রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে ব্লক লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের প্রশিক্ষণ। শনিবার কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কলকাতার নজরুল মঞ্চেও বিএলও-দের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। আর এই প্রশিক্ষণ চলাকালীন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বিএলও-দের একাধিক দাবিদাওয়া ঘিরে পরিস্থিতি এক্কেবারে বিগড়ে যায়।
বিএলও-র প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষকদের অভিযোগ স্কুলের রেজিস্ট্রারে তাঁদের অন ডিউটি দেখানো হবে না। অনুপস্থিত দেখানো হবে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতেই আপত্তি তুলেছেন শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি অনুপস্থিত নয়, রেজিস্ট্রারে অন ডিউটি দেখাতে হবে।
Advertisement
সেই সঙ্গে তাঁদের আরও দাবি, প্রশিক্ষণে সময় তাঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিতে হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে কাজে যোগ দিয়েও কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএলও-দের একাংশ। কাজের সময়ে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহিলা বিএলও-দের একাংশ। রাজ্যের রাজনৈতিক দলের সদস্যদের থেকে কেউ কেউ হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
শনিবার প্রশিক্ষণের কোনও প্রমাণপত্র নির্বাচন কমিশন দেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রশিক্ষণ নিতে আসা বিএলও-রা। এক শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ‘আজ যে ফর্ম দেওয়া হয়েছে, সেটায় কিছুই উল্লেখ নেই। এই ফর্ম দিয়ে আমরা স্কুলে প্রমাণ দেখাতে পারব না যে আমরা বিএলও ট্রেনিংয়ে এসেছিলাম। আগের দিনগুলিতে ঠিকঠাক প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দাবি, আজও এমন একটা ফর্ম দিতে হবে যাতে স্কুলে দেখাতে পারি যে আমরা আজও ট্রেনিংয়ে আছি।‘
অন্য এক শিক্ষিকা বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা আছে। রাত ১০টার সময়ে কাজ করতে যেতে পারব না। অন ডিউটি দিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে। নয়তো এসআইআরের কাজ করব না। কত শিক্ষককে সাসপেন্ড করতে পারে করুক।’ আর এক শিক্ষক জানিয়েছেন, অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকারই তিন-চার ঘণ্টা সফর করে স্কুলে যান। তার পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি করা কী ভাবে সম্ভব। স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি অনেক কাজ থাকে। বিএলওদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের নিশানা করছেন রাজনৈতিক দলগুলির সদস্যেরা। অন্য এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘আমরা কাজ করতে চাই। তবে আমাদের যথাযথ প্রমাণ দিতে হবে কমিশনকে আর নিরাপত্তাও চাই। নইলে কাজ করতে পারব না।‘
একটি বাড়িতে সর্বোচ্চ তিন বার যেতে হবে বিএলও-দের। এই নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএলও-দের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, এক জন বিএলও একসঙ্গে এত কাজ কী ভাবে করবেন। তিন বার একটি বাড়িতে যাবেন, তার সঙ্গে স্কুলও সামলাবেন, যা অসম্ভব। এক একটা স্কুল থেকে অর্ধেক শিক্ষককে বিএলও-র কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষকদের আশঙ্কা, স্কুলের পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে। ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতা দেখতে হবে তাঁদের। এই অবস্থায় এসআইআর-এর কাজ করা সম্ভব না।
ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ প্রতি বছর হয় বলে জানিয়েছেন কমিশনের এক আধিকারিক। আর এসআইআর শুধুমাত্র এ বছর হচ্ছে। নিজের কাজের সঙ্গে এসআইআরের কাজও করতে হবে বিএলও-দের। গোটা দেশেই এই নিয়ম রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। বিহারে যদি এই ভাবে এসআইআর হয় তাহলে বাংলায় নয় কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
প্রতি দিন ১০টি পরিবারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। শনি এবং রবিবার বেশি করে কাজ করতেও বলা হয়েছে। কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসআইআরের কাজের জন্য বিএলও-দের এককালীন ১২ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগে তাঁদের ৬ হাজার টাকা দেওয়া হত। বিএলও সুপারভাইজ়ার এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার টাকা।
কমিশনের কাছে আগেও এই অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএলওদের একাংশ। তখন বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। এসআইআরের জন্য নিজের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়নি, জানিয়েছে কমিশন। বিএলও-রা শনিবার যে অভিযোগ করেছেন, তা দিল্লিতে কমিশনের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
Advertisement



