কেন্দ্রই লকডাউন ভাঙছে, তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

করোনার মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের জবাবেই রাজ্যে লকডাউন ভাঙা নিয়ে মঙ্গলবার ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Written by SNS Kolkata | April 8, 2020 4:52 pm

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: AFP)

করোনার মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের জবাবেই রাজ্যে লকডাউন ভাঙা নিয়ে মঙ্গলবার ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্কে জন-ধন-প্রকল্পের নামে এবং গ্যাস দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। ফলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা যাচ্ছে না। কেন্দ্র নিজেরাই লকডাউন ঘোষণা করে নিজেরাই তা ভাঙতে বাধ্য করছে সাধারণ মানুষকে।

অন্যদিকে রুটিরুজির কথা চিন্তা করে রাজ্যের পক্ষ থেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কিছু শ্রমিককে লকডাউনে ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে এখন থেকে ঘরে বসে বিড়ি বাঁধবেন শ্রমিকরা এবং হাটে ফুল বেচবেন চাষীরা। তবে অবশ্যই করোনা সতর্কতার নিয়ম মেনে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই জানিয়ে দেন, বিশেষ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫। নতুন করে ৮ জনের শরীরে সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৯। এদের মধ্যে ৬০ জন ন’টি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা-ই বলুক এই রাজ্যে করোনায় মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকার যখন হটস্পট হিসেবে কয়েকটি জেলার তালিকা প্রস্তুত করল, তখন এই রাজ্যেও সাতটি জায়গাকে হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন মমতা। তবে সাতটি জায়গা কোথায় সেকথা জানাতে চাননি মমতা।

সূত্রের খবর, কালিম্পং হটস্পট-এর তালিকায় থাকতে পারে। হটস্পট জায়গাগুলোকে একটু বেশি করে কন্ট্রোল করতে হবে, লক্ষণরেখা টানতে হবে। সবেবরাত বা পয়লা বৈশাখের উৎসবের সময়েও যে কোনওভাবেই সসাস্যাল ডিসট্যান্সিং ভাঙা যাবে না। এমনকী লকডাউন পর্ব শেষ হওয়ার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানো হলেও যে তাদের প্রথমে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তথা সেফ হাউসে রাখা হবে, সেকথাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে মমতা অভিযোগ করেন, রাজ্যে ইতিমধ্যে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ব্যাঙ্কে জিরো ব্যালান্সের জন-ধন-অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে এবং বিনা পয়সার গ্যাস দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ফলে বহু মানুষ সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং নীতি ভেঙে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা আমরা ভালোভাবে নিইনি। আমাদের বললে আমরা ছোট ছোট গ্রুপ করে এটা সামলে দিতাম। যেমন করে রেশন দোকানে হুড়োহুড়ি করে জিনিসপত্র নেওয়া আটকেছে পুলিশ প্রশাসন। মুখ্যসচিবকে এই বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে।

মমতা এদিন অভিযোগ করেন, রেশনের খাদ্যশস্য বিলি করার ক্ষেত্রেও দু-একটা রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি করছে। রেশনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। রেশন দোকানে গিয়ে বলছে, দলের পক্ষ থেকে পাড়ায় চাল-ডাল বিলি করা হবে। রেশন ডিলারের কাছ থেকে চাল ডাল আদায় করতে চাইছে রাজনৈতিক দলগুলি।

মমতা বলেন, সংকটের সুযোগ নিয়ে এভাবে পকেটভারি করা যাবেনা। কোনও রাজনৈতিক দল সাহায্য করতে চাইলে চাল-ডাল নিজেরা পয়সা দিয়ে কিনুক। তৃণমূল দলের পক্ষ থেকেও তাই করা হয়েছে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটার, রেশন। ডিলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। রেশনে চাল, গম, ডাল ইত্যাদি পূর্ব ঘোষণামতো ছ’মাস বিনামুল্যে দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকেই। একই সঙ্গে খাদ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় যাঁরা আছেন তারাও চাল গম পাবেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ফের বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিলে বলেন, এটা ঘোলা জলে মাছ ধরার সময় নয়, ফেক নিউজ করার সময় নয়, পরস্পরকে দোষারোপ করার সময় নয়। আমেরিকাকে করোনার ওষুধ দিলেও বাংলার জন্য চিকিৎসার সরঞ্জাম দেওয়ার ক্ষেত্রে মোদি সরকার যে তেমন দরাজহস্ত নয়, সেকথারও উল্লেখ করেন মমতা।

একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে কিছু অসংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে চান মমতা। সেই সুত্রেই আজ বুধবার থেকেই স্থানীয় হাটে গিয়ে ফুল বেচতে পারবেন ফুল চাষীরা। আর বাড়িতে বসে বিড়ি বাঁধা শুরু করতে পারবেন বিড়ি শ্রমিকরা। কিষাণ মাণ্ডির বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে চাইলে যাতে না আটকানো হয় সেজন্যও পুলিশ এবং প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তবে এসব ক্ষেত্রে করোনা সতর্কতাকে কোনওভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

দুধ ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা ভেবে রাজ্যে চার ঘন্টার জন্য মিষ্টির দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর ইত্যাদি জেলা থেকে ফুলচাষীরাও বিভিন্ন মার্কেটে ফুল সরবরাহ করতে পারবেন। এজন্য তাদের গাড়ি আটকানো হবে না। অন্যদিকে বিড়ি শ্রমিকরা বাড়িতে বসে বিড়ি বাঁধবেন। তবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে। এক জায়গায় সাতজনের বেশি বিড়ি বাঁধা যাবে না। এরপর ওই শ্রমিকদের বাঁধা বিড়ি এজেন্টরা গিয়ে তাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে বিড়ি শিল্পসংস্থার কাছে পৌছে দেবে। পানচাষীরাও বাজারে পান বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছে মমতা। ফলে রাজ্যে পান বিড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও কার্যত নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।