দিনভর টানাপোড়েন মিটল, কলকাতায় ঘুরল কেন্দ্রের দল

করোনা সংক্রমিত এলাকা পরিদর্শন নিয়ে সোমবার থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাত চলছিল।

Written by SNS Kolkata | April 22, 2020 8:32 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা সংক্রমিত এলাকা পরিদর্শন নিয়ে সোমবার থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাত চলছিল। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান রাজ্য সকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন। শেষ পর্যন্ত বিকেলের দিকে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার পর সেই টানাপোড়েন শেষ হয়।

প্রতিনিধি দল শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখেন। কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধির সঙ্গে রাজ্য সরকার যাতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কোনও অসহযোগিতা না করে, সেজন্য কড়া চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব জানান, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কোথাও যাওয়ার জন্য গাড়ি চাইলে বা কোনও তথ্য চাইলে, তা দিতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। তবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সঙ্গে ঘোরা রাজ্যে প্রশাসনিক কর্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

মুখ্যসচিব এদিন জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে কোনও সংঘাত থাকা উচিত নয়। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কেন্দ্রীয় আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলকে রাজ্যে পাঠানোকে সমর্থন করেনি রাজ্য। ওই প্রতিনিধি দলকে কোনও জেলায় যেতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দু’দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে এসে পৌঁছেছি। একদিন কেটে গেল। নাইসেড আর নবান্ন ছাড়া কোথাও যাওয়া গেল না। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া গেলেও এই রাজ্যে প্রশাসন কোনও সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ করেন অপূর্ব।

সোমবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফ-এর গেস্ট হাউসেই ছিল। মঙ্গলবার দুপুরের পর সেখানে গিয়েই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। এরপর বিএসএফ টিম এবং কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধির সঙ্গে গড়িয়াহাট হয়ে যাদবপুরে গিয়ে করোনা পরিস্থিতি সরজমিনে দেখে কেন্দ্রীয় আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসরি রাজীব সিনহা জানান, রাজ্য সরকার কোনও অসহযোগিতা করতে চায় না। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কোনও তথ্য চাইলে তা দেওয়া হবে। কোথাও ঘুরতে চাইলে কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিকে তাদের সঙ্গে দেওয়া হবে।

উত্তরবঙ্গে যে প্রতিনিধি দল এসেছেন, তারাও যোগাযোগ করেছেন, তাঁদেরও একই কথা বলছি। তবে কীভাবে লকডাউন মানতে হবে, সে বিষয়ে ওরা আর কী বলবেন? যদি কোথাও কোনও গাফিলতি নজরে আসে, সেকথা জানালে আমরা তা খতিয়ে দেখব। তবে কলকাতা ছাড়া হাওড়াতে যাওয়ার বিষয়ে ওই প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও ইচ্ছেপ্রকাশ করেনি বলে জানান মুখ্যসবি রাজীব সিনহা।

সোমবার কেন্দ্রের প্রতি হুঁশিয়ারির পর মঙ্গলবার মুখ্যসচিবের সুর নরম হওয়ার নেপথ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পৌঁছতেই মঙ্গলবার ফের একটি চিঠি পৌছয় নবান্নে। সেই চিঠিতে রাজ্য সরকারকে আর সহযোগিতার জন্য অনুরোধ নয় সরাসরি ‘আদেশ’ করা হয়েছে।

এদিনের চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা লিখেছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে রাজ্যগুলির জন্য ভাবনাচিন্তা করেই নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারেরর অসহযোগিতা যে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন (২০০৫) লঙঘন করছে, সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

যেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে এই প্রতিনিধি দল কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। কলকাতা এবং জলপাইগুড়িতে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি জেলা প্রশাসন। রাজ্য সরকারের এহেন আচরণ শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অমান্য করছে।

সুপ্রিম কোর্টও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে বলেও চাপে রাখা হয় রাজ্য সরকারকে। অবশ্য এদিন কেন্দ্রীয় আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলকে সমস্তরকম সাহায্যই করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।