বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির ছাদে গিয়ে গায়ে আগুন দেন উত্তর ২৪ পরগণার ব্যারাকপুর পুরসভার ৮ নম্বর ব্লকের এক বধূ। তাঁর বাপের বাড়ি বাংলাদেশে এবং শ্বশুরবাড়ি ভারতে। জানা গিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাংলাদেশে নিজের বাপের বাড়ি যেতে চাইছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং মহিলাকে বর্তমান উত্তাল পরিস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে যেতে বারণ করেন। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মহিলার স্বামী, ভাসুর এবং শ্বশুরকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে মৃতা বধূর নাম কাকলি সরকার এবং তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর। ১৫ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয় সবুজ সরকারের সঙ্গে। তিনি দুই নাবালক সন্তানের মা। কাকলির শাশুড়ি শিবাণী সরকার জানিয়েছেন বর্তমান অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর বউমাকে বাংলাদেশ যেতে বারণ করেছিলেন। জানা গিয়েছে ছাদে গিয়ে গায়ে আগুন দেওয়ার আগে তিনি একটি বড় চিঠি লিখে গিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন যে তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন।
Advertisement
স্থানীয় সূত্রে খবর, পনেরো বছর আগে বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ থেকে সবুজ সরকারের সঙ্গে বিয়ে করে ভারতে আসেন কাকলি। গত ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু হয় এবং তারপর থেকে গোটা পরিবারটি আতঙ্কে ছিল।অন্য দিকে, বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁকে বাংলাদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য সবুজকে বলছিলেন কাকলি। কিন্তু সবুজ বলেছিলেন, এসআইআরের ঝামেলা মিটলে স্ত্রীকে বাংলাদেশে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সে কথা মানতে চাননি কাকলি। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেন।
Advertisement
কাকলির শাশুড়ি বলেছেন, ‘কাল রাত ৮টা নাগাদ কাকলি ছাদে গিয়ে আগুন ধরিয়েছে নিজের গায়ে। কাকলি বাংলাদেশে ওঁর বাপের বাড়িতে যেতে চেয়েছিল। বাবার অসুখ। দেখতে চেয়েছিল তাঁকে। আমরা বারণ করিনি । কিন্তু এই গণ্ডগোলের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে না করেছিলাম। তার পর থেকে বলে যাচ্ছিল যে ওঁর ভাল লাগছে না। বাংলাদেশ যেতে চায়। আত্মহত্যার আগে একটা চিঠি লিখে গিয়েছে।কাউকে দায়ী করেনি।’ পুলিশ সূত্রে খবর, বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাকলির স্বামী সবুজ সরকার, শ্বশুর সুরেশ সরকার এবং ভাসুর শান্তি সরকারকে পুলিশ আটক করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণার পর আতঙ্কিত হয়ে দু’জন রাজ্যবাসী আত্মহত্যা করেছেন। এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের জেরে উত্তর ২৪ পরগনার প্রদীপ সরকারের পর বীরভূম জেলার ইলামবাজারের বাসিন্দা ক্ষিতীশ মজুমদার আত্মঘাতী হয়েছেন। মমতার দাবি, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা খাইরুল শেখের আত্মহত্যার পেছনেও রয়েছে এসআইআর-আতঙ্ক।
বৃহস্পতিবার তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘প্রত্যেক নাগরিককে বলছি, বিশ্বাস হারাবেন না। কোনও চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না। রাজ্য সরকার আপনাদের পাশে আছে বাংলায় আমরা এনআরসি হতে দেব না। সামনের বা পিছনের, কোনো দরজা দিয়েই নয়। কোনও বৈধ নাগরিককেও আমরা ‘বহিরাগত’ বলে দাগিয়ে দেব না। আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মানুষের অধিকারের জন্য লড়ব। বিজেপি এবং তার জোটসঙ্গীদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেব না।‘ অন্যদিকে বিজেপি দাবি করেছে, এসআইআর হলে কখনই কোনও বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না। তারা অভিযোগ তুলেছে যে তৃণমূল অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মানুষের মনে।
Advertisement



