• facebook
  • twitter
Monday, 11 August, 2025

চিৎপুরে বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যায় ফাঁসির সাজা দিল শিয়ালদহ আদালত

অভিযুক্ত সঞ্জয়কে জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা দেওয়ার পাশাপাশি দম্পতির বাড়িতে ডাকাতির মামলাতেও দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।

চিৎপুরে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল সঞ্জয় সেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ১০ বছর আগের সেই মামলায় বুধবার অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। দম্পতিকে হত্যার এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে মনে করেছেন বিচারক। অনির্বাণ দাসই সেই বিচারক যিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিলেন। আরজি করের ধর্ষণ এবং হত্যা মামলা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে বিবেচনা করেননি তিনি।

চিৎপুরে দম্পতিকে হত্যার মামলায় সঞ্জয় সেন ওরফে বাপ্পার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাস। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই দুপুর ২টো নাগাদ স্থানীয় পুলিশ খবর পেয়ে চিৎপুরের ইন্দ্রলোক হাউজিং এস্টেট, ফেজ-১, রানী দেবেন্দ্র বালা রোডের একটি ফ্ল্যাটে পৌঁছয়। ফ্ল্যাটটি বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। ভিতর থেকে দুর্গন্ধ আসছিল। দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখতে পায় বৃদ্ধ দম্পতি প্রাণগোবিন্দ দাস এবং তাঁর স্ত্রী রেণুকা দাস আলাদা ঘরে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। উভয়েরই বয়স ৭০এর বেশি। উভয়ের দেহেই গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ সোনার গয়নাও খোওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায় উভয়েরই মৃত্যু হয়েছে ‘আঘাতজনিত কারণে’।

তদন্তে নেমে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সঞ্জয় সেন নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে জেরা করে পুলিশ নন্দীগ্রামের একটি গোপন আস্তানা থেকে লুঠ হওয়া সোনার গয়না এবং ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা নগদ উদ্ধার করে। তদন্তে উঠে আসে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে। পরে সঞ্জয়ের বাড়ির কাছের একটি পুকুর থেকে খুনে ব্যবহার করা লোহার রড এবং রক্তাক্ত পোশাকের হদিশ মেলে। ঘটনার পর থেকেই সঞ্জয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার ২ দিন পরে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে সঞ্জয়ের পৈতৃক বাড়ি থেকে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দম্পতির মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। চিৎপুরের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে দম্পতি একাই থাকতেন। তাঁদের দেখাশোনার জন্য পূর্ণিমা নামে এক তরুণী থাকতেন। পূর্ণিমার সঙ্গে সঞ্জয়ের বিয়েও দিয়েছিলেন দম্পতি। জানা গিয়েছে, দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য সঞ্জয়ের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন প্রাণগোবিন্দ এবং রেণুকা দাস। বাজার যাওয়া বা বাড়ির বাইরের কাজকর্ম সঞ্জয় করতেন। সঞ্জয়কে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সাহায্যও করেছেন বৃদ্ধ দম্পতি। যে রিকশা চালিয়ে সঞ্জয়ের উপার্জন হয়, সেই রিকশাটিও কিনে দিয়েছিলেন প্রাণগোবিন্দই।

প্রায় দশ বছর ধরে মামলা চলার পরে অবশেষে অভিযুক্ত সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। তদন্ত চালাচ্ছিল লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। জোড়া খুনের মামলার তদন্তকারী আধিকারিক জগবন্ধু ঘড়াই এবং সরকারি আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য এই মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি এবং ছবি আদালতে জমা দেন। তথ্যপ্রমাণ এবং ছবি দেখে ঘটনার বীভৎসতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন বিচারক দাস। এই জোড়া খুনের ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলেই মনে করেছেন তিনি।

আদালতের সাজা ঘোষণার পরে সরকারি আইনজীবী সন্দীপ জানান, ‘মৃত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা উভয়েই অবসরপ্রাপ্ত। অভিযুক্ত ওই দম্পতির কাছে পুত্রের মতো পালিত হয়েছেন। প্রতিদিন তাঁদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। সঞ্জয়ের উপরেই তাঁরা নির্ভরশীল ছিলেন। সেই নির্ভরশীলতার জায়গাকে তছনছ করে দিয়ে তাঁদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

অভিযুক্ত সঞ্জয়কে জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা দেওয়ার পাশাপাশি দম্পতির বাড়িতে ডাকাতির মামলাতেও দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। ওই মামলায় তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।