কর্মীসভায় বিজেপিকে দুষলেন, নন্দীগ্রামে ছাপ্পা ভােটের জন্যই দ্বিতীয়বার ভােটে দাঁড়াতে হচ্ছে: মমতা

কর্মীসভায় যেমন বিজেপিকে তুলােধােনা করলেন,একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের মনােবলও বাড়ালেন।নন্দীগ্রামে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন,তা জানাতেও ভুললেন না।

Written by SNS Kolkata | September 9, 2021 1:37 am

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo:SNS)

বুধবার থেকেই ভবানীপুরে ভােটপ্রচার শুরু করলেন তৃণমূলে সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চে প্রথম কর্মীসভায় একদিকে যেমন বিজেপিকে তুলােধােনা করলেন, একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের মনােবলও বাড়ালেন। নন্দীগ্রামে তিনি যে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন, তা জানাতেও ভুললেন না। সেই সঙ্গে একথাও জানালেন ফলপ্রকাশের পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি।

‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ তৃণমূলের এই নয়া বিধিকে মান্যতা দিয়ে তিনি অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। কিন্তু দল তাতে রাজি হয়নি। এদিন কর্মীসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই রণংদেহি মেজাজে ছিলেন। নির্বাচনরে সময়ে জমানাে ক্ষোভ উগরে দিলেন এদিন।

বললেন, কীভাবে এবার নির্বাচন লড়েছি, সেকথা আমরাই জানি। একদিকে টাকা ছড়ানাে হয়েছিল অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তৃণমূলকে নাকাল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ গুণ্ডাকে নিয়ে আসা হয়েছিল । খালি ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে, কাউকে ভােট করতে দেওয়া হয়নি।

নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন আমি নিজে বাধ্য হয়ে নন্দীগ্রামের একটা বুথে গিয়ে দু’ঘন্টা বসেছিলাম। নন্দীগ্রামে ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছিলাম। আমাকে হারাতে প্ল্যানিং ব্রা হয়েছিল। কে করেছে আমি জানি, নির্বাচনে আবার আমাকে দাঁড়াতে হল বিজেপির ষড়যন্ত্রের জন্য নাম না করলেও মমতার কথা থেকে পরিষ্কার, তার অভিযােগের তির নন্দীগ্রামে তার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর দিকে।

এদিন মমতা একথাও বলেন, ওদের দলে থাকলে কারও নামে অভিযােগ থাকলেও এফ আই আর করা যাবে না। কেন তিনি কি ভগবানের জ্যৈষ্ঠ পুত্র নাকি? তবে এসব আক্রমণের তির বেঁধানােই নয়, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার তথা ভােট গণনায় স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছেন মমতা। মামলার শুনানি এখনও হয়নি। মমতার যুক্তি, নির্বাচনী গণনায় কারচুপির প্রমাণ না থাকলে তাে মামলা গৃহীতই হত না হাইকোর্টে।

তবে এইসব বিতরে পরেও ভােটের ফলাফল ঘােষণার পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাননি বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমি বলছিলাম অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী তােক। আমি নেপথ্যে থেকে সবটা করে দেব। একথাও বলেছিলাম, সবার জন্য এক ব্যক্তি, এক পদ। আর আমার জন্য চেয়ারম্যানও থাকতে হবে, আবার মুখ্যমন্ত্রীও হতে হবে। এই বিভেদ কেন? কিন্তু আমার কোনও কথা ওরা শােনেনি।

মমতা এদিন পরিহাসের সুরে বলেন, এখন এসব কথা বক্সিদাকে বললে, উনি ঝগড়া করবেন। এদিন ভবানীপুরের আসনটি তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিধায়ক শােভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল যে একটা পরিবারের মতাে, সেকথাই বােঝাতে চান।

মমতা এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তােপ দেগে বলেন, ভােট এলেই এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হয়। এখন আমাদের যাকে খুশি ডাকছে ইডি, সিকিই। অভিষেক, পার্থদা, সুব্রতদা সকলকে ডাকা হচ্ছে। অভিষেককে বুধবার ফের তলব প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ন’ঘন্টা জেরার পরে ফের ডাকা হল।

মমতা এদিন বিজেপি’র প্রতিহিংসামুলক ভূমিকার প্রসঙ্গে বলেন, মুলায়ম সিং, শরদ পাওয়ারকেও এজেন্সি দিয়ে জব্দ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কাউকেই ওৱা জব্দ করতে পারেনি পুজোর অনুদান প্রসঙ্গে বিজেপির তােলা অভিযােগ নিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে মমতা বলেন, পুজোর বৈঠকে গিয়েছিলাম বলে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করেছে নির্বাচন কমিশনে। পুজো করলে বলবে নিয়ম ভাঙছি।

আবার নির্বাচন এলে বলবে, ভােট করতে দিচ্ছে। মমতা এদিন জানান, কোভ্যাক্সিন টিকা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছাড়পত্র না পাওয়ায় তিনি রােমে যেতে পারছে না। দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিন টিকার গ্রহণযােগ্যতা নেই বিশ্বে।

মমতা প্রশ্ন তােলেন, তাহলে কোভ্যাক্সিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে আমেরিকা যাচ্ছেন? মমতা দাবি করেন, সমস্ত ভ্যাকসিনকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র দেওয়া উচিত। আর এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত ভারত সরকারের।

তবে এদিন কর্মীসভার শেষে বিধায়ক মদন মিত্রকে নিয়ে মজাও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, মদন খুব সাজুগুজু করতে ভালােবাসে। খুবই কালারফুল সাজপোশাক করে। তবে বেশি কালারফুল হলে আবার মুশকিল আছে।