দলকে শুদ্ধিকরণের বার্তা মমতার কাজ না করলে বাদ, সিন্ডিকেট করলে বরবাদ

কর্পোরেশনের কাজের জন্য এখন আর কাউকে যেতে হচ্ছে না অন লাইনের মাধ্যমে মিউটেশন থেকে শুরু করে জন্ম মৃত্যু সার্টিফিকেই সব কাজই এখন হচ্ছে।

পুরভোটে প্রার্থীপদ পেতে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। না হলে টিকিট পাওয়া থেকে বাদ পড়তে হবে। শুধু তাই নয়, কোনও এলাকায় সিন্ডিকেট চালালে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার ফুলবাগানে পুরভোটের এই সভা করতে এসে দলকে শুদ্ধিকরণের বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

এদিনের সভায় তিনি বলেন, সাংসদ, বিধায়ক নয় এলাকায় মাটির কাছাকাছি থেকে কাজ করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ থাকে কাউন্সিলর, কমিশনার প্রমুখ পুরপ্রতিনিধিদের। তাই মানুষের সমস্যা থাকলে তার সমাধান করতে হবে তাদের।

কাজ না করতে পারলে টিকিট দেওয়া হবে না। এটা যে তিনি এবারের পুরভোটের টিকিট দেওয়ার সময়ই করেছেন, সেটা জানিয়ে দিলেন।

এদিন তিনি বলেন, আমাদের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে একটি পাইপ ফেটে পড়েছিল বারবার বলা সত্ত্বেও তা সারানো হয়নি। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে কিছু লোক আমার গাড়ি আটকায় এবং সেই সমস্যার কথা জানায় আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই কাউন্সিলরকে ফোন করে বললাম, এবার কি আমাকে পাইপ সারাই করে দিতে হবে।

তারপর সেই কাউন্সিলরকে টিকিট দিইনি। ভবানীপুর এলাকায় ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রতন মালাকারকে এবার পুরভোটের টিকিট দেয়নি তৃণমূল। এরপর রতন মালাকার প্রথম নির্দল হয়ে দাঁড়ালেও পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। ওই ওয়ার্ডে এবার দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু রতন মালাকারকে টিকিট না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এভাবেই হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদিকে এদিন সিন্ডিকেট নিয়েই সোচ্চার হন তৃণমূল সুপ্রিমো।

তিনি বলেন, কেউ কোনও এলাকায় বাড়ি করলে, বাড়ির উপকরণ কোনও কোনও বিশেষ জায়গা থেকে কেনার জন্য জোরাজুরি করা যাবে না। দুর্নীতি রুখতে বাড়ির করার জন্য অনুমতি দেওয়ার পদ্ধতিও অনলাইনের মাধ্যমে সেরে ফেলার জন্য কড়াকড়ি করতে চান মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন কোনও বস্তি এলাকায় কোনও জায়গা নিয়ে বাড়ি করলে সেখানেও বাইরে থেকে এসে অন্যদের বঞ্চিত করা যাবে না। পুরভোটের আগে জনসভায় এসে এভাবেই দলকে শুদ্ধিকরণের বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম আমলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও দলের মধ্যে শুদ্ধিকরণ নীতির পক্ষে জোর দিয়েছিলেন।

বলেছিলেন উন্নততর বামফ্রন্টের কথা এবার সেই শুদ্ধিকরণের রাস্তায় হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউন্সিলারদের তার ওয়ার্ডের সমস্ত কাজ দেখতে হবে নিজের চোখে, যদি না পারেন তাহলে ভোটে লড়বেন না।

মঙ্গলবার বিকালে উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে কলকাতা কর্পোরেশনের এক নির্বাচনী জনসভায় একথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। সতর্ক বার্তা স্বরূপ তিনি বলেন কাউন্সিলাররা ভোটে জেতার পর মানুষের কথা না শুনলে, তাদের অভাব অভিযোগ না শুনলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা বরদাস্ত করা হবে না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এলাকার উন্নয়নে সব সময় সাংসদ বিধায়কদের কাজের এক্তিয়ার থাকে না যেটা কাউন্সিলরদের থাকে। তাই মন দিয়ে মানুষের কাজ করুন। ভবানীপুরে তিনি দেখেছেন তার কাছে মানুষ কলের পাইপ থেকে জল আসছে না অভিযোগ করেছেন।

তিনি কাউন্সিলারকে বলেছেন বিষয়টি দ্রুত দেখতে। এগুলো করবেন না। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারলেই বড় নেতা হওয়া যায়। বিগত কিছু বছর আগেও কলকাতা ছিল দুঃস্বপ্নের নগরী।

কিন্তু মা মাটি মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলকাতা আজ স্বপ্নের নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশের সমস্ত সিটিতে জলের জন্য পয়সা দিতে হয়। এক বালতি জল সেটা খাবার হোক বা কাপড় কাচার জল হোক সব কিছুতে পয়সা লাগে।

কিন্তু এখানে তা লাগে না রাজ্যের পাশাপাশি কলকাতায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে সরকার। প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখন উন্নত মানের চিকিৎসা পায় শহরবাসী। কলকাতা দেশের মধ্যে প্রথম সিটি যেখানে কোভিড ভ্যাকসিন রেকর্ড পরিমানে মানুষ পেয়েছেন।

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচির ফলে কলকাতায় এখন ৪২ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে। নারী সুরক্ষায় দেশের মধ্যে এখন এক নম্বরে আছে কলকাতা শহর।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছিল যেন বংলায় ক্ষমতায় তারাই বরবাদ আসছে। কিন্তু নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর মানুষ তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে। দুদিনের জন্য গোয়ায় ছিলাম।

সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উপর অত্যাচার চলছে ত্রিপুরাতে ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও নেতাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। আগামী দিয়ে বংলা দেশের পথ দেখাবে। বাংলার এই গর্ব নিয়ে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাবেন।

বাংলার পাশাপাশি দেশের সম্প্রীতি, কৃষ্টি রক্ষায় তিনি সবসময় সচেষ্ট থাকবেন বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন আগামী পয়লা জানুয়ারি মা মাটি মানুষের জন্মদিন। পাশাপাশি ওই দিনটি সুডেন্ট ডে হিসাবেও ঘোষণা করেছে সরকার।

আগামী ৩ জানুয়ারি নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ছাত্রদের হাতে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড তুলে দেবেন। অসম্ভবকে সম্ভব করে এখন রাজ্যে দুয়ারে রেশন কর্মসূচি চলছে। কলকাতার মানুষ ও দুয়ারে রেশন পাচ্ছেন।

আগামী দিনে এই কর্মসূচি আরও উন্নতর হবে বলেও জানান তিনি। কলকাতার বস্তির বাসিন্দারা যে যেখানে আছেন তারা পুনর্বাসন পাবেন হাউসিং কমপ্লেক্স হলে।

গরিব মানুষ কে সবসময় দেখতে হবে সরকারের। তাদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার পাশে সবসময় আে কলকাতার আরও বেশ কয়েকটি উড়ালপুল করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ইতিমধ্যে কিছু কিছু কাজ শুরুও হয়েছে।

এই আমলে মা উড়ালপুল থেকে বাগুইহাটি, সম্প্রীতি ব্রিজ, মাজেরহাট ব্রিজ সহ একাধিক উড়ালপুল হয়েছে। কর্পোরেশনের কাজের জন্য এখন আর কাউকে যেতে হচ্ছে না অন লাইনের মাধ্যমে মিউটেশন থেকে শুরু করে জন্ম মৃত্যু সার্টিফিকেই সব কাজই এখন হচ্ছে।

আগামীতে আরও উন্নয়ন হবে। তার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সমস্ত ভাষার মানুষের জন্যই সরকার কাজ করছে। হিন্দি ভাষা, উর্দু ভাষার জন্য তারা আলাদা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করেছে।

একইসঙ্গে সমস্ত ভাষার মানুষের উৎসবের দিনগুলিও সরকার পালন করে থাকে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত মানুষের কথা চিন্তা করেই রবিবার ভোটের দিন ঠিক করা হয়েছে। তিনি সব মানুষকেই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানান।

পাশাপাশি তিনি বলেন ভোট দিলে আগামী দিনে এন আর সি চালু হলে ভোটার তালিকায় আপনার নাম থাকবে। আর সেটাই হবে আপনার নাগরিকত্ব প্রমাণের বড় অস্ত্র।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, শান্তনু সেন, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শশী পাঁজা, তাপস রায়, বিধায়ক পরেশ পাল, অতীন ঘোষ, মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের কনভেনার শ্রেয়া পান্ডে, অনিন্দ্য কিশোর রাউত, পুজা পাঁজা থেকে শুরু করে ৬০ জন তৃণমূল প্রার্থী।