বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ

কেরল, পাঞ্জাব, রাজস্থানের পর সােমবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতে পাশ হয়ে গেল সংশােধিত নাগরিক আইন (সিএএ) বিরােধী প্রস্তাব।

Written by SNS Kolkata | January 28, 2020 1:16 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (File Photo: IANS)

কেরল, পাঞ্জাব, রাজস্থানের পর সােমবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতে পাশ হয়ে গেল সংশােধিত নাগরিক আইন (সিএএ) বিরােধী প্রস্তাব। যদিও শাসক দলের উদ্যোগী হতে দেরি হওয়ার কারণে এই প্রস্তাব পাশের ক্ষেত্রে এই রাজ্য প্রথম থেকে চতুর্থ স্থানে পিছিয়ে গেল বলে অনুযােগ করে বাম-কংগ্রেস।

বিরােধীদের সমালােচনা উত্তরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম-কংগ্রেসকে ফের এক হয়ে সিএএ নিয়ে আন্দোলনের আহ্বান জানান। বলেন, আপনাদের বন্ধু মনে করি বলেই বলছি, সবাইকে বােঝান। মানুষের কাছে যান। আমাদের এখন ঝগড়া বিবাদ করার সময় নয়। আমাদের মধ্যে আদর্শগত সংঘাত থাকতে পারে, কিন্তু মানবিকতার স্বার্থে আমাদের একজোট হতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, সরকারে থেকে কেন্দ্রের বিরােধী সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন কাজ। এনপিআর নিয়ে কেন্দ্রের বৈঠকে আমি একাই যাইনি। এটাও ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। আমি ভাবতেই পারতাম এজন্য ওরা (বিজেপি) আমাদের ঘর ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু আমি ওসবের কেয়ার করি না।

সােমবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকাই হয়েছিল এই সিএএ বিরােধী প্রস্তাব পাশ করার জন্য। বাম কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েই এদিন প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। তবে এই প্রস্তাবে বাম-কংগ্রেসের তরফে দেওয়া সংশােধনীকে গ্রহণ করা হয়নি। তাছাড়া এই প্রস্তাব নিয়ে আলােচনায় বাম বিশ্বায়ক আলি ইমরান রামজ, সুজন চক্রবর্তী, আরএসপি’র বিশ্বনাথ চৌধুরী সকলেই বিধানসভার গত অধিবেশনে এই প্রস্তাব না আনার জন্য সমালােচনা করেন শাসক দলকে।

কংগ্রেসের তরফে মইনুল হক এবং আবদুল মান্নানও তৃণমূলের এই ‘বিলম্বিত বােধােদয়’ কটাক্ষ করেন। এমনকী নরেন্দ্র মােদির সাম্প্রতিক কলকাতা সফরে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক নিয়েও বেঁধেন মমতাকে। এনপিআর-এর প্রক্রিয়া চালু করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি কেন দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নও ওঠে।

এইসব সমালােচনার উত্তরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আপনাদের সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, ঘরে আগুন লাগলে সবাইকে আগে ঘরটাই সামলাতে হয়। বাম কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তােপ দেগে মমতা বলেন, আপনারা অনেক সময় বলে থাকেন, দিদি মােদি এক। এটা মনে রাখবেন, এটা ঠিক নয়। আপনাদের স্লোগান আপনাদেরই কাছে ব্যুমেরাং হয়ে যাবে। তৃণমূলের ভােট বিজেপিতে যায়নি। বাম-কংগ্রেসের ভােটই বিজেপিতে গিয়েছে। আমি বলেছিলাম সবাই মিলে একসঙ্গে আন্দোলন করতে। আপনারা তা করেননি, ঘােলা জলে মাছ ধরতে চেয়েছেন। আর দেশের মধ্যে আমরাই প্রথম রাজ্য যেখানে (৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯) এনআরসি’র বিরােধিতা করে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করানাে হয়েছে।

মমতা বলেন, জনগণনা এবং এনপিআর-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেটা জানতে পেরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এনপিআর স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অসমে, লখনউতে যখন এনআরসি নিয়ে আন্দোলন হল, তখন তৃণমূলের পক্ষ থেকেই প্রতিনিধি পাঠানাে হয়েছে। যদিও তাদের বিমানবন্দরে নামতে দেওয়া হয়নি। কর্ণাটকে যখন সিএএ আন্দোলনে কয়েকজনের মৃত্যু হল, প্রথমে সেখানকার সরকার ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও পরে পিছিয়ে আসে। আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতা অনুযায়ী, ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাঠাই।

এদিন সিএএ নিয়ে মমতা একদিকে তৃণমূলের বিরােধী ভাবমূর্তি স্পষ্ট করেন। অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেন। মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। কিন্তু আইনে কোথাও তার উল্লেখ নেই। সেই কারণেই বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

মমতার কথায়, এনপিআর, এনআরসি, সিএএ সবটাই এক সুত্রে বাঁধা। এই এনপিআর-এ মা বাবার জন্মস্থান, মৃত্যুর সাল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও সেটা দেওয়া ঐচ্ছিক নয় বলা হয়েছে, কিন্তু আমার আশংকা, এইসব তথ্য যারা দিতে পারবে না, তাদেরকে প্রথমেই বাদের তালিকায় রাখা হবে।

সিএএ ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই সিএএ বিজেপির কুটচাল। ওদের নির্বাচনী ইস্তেহারে এটা ছিল। সেজন্য ওরা ধাপে ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে। ভারতের সংবিধানকে ব্যবহার করে বিদ্বেষী ধর্মান্ধতার মাধ্যমে দেশকে টুকরাে টুকরাে করতে চাইছে। কাশ্মীরে ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা প্রমুখ জননেতাদের বন্দি করে রাখার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান।

মমতা বলেন, বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী নিয়ে আমাদের এই রাজ্যকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু সীমান্তের দায়িত্বে তাে কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীই রয়েছে। মমতা এদিন স্পষ্ট দাবি তােলেন, সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে হবে। ডাউটফুল সিটিজেন নাম দিয়ে কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানাে যাবে না। দেশে যাঁরা ভােট দিয়ে সরকারকে ক্ষমতায় এনেছেন তাদেরকে বেনাগরিক করে দেওয়া চলবে না। সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরােধিতায় এদিন বাম কংগ্রেসকে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ের জন্য আবেদন জানান।