শুধু রামমন্দির দিয়ে এখন আর ভোটে জেতা যাবে না, এই সত্যটা বুঝে গিয়েছে আরএসএস৷ বিজেপি দলের আসল পরিচালক সঙ্ঘ পরিবারের অনুগত ইডি, আয়কর দফতর ও সিবিআই অফিসারদের দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের সন্ত্রস্ত করে দেশজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ এরই ফলশ্রুতিতে গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে৷ স্বাধীনতার পর এই প্রথম একজন কর্মরত মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হল৷ এর আগে ঝাড়খণ্ড সরকার দখল করার উদ্দেশ্যে একইভাবে মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ গ্রেফতারের আগে শিবু সোরেন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন৷ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে দিল্লি ও পাঞ্জাবে ভোটে জিততে চায় মোদির দলবল৷ মামলা সাজানোটা যে নতুন কিছু নয়, তা এতদিনে দেশবাসী জেনে গিয়েছেন৷ ২০২১ সালের আবগারি নীতিতে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগের ইডির তদন্ত এতদিন কচ্ছপ গতিতে এগোলেও ঠিক নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে গতি বাড়িয়ে বিজেপির জয়ের বাধাস্বরূপ বিপজ্জনক বিরোধী নেতাদের ভোট ময়দান থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছেন মোদি৷ ২০২২ সালে এই আবগারি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ওষুধ প্রস্ত্ততকারক অরবিন্দ ফার্মার মালিক শরৎচন্দ্র রেড্ডিকে৷ গ্রেফতারের পাঁচ দিনের মধ্যে রেড্ডি বন্ডের মাধ্যমে প্রথমে পাঁচ কোটি টাকা, পরে আরও পঁচিশ কোটি টাকা জমা করেন বিজেপির তহবিলে৷ এই টাকা জমা করার পর আদালতে ইডি জামিনের বিরোধিতা না করায় রেড্ডি জামিন পেয়ে যান৷
রেড্ডির বিভিন্ন সংস্থা ৫২ কোটি টাকা ঘুষের বন্ড কিনেছিল, যার মধ্যে ৩৪.৫ কোটি টাকা সরাসরি দিয়েছে বিজেপিকে৷ গ্রেফতারের পর রেড্ডি কিন্ত্ত কেজরিওয়ালের নাম বলেননি৷ পরে ইডির কর্তারা তাঁকে রাজসাক্ষী করার টোপের মাধ্যমে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়ে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি আদায় করে মামলাটা সাজায়৷ যে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মোদি-শাহরা তদন্ত করাচ্ছেন তাঁরা কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন না, বা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন না৷ বরং মোদি-ঘনিষ্ঠ নীরব মোদি, ললিত মোদি, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়া এবং এই রাজ্যের বিনয় মিশ্ররা আজ বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ আদানির বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত কি মোদি সরকার করেছে? দেশে তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রগুলির জন্য বিদেশ থেকে কয়লা আমদানিতে দামের কারচুপি করে আদানি যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেছে, তার তদন্ত কি মোদি-শাহ করেছেন? গুজরাতের একজন সামান্য ব্যবসায়ী মোদির প্রত্যক্ষ সাহায্যে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনকুবের হলেন কীভাবে? ২০১৪ সালে মোদি এই আদানির বিমানে চড়েই সারা ভারত জুে.ড় নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই সাম্প্রদায়িক-কর্পোরেটের অাঁতাতের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করতে আরএসএসের ঘৃণ্য অভিযান৷
Advertisement
আসলে অসাংবিধানিক নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ঘুষ দেওয়ার বিশদ তথ্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশে প্রকাশ হওয়ার পর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দল বিজেপি দিশেহারা হয়ে পড়েছে৷ কেজরিওয়াল ছাড়াও বহু বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অথচ বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তদন্ত হচ্ছে না বা তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহানের ব্যাপম কেলেঙ্কারি, কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা, বেলারির রেড্ডি ব্রাদার্সের খনি কেলেঙ্কারি, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রমেশ পোখরিওয়াল নিশাঙ্ক, মহারাষ্ট্রের নারায়ণ রাণে, অজিত পাওয়ার, ছগন ভুজবল, আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারির নায়ক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চ্যবন, বাংলার মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীসহ অজস্র নাম উল্লেখ করা যায়৷ যাদের বিরুদ্ধে হয় তদন্ত করা হয়নি বা তদন্ত চলাকালে দলবদল করে বিজেপিতে আসার জন্য ইডি, সিবিআই বা আয়কর তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
Advertisement
এজেন্সি লাগিয়ে ভয় দেখিয়ে কেজরিওয়ালের গ্রেফতার আসলে এক বৃহত্তর চক্রান্তেরই অংশ৷ গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ধ্বংস করার দিকে এগিয়ে চলেছে মোদি সরকার৷ এর প্রতিরোধে এখনই সকলকে এগিয়ে আসতে হবে৷
Advertisement



