাস -এই দুই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

Written by SNS Kolkata | June 25, 2020 9:18 am

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা ও আম্ফান পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল নবান্ন সভাঘরে। এই বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা, দিলীপ, সূর্য, প্রদীপ রাজ্যের মুখ্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। আম্ফানের ত্রাণ এবং করোনার হ্রাস -এই দু’টি বিষয়ই গুরুত্ব পেয়েছিল এদিনের আলোচনায়।

বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আম্ফানে ত্রাণ নিয়ে কোনও কোনও বঞ্চনাই বরদাস্ত করা হবে না। আম্ফান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একাধিক রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া দেশজুড়ে করোনা ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে ছাড়ের সুযোগ সুবিধে বজায় রেখেই ৩১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সর্বদলীয় বৈঠকের পরে মমতা এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হল। করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তার মোকাবিলায় সর্বদল বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

যদিও লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে এদিন বামফ্রন্টের প্রতিনিধি সূর্যকান্ত মিশ্রদের ভিন্ন বক্তব্য ছিল। কোনও পরিকল্পনা না নিয়ে, করোনার টেস্টিং বৃদ্ধি, চিকিৎসা পরিষেবা বাড়ানো ইত্যাদি না করে লকডাউন বাড়িয়ে কোনও লাভ হবে না বলেই মনে কনে বামফ্রন্টের শীর্ষনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। প্রথম অবস্থায় চারদিনের নোটিশেই লকডাউন ঘোষণারও সমালোচনা করেন সূর্যবাবু।

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, যেহেতু দেশজুড়ে করোনা বাড়ছে। তাই আমরা যদি লকডাউন বৃদ্ধি করে সংক্রমণ কিছুটা কমাতে পারি, তাহলেই দেশকে সাহায্য করা হবে। তবে এই লকডাউনের মধ্যে যেভাবে আগে থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলি আগের মতোই থাকবে বলে জানিয়ে দেন মমতা।

সরকারি বেসরকারি অফিস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বাস-ট্যাক্সি পরিষেবা যেভাবে চালু ছিল তা-ই থাকবে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে লোকাল ট্রেন এবং মেট্রো রেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এদিনের বৈঠকে গণ পরিবহণের সমস্যার কথা কয়েকজন প্রতিনিধি বলেছেন। এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। মমতা এদিন বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার কাছে ফের আবেদন রেখেছেন, ভাড়া বাড়াব না বলে বাস নামাব না, প্লিজ এটা করবেন না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা আগেই করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে উচ্চমাধ্যমিকের যেসব পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গিয়েছে সেগুলি দূরত্ববিধি বজায় রেখে জুলাই মাসে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।

করোনা নিয়ে আরও যত্ন নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, নন কোভিড রোগি বিশেষ করে কার্ডিয়াক রোগিদের চিকিৎসার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বলেন, এটা ব্যবসা করার সময় নয়, মানকিতার সময়। রাজ্যে টেস্টি ল্যাবের সংখ্যা বেড়েছে। তবে যেখানে টেস্টি ল্যাব নেই, সেখানে তার ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানান মমতা। করোনা রুখতে আরও তিন কোটি মাস্কের বরাত দেওয়া হয়েছে।

এদিনের বৈঠকে আম্ফান মোকাবিলায় একাধিক দলের সদস্য নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। সর্বদলীয় সিদ্ধান্তের খসড়া বানাবে এই কমিটি। খসড়ার একটা কপি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে। তবে আম্ফানে যে আরও অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, সে বিষয়ে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল সকলেই একমত। একইভাবে অসংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও সাহায্য করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তারা।

গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা অভিযানেও বাংলার বাদ পড়ার প্রসঙ্গটি উঠেছিল এদিনের সর্বদল বৈঠকে। সুন্দরবনের বাঁধ নিয়ে স্থায়ী সমাধান করার জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এদিন। বুধবারের সর্বদল বৈঠকে আম্ফানের ত্রাণ নিয়ে সকার পক্ষের দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই বিভিন্ন বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধিরা সরব হয়েছিলেন।

বৈঠকের পরে বামফ্রন্টের সুজন চক্রবর্তী বলেন, পক্ষান্তরে সরকার এই দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আস্ফানের ত্রাণ নিয়ে বঞ্চনা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ইতিমধ্যেই অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দলবাজিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও জায়গাই নেই। যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তারাও আবেদন জানাতে পারেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে ২১০০ আবেদনপত্র এসেছে। জনপ্রতিনিধিদের বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, কোনও গরিব মানুষকে বঞ্চনা করবেন না। কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে, ক্ষতিপুরণ যেন সবাই ঠিকমতো পায়। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সবার কাছে আবেদন রাখেন, বিডিও অফিস ভাঙচুর করবেন না। ঠিক জায়গায় আবেদন করুন। ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না।

এদিনের বৈঠকে কেন্দ্রবিরোধী সুর তেমন ছিল না। বরং করনোনা এবং আম্ফান মোকাবিলায় সকলকে একজোট করার ভাবনাই বেশি প্রকাশ পেয়েছিল এদিন। আগামী বছরের প্রস্তাবিত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন পরিমিত ভাবমূর্তি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।