নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সচেতনতার প্রচার পৌঁছায়নি সাধারণ মানুষের দোরগােড়া অবধি। আর এই অসচেতনতার জন্যই কি কার্যত আদালতের রায় ধুলিসাৎ করে শনিবার ছটপুজো হলাে রবীন্দ্র সরােবরে? উঠছে প্রশ্ন।
১৪ অক্টোবর, রবীন্দ্র সরােবরে ছট পুজোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পরিবেশ আদালত। প্রত্যেক বছর ছট পুজোর সময় রবীন্দ্র সরােবরকে দূষণমুক্ত করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, পুজোর পরে প্রায় প্রত্যেক বছর রবীন্দ্র সরােবরে দূষণ বাড়ে। এই বছর কোনওভাবেই যাতে রবীন্দ্র সরােবরে ছট পূজা না হয়, আদালতের তরফে সেদিকে কড়া নজরদারি চালানাের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের মুখ্য সচিবকে।
Advertisement
এরপর রবীন্দ্র সরােবরে ছট পূজা বন্ধ করার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছিল কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ। এমনকি সরােবর বন্ধ থাকবে, এই নােটিশও ঝােলানাে হয়েছিল পুরসভার তরফে। কিন্তু এত আয়ােজন, বৃথা গিয়েছে সবই। শনিবার তালা ভেঙে রবীন্দ্র সরােবরে ছট পুজো করতে প্রবেশ করলেন বহু মানুষ। কলার কাদি, ফুল সহ যাবতীয় পুজোর সামগ্রী নিয়েই ঢুকলেন তারা। সেই সময় সরােবরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার কোনও কর্মী বা গেটে মােতায়েন থাকা পুলিশ কাউকেই দেখা যায়নি।
Advertisement
সরােবরে পুজো শুরুর ঠিক কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন পুলিশকর্মীকে দেখা গেলেও ভিড় আটকাতে কার্যত ব্যর্থ হয় তারা। শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞাকে বুড়াে আঙুল দেখিয়ে রবীন্দ্র সরােবরেই শনিবার ছটপুজো করেন বহু মানুষ। তাদের বেশিরভাগেরই দাবি, প্রত্যেক বছর রবীন্দ্র সরােবরে ছট পুজো করে থাকেন তারা। তাই এই বছরও এসেছেন। আদালতের রায় প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য, পুজোর পর ঘাট পরিষ্কার করবেন তারা নিজেরাই।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। প্রথমত, কেন রবীন্দ্র সরােবরে যারা পুজো করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না? দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্র সরােবরে কি সেই সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল? তৃতীয়ত, সরােবরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা রং ক্যামেরা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রথমে যখন তালা ভাঙা শুরু হল তখনই কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না?
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেছেন, এই ঘটনার দায় কিছুটা পরিবেশ কর্মীদের ওপরেও বর্তায়। এই মুহূর্তে সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় রবীন্দ্র সরােবরের গুরুত্ব ঠিক কতটা এবং ছট পুজোর দরুন যে পরিমাণ দূষণ হয় তাতে কি কি ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষকে পর্যাপ্ত সচেতন করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি পুরাে ঘটনাটিকে ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’ বলে আখ্যায়িত করেন এই পরিবেশবিদ। সুভাষবাবুর কথায়, শনিবার পরিবেশ আদালতের রায় অবমাননা করে রবীন্দ্র সরােবরে ছট পুজো হওয়ার ঘটনাটি একটি অশুভ লক্ষণ। ভােটবাক্সের প্রতিযােগিতার কথা চিন্তা করেই সেভাবে কোনও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে রবীন্দ্র সরােবরে ছট পুজো অনুষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ জানান, রবীন্দ্র সরােবরের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করেনি রাজ্য প্রশাসন। তাই সাধারণ মানুষ ছট পুজো করার জন্য তালা ভেঙে সরােবরে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও রবীন্দ্র সরােবরে ছট পুজোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর বিকল্প হিসাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অস্থায়ী জলাশয় তৈরি করা হয়েছিল কলকাতা পুরসভা এবং কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে।
প্রশাসনের তরফে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হলেও রবীন্দ্র সরােবরের তালা কেন ভাঙা হল, এখন প্রশ্ন তা নিয়েই। এই বিষয়ে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। যে কারণে এই নিয়ে আলাদা করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানান, রবীন্দ্র সরােবরে ঠিক কি হয়েছে তা তার জানা নেই। তবে শহরের অন্যান্য ঘাটগুলি পরিষ্কারের জন্য পর্যাপ্ত পুরকর্মী বিভিন্ন ঘাটগুলিতে মােতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Advertisement



