স্টেটসম্যান ওয়েব ডেস্ক: নির্মলার চতুর্থ স্তম্ভ বাজেটের ভিত বড় নড়বড়ে। এই প্রধান চারটি স্তম্ভে গরিব, মহিলা, যুব সমাজ ও কৃষকদের কথা বলা হলেও বাজেটে সরাসরি কোনও সুফল মেলার সম্ভাবনা নেই। সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে তিন মাসের ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ বাজেট পেশের সময় চরম ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ বিদায়ী মোদী সরকার ধরেই নিয়েছে, ভোটের পর ফের ক্ষমতায় ফিরে আসছে। ২০১৯ সালের মোদী সরকার রাফালে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ ছিল। ২০২৪-এ বিজেপির সামনে সেই চ্যালেঞ্জ নেই। রামমন্দিরের স্রোতে হাওয়ায় ভাসছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। রেকর্ড ভোটে জয়ের আশা করছে তারা। আর এই আকাশ-কুসুম স্বপ্নের মধ্যেই একটি জল্পনা কিন্তু চোরাস্রোতের মতো খুব তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের ধারণা, এই অত্যধিক আত্মবিশ্বাস লোকসভা ভোটে মোদী সরকারের কাছে বড় ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
দেশের রাজনৈতিক মহলে একটা বড় অংশের ধারণা, ফের ক্ষমতায় এসে জনমুখী উন্নয়নে কাটছাঁট করতে চায় বিজেপি। সেজন্য এখন কোনও জনমুখী বাজেট পেশ করলে, তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদী সরকারকে তার দায়ভার নিতে হতে পারে। এরফলে ফের ক্ষমতায় এসে জনমুখী উন্নয়নে কাটছাঁট করে আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটা কঠিন হয়ে যাবে। সেজন্য কোনও প্রতিশ্রুতি না দিয়ে স্রোতের বিপরীতে গা ভাসালো সরকার। তবে প্রায় দেড়শো কোটি ভারতবাসীর সিংহভাগ মানুষ দিনের শেষে অন্নসংস্থান নিয়ে বেশি চিন্তিত। ধর্ম বা মন্দির নিয়ে নয়। দিনের শেষে তাঁদেরকে ভাবতে হয় হেঁসেলে হাঁড়ি কিভাবে চড়বে। কিভাবে সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে। এই চিন্তা থেকে হতাশা মানুষের রয়েছে। তাঁরা এই আশঙ্কা ও হতাশা থেকে ভোটবাক্সে যে যোগ্য জবাব দেবে, এটাই প্রত্যাশিত।
অন্তর্বর্তী বাজেটে প্রধান চারটি স্তম্ভ গরিব, মহিলা, যুবসমাজ ও কৃষকদের কথা বলা হলেও কার্যত তা অন্তঃসারশূণ্য।
প্রথমত দেশের গরিবদের বিনামূল্যে রেশন, এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ আর আবাস যোজনায় দুই কোটি বাড়ির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, দেশের গরিব, প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে মোদী সরকারের কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি।
দ্বিতীয়ত মহিলাদের ক্ষেত্রে ১ কোটি মহিলার লাখপতি দিদি আর ৯ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের বিনামূল্যে জরায়ুর ক্যান্সারের টিকা ছাড়া আর কিছুই নেই। শিক্ষায় ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দেওয়া প্রচুর বেকার ও শিক্ষিত মেয়েদের কর্মসংস্থানের কোনও নাম গন্ধ নেই। তৃতীয় বিশ্বের মেয়েদের মতো দেশের নারীসমাজকে স্বাবলম্বী করার কোনও নামগন্ধ নেই।
তৃতীয়ত ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে দেশের কোটি কোটি শিক্ষিত যুব সমাজকে চাকরি বা কর্মসংস্থানের স্পষ্ট কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে দেশের বেকার যুবসমাজের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা একেবারে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। গরিব ও বেকার যুবক-যুবতীদের ব্যবসায়িক দিক থেকে স্বাবলম্বী করার জন্য কোনও প্রত্যক্ষ ও সহজ পন্থা দেখানো হয়নি।
চতুর্থত ভারতকে পৃথিবীর খাদ্যভাণ্ডার বলা হলেও দেশের খাদ্য উৎপাদনে যাদের প্রধান ভূমিকা রয়েছে, সেই কৃষকদের উৎপাদিত শস্য ও সব্জি যাতে ন্যায্য মূল্য পায়, এবং কৃষিকাজে ব্যয় কমে সেব্যাপারে সরকারের কোনও স্পষ্ট ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি নেই। খাদ্যদ্রব্য, সার ও পেট্রপণ্যে সরকারি ভর্তুকি ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হয়েছে।এবার অর্থবর্ষে খাদ্যদ্রব্য ও সারে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষের তুলনায় যা ৮ শতাংশ কম। আবার চলতি অর্থবর্ষে পেট্রপণ্যে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। বাজেট মোতাবেক, নতুন অর্থবর্ষে তা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।