বুধবার দুটি দুর্নীতি মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। জিটিএ নিয়োগে দুর্নীতি মামলা এবং বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর ও বাফার এলাকায় থাকা রিসর্ট, হোটেল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ধের মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। দুটি মামলাতেই রাজ্যের আর্জি মেনে হাইকোর্টের বদলে সার্কিট বেঞ্চে মামলাগুলির যুক্তি মেনে অব্যহতি নেন বিচারপতি বসু। এবার প্রশ্ন উঠছে এতদিন পর হঠাৎ রাজ্য এই মামলা হাইকোর্ট থেকে কেন সরানোর দাবি জানাল? প্রথম মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে রাজ্যের ভূমিকাকে তুলে ধরেছেন তিনি। এই ইস্যুতে রাজ্যের ভূমিকায় হতাশ বিচারপতি। তাই কার্যত বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিচারপতি।
এদিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সার্কিট বেঞ্চের আইন সামনে আনেন। তাঁর যুক্তি ‘এই মামলা শোনার এক্তিয়ার এই আদালতের নেই’। কিন্তু গত বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ২৫ বার শুনানির পর কেন এই আর্জি তার ব্যখ্যা রাজ্য করেনি। এই দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, বিনয় তামাংয়ের। তাঁদেরকে নোটিস পাঠানো হয়নি কেন? সে বিষয়ে বিচারপতির প্রশ্ন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এতদিনে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি। এরপর এদিন দুপুরে বক্সা টাইগার বাফার জোনের মামলায় রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। একই আইন তিনিও দেখান। বিচারপতি এরপর ওই মামলা থেকেও সরে দাঁড়ান। তবে জিটিএ মামলায় রাজ্যের ভূমিকার পর রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন তৃণাঙ্কুরের সঙ্গে সরকারের পদস্থ আইনজীবীর সম্পর্কের কারণেই কী রাজ্য সুর নরম করল?
Advertisement
আইনজীবীদের কথায়, রাজ্যের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মামলা থেকে বিচারপতির সরে যাওয়া কার্যত নজিরবিহীন। বুধবার এই সংক্রকান্ত মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে এদিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল একাধিক ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন। বলেন, ‘এই মামলা শোনার এক্তিয়ার এই আদালতের নেই। এই মামলার শোনার এক্তিয়ার জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের’। এর পাল্টা আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আদালতকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বসুর এজলাসেই। পরবর্তীকালে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে এই মামলা বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে উঠলে তিনি রেজিস্ট্রার মারফৎ সমস্ত মামলার শুনানি পাঠিয়ে দেন মূল বেঞ্চ অর্থাৎ বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে। তাই এই মামলা শোনার এক্তিয়ার এই এজলাসের রয়েছে’।
Advertisement
তবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল যে প্রশ্ন তুলেছেন তাতেই কার্যত ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তিনি স্পষ্ট জানান, যেহেতু অ্যাডভোকেট জেনারেল তাঁর এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাই এই মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি, রাজ্যের উদ্দেশ্য নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তোলেন তিনি। দুর্নীতি মামলার তদন্ত নিয়ে অভিযোগ দায়েরের পর কেন অভিযুক্তদের ৪১/এ ধারার নোটিস দিয়ে ডাকা হল না, পুরো ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এই ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। কখনও সুপ্রিম কোর্ট আবার কখনও কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। জিটিএ নিয়োগ মামলা বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সরে যাওয়ায় মামলা প্রধান বিচারপতির এজলাসে ফিরে যাবে বলে জানা গেছে। এরপর নতুন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হতে পারে।
Advertisement



