২০২০-এর ভারতে আমরা নতুন যে দুটি শব্দের সঙ্গে পরিচিত হলাম সে দুটি হল কোয়ারেন্টাইন এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্স। স্বেচ্ছা গৃহবন্দি আর সামাজিক দূরত্ব। ভারতে বর্তমানে ওই কোয়ারেন্টাইনের ফলে আমরা অনেকেই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি।
আর্থিক সহায় যাদের রয়েছে তাদের সময় কেটে যাচ্ছে দিব্যি। ঘরে বিদ্যুৎ আছে। পাখা ঘুরছে। টিভি দেখা যায়। জল সরবরাহ আছে। পুরসভার সাফাইকর্মীরা আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখছেন। অধিকাংশ রাস্তাঘাট পরিষ্কার।
Advertisement
এরই মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে দিনরাত। ছোট ব্যবসায়ী, সবজি বিক্রেতা, মাছওয়ালা বা পাড়ার মুদি দোকানীদের এই স্বেচ্ছাবন্দিত্বের সুযোগ নেই। আর এর মধ্যেই সামাজিক দূরত্বের একটা আখ্যানও রচিত হয়ে যাচ্ছে নিজে নিজেই। আমরা ওরার দূরত্ব।
Advertisement
আর এই দুরত্বের কারণে সমাজের কোণে কোণে জমে উঠছে ক্ষোভ। যার কিছু বহিঃপ্রকাশ আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি। তাই করোনা মুক্তির লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই সামাজিক দূরত্ব মুক্তির লড়াইও গড়ে তুলি।
আসুন এই সামাজিক দুরত্ব সরিয়ে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে শারীরিক দূরত্ব তৈরি করি। কারণ কোয়ারেন্টাইনের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু শারীরিক দূরত্ব তৈরি করা, মানসিক দূরত্ব তৈরি করা নয়।
তাই যাঁরা ঘরে বসে বসেই ছোট পোশাক পরা অভিনেত্রীর ঘর ঝাড়ু দেওয়া বা অভিনেতার বিরিয়ানি রান্না দেখে হাততালি দিচ্ছি, তারা সমব্যথী হয়ে উঠি সেই বিদ্যুৎ কর্মীটির জন্য যে প্রতিদিন বিদ্যুৎ তৈরি করছে এবং সরবরাহ করছে, অথবা সেই খনি শ্রমিকটির জন্য যে প্রতিদিন এসে আমাদের বাড়িতে জল সরবরাহ করছে। টিভি, খবরের কাগজ অথবা কোনো প্রচার মাধ্যমে এদের কাজের প্রচার হয় না, অথচ এরা ছাড়া আমাদের সমাজ অচল।
তাই আসুন না, এই ধরনের শ্রমজীবী মানুষ যাঁদের ওপরে বর্তমানের কঠিন সময়েও মানুষ নির্ভর করছে তাদের একটু সহানুভূতি নিয়ে ভাবতে শুরু করি আমরা। সমাজের এই অনুশাসন পর্বকে যাঁরা টিকিয়ে রাখছে আসুন না তাদের কথা আজ থেকে একটু গুরুত্ব দিয়ে ভাবা শুরু করি।
Advertisement



