ফের বাইরের রাজ্যে বাঙালি হেনস্তার খবর মিলল। বাংলায় ফিরে রহস্যমৃত্যু মু্র্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকের। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে দেহ। পরিবার জানিয়েছে, তামিলনাড়ুতে কাজ করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন মৃত শ্রমিক-সহ বেশ কয়েকজন। টাকা ধার করে কোনও রকমে বাড়ি ফিরেছিলেন। সেই টাকা শোধ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন ওই শ্রমিক। ঘটনার তদন্ত করছে ভগবানগোলা থানার পুলিশ। পরিবারের সদস্য ও ফিরে আসা সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শ্রমিক তামিলনাড়ুতে কাজ করতে গিয়েছিলেন ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত রামকান্তপুর এলাকা থেকে প্রায় ১৩ জন শ্রমিক। তাঁদেরই একজন বছর চব্বিশের ওয়াহিদ শেখ। সম্প্রতি ভিনরাজ্যে তাঁরা আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। আহত শ্রমিক খায়রুল ইসলাম জানান, ‘১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আমরা ঘরে ছিলাম। মুর্শিদাবাদ জেলার ১৩ জন শ্রমিক। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আচমকা গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাই। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি একটা চারচাকা গাড়ি ও বাস থেকে ৩০-৩৫ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের রুমের দিকে ছুটে আসছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যাই। তারপর আমাদের রুমে এসে আমাদের উপর তাঁরা চড়াও হয়। লাঠি দিয়ে আমাদের মারতে থাকে। আমরা প্রাণের ভয়ে যে যেদিকে পেরেছি ছুটে পালিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাই। আমি কাদা পেরিয়ে জঙ্গলের ভিতর গিয়ে কোনও রকম প্রাণ বাঁচাই। সকাল হতেই তিরুভাল্লুর পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করি সাহায্যের জন্য। কিন্তু ফোন বেজে যায়, কেউ রিসিভ করেনি। বাধ্য হয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে আমাদের উপর হামলার কথা জানাই। কী কারণে আমাদের উপর এই হামলা হল বুঝতে পারছি না।’
Advertisement
এরই দলে ছিলেন ওয়াহিদ। ঘটনার পর আতঙ্কিতগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এরপর একজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে ট্রেনের টিকিট কাটেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরেন, এরপর ১৯ তারিখ নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয় ওয়াহিদের। বাংলার শ্রমিকদের উপর হেনস্তার অভিযোগে তামিলনাড়ুর পেনালুরপেট থানার পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর।
Advertisement
ঘটনার বিবরণ দিয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজপ্রীত সিং বলেন, ‘কোনও কারণে তামিলনাড়ুর কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার ১৩জন শ্রমিকের ঝামেলা হয়। ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুর্শিদাবাদের তিন শ্রমিক। বিষয়টি জানার পর দ্রুত তামিলনাড়ুর পেনালুরপেট থানায় যোগাযোগ করি। শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে।’ জানা গিয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পেনালুরপেট থানার পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার। পেনালুরপেট থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। কী কারণে বাংলার শ্রমিকদের উপর এই হামলা, তা তদন্ত করে দেখছে তামিলনাড়ুর পুলিশ।
Advertisement



