ঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমায় কেন্দ্রীয় দল, লঞ্চ থেকেই পরিদর্শন

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া সুন্দরবনকে আম্ফান ঝড়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে সম্ভবত স্তম্ভিত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।

Written by SNS South 24 Pargana | June 6, 2020 7:36 pm

সুন্দরবন (Representational Image: iStock)

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিশ্বের মানচিত্রে ঠাই পাওয়া প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া সুন্দরবনকে আম্ফান ঝড়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে সম্ভবত স্তম্ভিত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। সংবাদমাধ্যম প্রশাসন কাউকে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিয়ে, বিকেলে ফিরে গেলেন হেলিকপ্টারে তিন সদস্যের কেন্দ্রীয় দল।

পূর্ণিমার ভরা কোটালে সুন্দরবনের নদীর ভয়াল রূপ। ভয়ঙ্কর ঢেউ। উত্তাল বঙ্গোপসাগর দেখে, টলমল লঞ্চে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রীয় দল পাথরপ্রতিমার বিপর্যস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করলেন। সড়কপথে পাথরপ্রতিমার উত্তর গোপালনগর ও মাধবনগর মৌজার ঝড়ে ভেঙে পড়া ৬-৭টি বাড়ি পরিদর্শন করে, ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন তিন সদস্য। এ খবর জানালেন, কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গী পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সমীরবাবু জানান, সকাল ১০ টায় পাথরপ্রতিমার কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুজ শর্মা, খরচ সংক্রান্ত বিভাগের এস সি মিনা, জল মন্ত্রকের সিদ্ধার্থ মিত্র। প্রতিনিধি দলকে নিয়ে কলেজের হলে প্রশাসকি বৈঠকে যোগ দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকগণ।

বিধায়ক সমীর জানা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের ছবি একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে এলাকার মানুষ কতটা বিপদের মধ্যে আছেন, সব হারিয়ে তা বোঝান। এদিন সকাল ১০ টা থেকে প্রায় ১১ টা পর্যন্ত পাথরপ্রতিমার কলেজে বৈঠক করে, সড়কপথে উত্তর গোপালনগরে পৌঁছয় প্রতিনিধি দল। নদীবাঁধ কীভাবে ভেঙেছে তা পরিদর্শন করার সময়ে জেলাশাসক প্রতিনিধি দলকে বোঝান।

আয়লার পর যেভাবে কিছু অঞ্চলে পাকা বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, সেভাবেই সুন্দরবনাঞ্চলের নদীবাঁধ পুরো পাকা না করলে ঝড়ে বার বার তা ভেঙে পড়বে। সুন্দরবনে ঝড় প্রতি কোটালে ভাঙন নিত্যকার ঘটনা। জেলাশাসক বোঝানোর সময়েই গ্রামের কিছু মানুষকে দেখে প্রতিনিধি দলের জিজ্ঞাসা, আপনাদের কী কী ক্ষতি হয়েছে। শম্ভুনাথ দাস নামে জনৈক গ্রামবাসী প্রতিনিধি দলকে জানান, বাঁধ ভেঙে নদীর নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে যে ক্ষতি করেছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যে আর চাষ করা যাবে কিনা সন্দেহ। এছাড়া ঘরবাড়ি তো সব ভেঙে গেছে। পাকা নদী বাঁধ না হলে আমরা বাঁচব না। ঘরবাড়িও ভালো করে তৈরি করতে হবে।

হতদরিদ্র মানুষদের চেহারা চারপাশের দুর্দশা দেখে কথা বলা বন্ধ হয়েছিল প্রতিনিধি দলেরই। এরই মধ্যে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছ থেকে সবকিছু বুঝে নেবার চেষ্ট। হাওয়ার ঝাপটা। পায়ের তলায় কাদা। অস্থায়ী সেতু চলাচলের। প্রতিনিধি দল সামলাতে ব্যস্ত প্রশাসন।

উত্তর গোপালনগর হয়ে লঞ্চে রাক্ষসখালি জি প্লট-এ যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়ে লঞ্চ। উত্তাল ঢেউ। প্রবল ঘূর্ণি। কোথাও ভাটার টান। লঞ্চ নিয়ে এগোনো মুশকিল। লঞ্চ সারেঙ্গদের কথায়, পূর্ণিমার ভরা কোটাল। বইছে প্রবল হাওয়া। জল অনবরত রোলিং হচ্ছে। নদী আর সাগরের যোগ হওয়ার মুখে লঞ্চ নিয়ে এগোনো মুশকিল।

প্রতিনিধি দল যেতে পারলেন না জি প্লট-রাক্ষসখালি। তবে লঞ্চ থেকেই দেখলেন ব্রজবল্লভপুর-ঘোট রাক্ষসখালি, রামগঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। মাটিতে মিশে যাওয়া মাটির ঘরবাড়ি। জলের তলায় চাষের জমি।

নদীবাঁধ বেশির ভাগ জায়গায় ভেঙে গ্রাম প্লাবিত করে, অনেক বড় নদী হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জনজীবনে। এরই মধ্যে কিছু মানুষ কেন্দ্রীয় দলকে শুনিয়ে দেয়, ২০০৯ সালের ২৫ মে আয়লা হয়ে গিয়েছে। পাকা বাঁধ হবে শুনেছি। সেই বাঁধ এখনও হয়নি। এবারও যদি তা না হয়, সুন্দরবন বাঁচবে না। পাকা বাঁধ তৈরিতে সমস্যা অনেক রকমের। অর্থের জোগান চাই সময়মতো। আবার জমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে। বুঝিয়ে দেয় প্রশাসনিক আধিকারিক। চুপচাপ কেন্দ্রীয় দল। কী রিপোর্ট দেবেন কে জানে। সুন্দরবনের মানুষ জানে অনেক অর্থ, উপযুক্ত তদারকি আধুনিক প্রযুক্তিতে বাঁধ নির্মাণ সুন্দরবনকে বাঁচাতে পারে।