• facebook
  • twitter
Tuesday, 16 December, 2025

জীবনে ছন্দ ফিরিয়ে আনতে হাত ধরুন

পিয়ালী হাজরা পড়াশুনোর চাপ, অফিসের কাজ, বাডি়র দায়িত্ব সামলানো এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি নিয়ে বেঁচে থাকা  এখন প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রবলভাবে সত্যি৷ আট হোক কিংবা আশি, মানসিক উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, মনের চাপ সব বয়সের মানুষের নিত্যসঙ্গী৷ পড়ার চাপ, কাজের চাপ, দায়িত্বভার মনের উপর যেভাবে থাবা বসাচ্ছে , তাতে শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস, উচ্চ

পিয়ালী হাজরা

পড়াশুনোর চাপ, অফিসের কাজ, বাডি়র দায়িত্ব সামলানো এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি নিয়ে বেঁচে থাকা  এখন প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রবলভাবে সত্যি৷ আট হোক কিংবা আশি, মানসিক উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, মনের চাপ সব বয়সের মানুষের নিত্যসঙ্গী৷ পড়ার চাপ, কাজের চাপ, দায়িত্বভার মনের উপর যেভাবে থাবা বসাচ্ছে , তাতে শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথার যন্ত্রণা, অনিদ্রা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া- এমনই নানারকম অসুখ৷  মনের উপর চাপ এবং তা থেকে শরীরে যে সব রোগ বাসা বাঁধছে তা থেকে মুক্তির উপায় কী ৷ চিকিৎসকদের  মতে, কিছু নিয়ম যদি মানুষ মেনে চলে তবে সহজেই টেনশন, স্ট্রেস কাটিয়ে সুস্থ থাকা যায় ৷
লাইফস্টাইল আধুনিক জীবনের একটা খুব পরিচিত শব্দ, যার হাত ধরে মানুষের জীবনে নিঃশব্দে প্রবেশ করছে টেনশন, স্ট্রেস৷ শুধুমাত্র শহুরে জীবন নয়, গ্রামের ক্ষেত্রেও ছবি বদলাচ্ছে অতি দ্রুত৷ কর্মজগত প্রযুক্তিগত ক্ষেত্র, ছোট-বড় ব্যবসায়ী, পড়ুয়া এমনকি গৃহবধুদের মধ্যেও প্রভাব ফেলছে বর্তমান জীবনযাত্রার কালো দিক৷ কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা, ধৈর্যের অভাব, টেনশন থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পেতে মানুষ বেছে নিচ্ছে ধূমপান, মদ্যপানের মতো অভ্যাস৷ ক্ষণে ক্ষণে মুড চেঞ্জ, হিংস্র হয়ে ওঠা, মেজাজ হারানো সবই বর্তমান জীবনযাত্রার ফল যা বাডি়য়ে তুলছে জীবনের ঝুঁকি৷ চিকিতসা বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে, মানুষের জীবনের গড় আয়ুও বেডে়ছে , কিন্ত্ত পাশাপাশি আরও যে জিনিসটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হল, এখন খুব অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের জীবনে আকস্মিকভাবে মৃতু্য ছোবল মারছে৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ৷ অথচ তাদের অতীতের কোন খারাপ মেডিকেল রেকর্ড নেই৷ তাহলে কেন এই মৃতু্য৷ চিকিৎসকেরা এর জন্যও দায়ী করছেন এই লাইফস্টাইলকেই৷ বর্তমান লাইফস্টাইল এডি়য়ে যাওয়ায় এই গতিময়তার যুগে অসম্ভব৷  তার জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা খুব অল্প পরিবারই বজায় রেখে চলতে পারেন৷ অগত্যা ভরসা সেই চিকিৎসকদের কাছে ছোটা৷ কী করলে মুক্তি পাওযা যেতে পারে এই দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের কুপ্রভাব থেকে ?
‘আর্ট অফ লিভিং’ এমনই এক সংস্থা যার ব্যাপ্তি সারা পৃথিবী জুডে়৷ মনের স্থিতি আনতে এই সংস্থা নানা পদ্ধতি, নানা ধাপ অনুসরণ করে থাকে৷ এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বহু চিকিৎসক, যাঁরা এই সংস্থার দ্বারাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৷ তাঁরাই আবার পরবর্তীতে সাহায্য করে থাকেন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে৷ ১৯৮১ সালে আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন শ্রী রবিশঙ্কর, যার মূল লক্ষ্য মানুষের ব্যক্তিগত মানসিক চাপ, সামাজিক সমস্যা দূর করা৷  বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান লাভ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত, পেরু, কলম্বিয়া, এবং প্যারাগুয়ে৷ ২০১৬ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান৷
মূলত নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা পন্থা শেখানো হয় ‘আর্ট অফ লিভিং’-এ ৷ চিকিতসক পার্থসারথি সেনগুপ্ত জানালেন, কোন এক ব্যক্তির নিজের মনকে নিজের বশে রাখার প্রচেষ্টার প্রথম ধাপ শুরু হয় হ্যাপিনেস প্রোগ্রাম দিয়ে৷ এক্ষেত্রে দরকার হয় ‘মেডিটেশন’ যার প্রাথমিক ধাপ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঠিক অভ্যাস৷ এক্ষেত্রে প্রথমেই যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা হল সুদর্শন ক্রিয়া, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দোবদ্ধ এক পদ্ধতি, যা নিয়মিত অভ্যাস করলে নিজের মন প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে৷  কিন্ত্ত তা করতে হবে সঠিক ভাবে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সাহায্য নিয়ে৷
আর্ট অফ লিভিং -এর শাখা ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, দেশ-বিদেশের সীমানা ছাড়িয়ে৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও প্রসারিত এর শাখা-প্রশাখা৷ এ রাজ্যের কলকাতা শিহির থাকা শুরু করে এই সংস্থা ডালপালা মেলেছে প্রত্যন্ত গ্রামেও৷ শিবিরে যোগ দিতে বয়স কোন বাধা নয়৷  শিশুদের জন্য রয়েছে পৃথক শিবির৷ অংশগ্রহণকারীকে মনে মনে একটি সহজ শব্দ ব্যবহার করতে শেখানো হয়, যা মনকে শান্ত, ও অন্তর্মুখী করে তোলে৷ এই বিশেষ অনুশীলনে মন ও স্নায়ুতন্ত্র গভীর মৌনতায় বিশ্রাম পায়৷
নদীর স্থির, স্বচ্ছ জলে প্রতিফলন স্বাভাবিক ভাবেই স্বচ্ছ হয়৷ একইভাবে মন যখন শান্ত থাকে তখন তার প্রকাশও হয় স্বচ্ছ৷ আমাদের নিজেদের প্রকাশ করার, জীবনের পথে চলার ক্ষমতা বাড়ে, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে৷ নিজের মানসিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে মন শক্ত হয়, নিজের কাছে, নিজের পরিবারের কাছে নিজেকে অপরিহার্য্য মনে হয়৷ আর নিজেকে নিজের কাছে, পরিবারের কাছে অপরিহার্য্য করে তুলতে পাশে রয়েছে ‘আর্ট অফ লিভিং’-এর অদম্য চেষ্টা৷

Advertisement

Advertisement

Advertisement