• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বাঙালির আবেগে মহালয়ার ‘মহাতর্পণ’

বুধবার বাবুঘাট সংলগ্ন এলাকায় মহালয়ার তর্পণ সারছেন মানুষজন

আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে আজ মাতৃপক্ষ শুরু। ভোরবেলা আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সৌজন্যে মহালয়া বাঙালির মনে দুর্গাপুজোর আহ্বায়ক হলেও আসলে এর সঙ্গে দুর্গাপুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানোর তিথি এটি। ভাদ্র পূর্ণিমার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে পরবর্তী অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত সময়টা ‘পিতৃপক্ষ’ নামে পরিচিত। হিন্দুমতে পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়।

মহাভারত অনুযায়ী, দাতা কর্ণের আত্মা পরলোক গমন করলে তাঁকে সেখানে শুধুমাত্র সোনা এবং ধনরত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। কর্ণ অবাক হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে কারণ জিজ্ঞেস করলে ইন্দ্র জানান, কর্ণ সারাজীবন সোনাদানা, ধনরত্নই দান করে এসেছেন। কিন্তু প্রয়াত পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কখনও খাদ্য বা পানীয় দান করেননি। তাই কর্ণের জন্যে এমন খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তখন কর্ণ জানান, যেহেতু নিজের পিতৃপুরুষ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না, তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই পিতৃগণের উদ্দেশ্যে খাদ্য দান করেননি। এরপর ইন্দ্রের পরামর্শে কর্ণ তাঁর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে এক পক্ষকালের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্নদান করেন। এর ফলে কর্ণের পাপস্খলন হয়। যে পক্ষকালে কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দান করেন সেই পক্ষটিই ‘পিতৃপক্ষ’ নামে পরিচিত।

Advertisement

মহালয়ার এই পুণ্যলগ্নে গঙ্গার ঘাটে-ঘাটে অসংখ্য মানুষকে দেখা যায় তর্পণ করতে। প্রতি বছরের মতো এবারেও শহরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য গঙ্গাঘাট বাবুঘাটের চিত্রটা জানান দিচ্ছে যে মহালয়া ইতিমধ্যেই বাঙালির দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে বাবুঘাট সংলগ্ন এলাকায়। পিতৃপুরুষদের তৃপ্ত করতে তর্পণের মাধ্যমে আজ তিল, জল দান করবেন অনুজরা। আর তাঁদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য চলবে উল্কাদানও। ব্রাহ্মণের কণ্ঠে উচ্চস্বরে উচ্চারিত হবে মন্ত্র।

Advertisement

এবছরে বাবুঘাটের তর্পণের চিত্র নিয়ে এক পুরোহিত বলেন, ‘রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিতে নদীর জলস্তর বেড়েছে অনেকটা। তাই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করছেন তাঁরা। মানুষের ভিড় প্রতিবারের মতো এবারেও চোখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। তবে আরজি কর কাণ্ডের জেরে সত্যিই মন ভালো নেই শহরের। তাই খানিকটা হলেও লোকসমাগমে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবছর।’

অন্যদিকে তর্পণ করতে শহরে আসা পিতৃহারা বিশ্বম্বর চক্রবর্তী বলেন, ‘কয়েক বছর আগেই আমাদের বাবা ইহলোক ত্যাগ করেছেন। বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন সাধ্যমত সেবা করেছি। তিনি পরলোক গমন করলেও আমি মনে করি, তাঁর প্রতি আমাদের কর্তব্য এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বাবার ঋণ আমৃত্যুকাল অবধি এভাবেই চুকিয়ে যাব।’

বিশ্বম্বর বাবুর আরও সংযোজন, ‘জগৎজননী মা দুর্গা আসছেন। আজ মাতৃপক্ষের প্রাক্কালে মায়ের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন সকলকে ভালো রাখেন।’ স্পষ্টতই, এই রীতি শুধুমাত্র আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই আটকে নেই। বাঙালির আবেগ ও জীবনযাপনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মহালয়ার এই ‘মহাতর্পণ।’ আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র আজও বাঙালির জনপ্রিয়তম অনুষ্ঠানগুলির অন্যতম।

Advertisement