• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

অসমে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, বাদ ১৯ লক্ষ নাগরিক

সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়েই প্রকাশিত হল অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র চুড়ান্ত তালিকা। এনআরসির জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ১৯ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ।

এনআরসি তালিকায় নিজের নাম তলার জন্য নাগরিকদের ভিড়। (File Photo: IANS)

সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়েই প্রকাশিত হল অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র চুড়ান্ত তালিকা। এনআরসির জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ১৯ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ। নতুন করে তালিকায় নাম তােলার জন্য ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৬১টি আবেদন জমা পড়েছিল। তাদের মধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে ৩ কোটি ১১ লক্ষ ২১ হাজার ৪ জন। বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম বলে এনআরসি’র রাজ্য কো অর্ডিনেটর অফিস জানিয়েছে। খসড়া তালিকায় সংখ্যাটা ছিল ৪১ লক্ষ।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায়। নিজেদের নাম থাকবে কি না, সে নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছিল অসমবাসীর। অনেকে গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কায় মৃত্যু পর্যন্ত বেছে নেন। তবে আজ চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর তালিকা থেকে বাদ যাওয়া মানুষের জন্য শেষ আশার আলাে জ্বালিয়ে রাখল রাজ্য সরকার। কোনও কারণবশত তালিকা থেকে কারাের নাম বাদ গেলে ওই সব নাগরিকদের ১২০ দিনের মধ্যে ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল’-এ আবেদন করতে পারবেন বলে সরকার জানিয়েছে।

Advertisement

এই সময়সীমা আগে ছিল ৬০ দিন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গােটা রাজ্য জুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তােলার জন্য। ইতিমধ্যেই ১০০টি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল খােলা হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে আরও জানান হয়েছে, কোনও আবেদনকারী যদি ট্রাইব্যুনালে মামলায় হেরে যান তাহলে তিনি হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোটে যেতে পারেন।

Advertisement

শনিবার সকাল থেকেই অসম জুড়ে ছিল আতঙ্কের ছায়া। সময় যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে ভিটেছাড়ার আতঙ্ক। তালিকায় নাম থাকবে কি না, সেই প্রশ্নই তাড়া করে বেড়িয়েছে অসমবাসীকে। সকাল ১০টা ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন (এনআরসি)-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। রাজ্য এনআরসি দফতর থেকে জানান হয়, নাগরিকরা এনআরসি তালিকা দেখতে পাবেন এনআরসি সেবা কেন্দ্র, ডেপুটি কমিশনারের অফিস এবং অফিস চলাকালীন সার্কেল অফিসারের দফতরে। এছাড়া http:\www.nrcassam.nic.in এই ওয়েবসাইটেও দেখতে পাবেন নাগরিকরা। সকাল থেকেই এনআরসি দফতরে ভিড় ছিল চোথে পড়ার মতাে। এদের মধ্যে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে, আবার অনেকে বিষগ্নমুখে ঘরে ফিরেছেন।

এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরােধী দল কংগ্রেস এবং অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলদইয়ের বিজেপি সাংসদ রমেশ ডেকা জানিয়েছেন, আমরা খুশি নই। বৃহৎ সংখ্যক বাংলাদেশী মুসলিম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেখানে প্রকৃত ভারতবাসী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। গােটা বিষয়টি সুপ্রিম কোটের পর্যবেক্ষণে হলেও প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

বরপেটার কংগ্রেস সাংসদ আব্দুল খালিক জানিয়েছেন, ‘পুরােপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। অনেক বৈধ নাগরিকের নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে’। অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (আসু) তরফ থেকে জানান হয়েছে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে তাদের ক্ষোভ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছে আসু।

অসমের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এনআরসি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাতিল করার ক্ষেত্রে এই তালিকা কতটা সহযােগী হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে’। শর্মা আরও জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ লাগােয়া জেলা দক্ষিণ সালমারা ও ধুবুরিতে তালিকা থেকে বাদ পড়ার হার সর্বনিম্ন। অথচ ভূমিপুত্র জেলার প্রচুর মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এটা কী ভাবে সম্ভব? আমরা এই তালিকায় ভরসা রাখছি না’।

এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় রাজ্য জুড়ে ৬০ হাজার পুলিশ মােতায়েন করা হয়েছিল। ২ হাজার আধাসেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। অসম পুলিশের তরফ থেকে টুইটে জানান হয় যে সব ব্যক্তিদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ভারতীয় নাগরিকদের আইনি সহায়তা দেবে। অসম সরকার-সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারি এমনটা জানান। তিনি দাবি করেন, নাগরিক পঞ্জির চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে প্রচুর সংখ্যক প্রকৃত নাগরিকের নাম বাদ পড়ে গেছে। তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই, তারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন। জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ৩,৩০,২৭,৬৬১ আবেদনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চুড়ান্ত তালিকায়। ৩,১১,২১,০০৪ নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চুড়ান্ত তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদের আইনি সহায়ত দেওয়া হবে। কোনও ধরণের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা না করে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন’। তাঁর কথায়, যদি সত্যিই কোনও প্রকৃত ভারতীয় নাগরিককে চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত না করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার প্রশে সরকার তাদেরকে সহায়তা করবে। পাটোয়ারি বলেন, লক্ষণীয়, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ১০০ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ করে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালগুলি সােমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। যারা বাদ পড়েছেন, তারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন।

অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এদিন জানিয়েছেন যে, তিনি এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। যে প্রক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হয়েছে, সেটি ঠিক তাে নয়ই, তাতে বাদ পড়েছে অনেক ভারতীয় নাগরিকও। অপরদিকে, বহু এমন মানুষের নাম নাগরিক পঞ্জিতে আছে, যারা আদৌ ভারতীয় নাগরিক নন। আমরা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে তাড়ানাের জন্য অন্য পস্থা ভাবছি। এই নিয়ে আমার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে।

সরকারের নিস্ক্রিয়তার কারণে বেশিরভাগ নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ার মূল কারণ বলে অভিযােগ করা হলে অসম প্রশাসনের মুখপাত্র পাটোয়ারি বলেন, ‘শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পুরাে প্রক্রিয়ায় ভৌগলিক তথ্য সরবরাহ (অঞ্চল ভিত্তিক ও এলাকা ভিত্তিক কে কোথায় বসবাস করেন) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করেছি। অতিরিক্ত কোনও ভূমিকা ছিল না। নাগরিক পঞ্জি প্রস্তুত করার প্রশ্নে সরকার নিযুক্ত কো-অর্ডিনেটরও সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে রিপাের্ট করতেন। তিনি কোনও তথ্য আমাদেরকে জানাতেন না’।

জাতীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়ায় ৪১ লাখ নাগরিককে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তারপর যারা প্রয়ােজনীয় তথ্য জমা করে আবেদন করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখার পর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Advertisement