ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত শিল্পী ওস্তাদ রশিদ খান

কলকাতা, ৯ জানুয়ারি – ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত হলেন শিল্পী ওস্তাদ রশিদ খান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। ২১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয় রশিদ খানের। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ২২ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে । গত কয়েক বছর ধরেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসায় ভাল সাড়া দিচ্ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর স্ট্রোক হয়। তারপর থেকেই অবস্থার অবনতি শুরু। মঙ্গলবার ভোর রাতে শিল্পীকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্রের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল।  এছাড়া মেডিসিন ও ক্যান্সার বিভাগের এক চিকিৎসক দলের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিট নাগাদ প্রয়াত হন। তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্র বর্তমান।
 
শিল্পী রাশিদ খানের অবস্থার অবনতি হয়েছে এই খবর শুনে হাসপাতালে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ কমিশনার বিনীত গয়াল। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের যদি কিছু বলার থাকে বলুন, তার পর আমি বলব। রশিদের ছেলে রয়েছেন এখানে। ও ভাল গান করে।’’

এর পরেই রশিদের চিকিৎসক বলেন, ‘‘এত দিন হাসপাতালে থাকায় তাঁর সংক্রমণ হয়েছিল। ওঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠাতে হয়। ওঁকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।’’ চিকিৎসকেরা রশিদের মৃত্যু সংবাদ জানানোর পর মমতা বলেন, ‘‘রশিদ আমার ভাইয়ের মতো। গঙ্গাসাগর থেকে জয়নগরে যাওয়ার পর ফোন এসেছিল। নবান্নে ফেরার পর খবর আসে। ছুটে আসি।”

মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে রশিদের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে পিসওয়ার্ল্ডে। সেখানেই দেহ রাখা হবে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হবে দেহ। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁর অনুরাগীরা। এর পর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার হবে শিল্পীর দেহ। সেখানে আচার পালনের পর কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে টালিগঞ্জ কবরস্থানে। সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। 

১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশে জন্ম রাশিদের। তিনি রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন রশিদের দাদু। রশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহিবের থেকেও তালিম নিয়েছেন রশিদ। মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন বা বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন শিল্পী। তালিকায় রয়েছে ‘জব উই মেট’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘মিতিন মাসি’-র মতো ছবি। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ সম্মান যেমন পেয়েছেন, তেমন বাংলা থেকেও পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ সম্মান।