তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাবালিকা কন্যাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করায় বিজেপি-র মিছিল থেকে দু’জন তরুণীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এবার ওই ঘটনার জল গড়ালো অনেক দূর। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো, সিবিআই-ই নির্দিষ্ট ঘটনার তদন্ত করবে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের উপর হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দুই তরুণী পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ এনে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গত মাসে। অভিযোগ ছিল, হেফাজতে নিয়ে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ৮ অক্টোবর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। নির্দেশে তিনি বলেন, অত্যাচারের ঘটনায় পুলিশের মধ্যে কারা যুক্ত ছিলেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই।
Advertisement
তবে সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। সেই রায়দানের প্রায় এক মাসের মাথায় বুধবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আবেদন খারিজ করে জানিয়েছে, মামলাকারীর উপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছে, তা মেডিক্যাল রিপোর্টে স্পষ্ট। বিচারপতিদ্বয়ের ভাষায়, ‘ওই রিপোর্টকে অস্বীকার করা যায় না। তাই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করবে। রাজ্যের দায়িত্ব কেবল আইন মেনে কাজ হয়েছে কি না, তা দেখা।’
Advertisement
এদিন কার্যত হাইকোর্টের রোষের মুখেই পড়তে হয় রাজ্যকে। প্রধান বিচারপতি রাজ্যকে স্পষ্ট জানান, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ রাজ্য সমর্থন করতে পারে না।’ বুধবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সওয়াল করেন, সাংসদের মেয়েকে নিয়ে কটু মন্তব্য করার জন্য গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো ধারা দেওয়া হয়েছে। ওই দুই মহিলার উপর পুলিশি অত্যাচার হয়নি। কিশোর দত্তের যুক্তি, ‘সিঙ্গল বেঞ্চ মামলাটি প্রথম দিন শুনেই কী ভাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল?’
পাল্টা প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আরজি কর মামলাতেও প্রথম দিনই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের দায়িত্ব, আইন মেনে কাজ হয়েছে কি না, সেটা দেখা। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজ্য সমর্থন করতে পারে না।’ এখানেই শেষ নয়, প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘রাজ্য বলছে, পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশের উপর রাজ্যের আত্মবিশ্বাস থাকলে সিবিআই-ই তদন্ত করুক। ওই দুই মহিলার গ্রেপ্তারি নিয়েও তো প্রশ্ন থাকছে।’
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত এক পদযাত্রা থেকে অভিষেকের নাবালিকা কন্যাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে ওই পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এক মহিলা ডায়মন্ড হারবার থানায় অভিযুক্ত দুই মহিলার বিরুদ্ধে মামলা করার পরই গত ৭ সেপ্টেম্বর নিমতা থেকে গ্রেপ্তার হন দু’জন। ধৃতদের পরিবারের অভিযোগ, হেফাজতে নিয়ে তাঁদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ। আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন পুলিশকর্মীরা। এরপরই হাইকোর্টে মামলা দায়ের হলে এর প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
Advertisement



