বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ জন বেড়ে হল ১৫। গত চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ জন। মঙ্গলবার কোনও আক্রান্তের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার খবর নেই। মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা অ্যাক্টিভ রোগির সংখ্যা ২৭৪ জন। এ পর্যন্ত রাজ্যে ৪১৮২’টি স্যাম্পেল টেস্ট হয়েছে। মঙ্গলবার নবান্নে এই পরিসংখ্যান দেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।
এই মুহুর্তে কলকাতা, হাওড়া, দুই চব্বিশ পরগণায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই জেলাগুলি রেড জোনে রয়েছে। সংক্রমণের খবর আসছে নদীয়া, হুগলি পশ্চিম বর্ধমান থেকেও। পূর্ব মেদিনীপুর প্রথমে রেড থেকে অরেঞ্জ জোনে গিয়েছিল। কিন্তু গত ১৯ এপ্রিল সেখানে আবার একটি করোনা পজেটিভ ধরা পড়ায় এই জেলা ফের রেড জোনে চলে গিয়েছে।
এখন পর্যন্ত রাজ্যের দশটি জেলা অরেঞ্জ জোনে এবং নয়টি জেলা গ্রিন জোনের অন্তর্ভুক্ত বলে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান।
Advertisement
মুখ্যসচিব বলেন, রাজ্যে ইতিমধ্যেই ২২০’টি র্যাপিড টেস্ট হয়েছে। আগামী দিনে এই র্যাপিড টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়বে। মঙ্গলবার করোনা টেস্টের জন্য আইসিএমআর-এর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে আর জি কর এবং রাজারহাটের সি এন সি আই। মালদহ জেলায় করোনা টেস্ট-এ যে ৭৪ জনের স্যাম্পেল পাঠানো হয়েছিল, তাদের সকলেরই করোনা নেগেটিভ এসেছে।
Advertisement
মুখ্যসচিবের মতে, সামগ্রিক চিত্র বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে রাজ্য সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী। এদিন তিনি নাইসেডের নমুনা কিট ত্রুটিযুক্ত বলে দাবি করেন। কাদের কোভিড পরীক্ষা করা হবে, তা নিয়ে আইসিএমআর-এর নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশিকা মেনেই স্যাম্পেল টেস্ট করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন মুখ্যসচিব।
এছাড়া লকডাউন পালনের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার যথেষ্ট কঠোর দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান তিনি। নিজের যুক্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি জানান, এ পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন অমান্যকারীদের মধ্যে ২৮ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। ৩ হাজার গাড়ি সিজ করা হয়েছে। ৩১০০ এফআইআর করা হয়েছে। যা বোঝাচ্ছে লকডাউন বাধ্যতামূলক করতে রাজ্য সরকার যথেষ্ট তৎপর।
মুখ্যসচিব এদিন জানান, যে সমস্ত এলাকা কনটেইনমেন্ট বা হটস্পট এলাকার মধ্যে পড়ছে, সেখানে কোনও শিল্পসংস্থা বা উদ্যোগপতিকে কাজের অনুমতি দেওয়া হবে না। করোনা মোকাবিলায় তৈরি বিশ্ব উপদেষ্টা পরিষদ ইতিমধ্যেই দু’টি বৈঠক করেছে। আগামী শুক্রবার তাদের পরামর্শ সম্পর্কে জানা যাবে। এপর্যন্ত কলকাতা ও হাওড়ায় ৭৮ জনের র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুই জনের আক্রান্তের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা সে জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে আরও নিশ্চিত হতে চাইছেন স্বাস্থকর্তারা।
স্পর্শকাতর এলাকায় যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ রয়েছে, এই পরীক্ষা শুধু তাদের জন্যই করা হয়। উপসর্গ শুরুর সাত দিন পর এই পরীক্ষা সম্ভব। বেলগাছিয়া অঞ্চলে দুই জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক আরও পরীক্ষা করাতে উদ্যোগী।
এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যাদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাদের বাড়ির চারপাশের বাসিন্দাদেরও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকার কিছু জায়গা সিল করে দেওয়া হয়েছে।
খুব প্রয়োজন ছাড়া তাদের এলাকার বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। নির্দেশ অমান্য করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পুলিশ ও পুরসভা নাগরিকদের সাহায্য করছে। আইএমএর সভাপতি শান্তনু সেন জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে একজন পুরুষ অন্যজন মহিলা।
গত সোমবার হাওড়ায় ৬৪ এবং কলকাতায় ১৪ জনের র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। সংক্রামিত এলাকায় সর্দি, জ্বর, কাশির উপসর্গ দেখা দিলে র্যাপিড টেস্ট করানোর অনুরোধ করা হচ্ছে মাইকে প্রচারের মাধ্যমে। এলাকায় একটি স্কুলে র্যাপিড পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংক্রামিতদের দু’জনকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।
Advertisement



