পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব পালনের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ চলতি বর্ষে করােনা অতিমারি সংক্রমণের ভয় আমাদের তাড়া করে নিয়ে বেড়াচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির সেরে ওঠার সংখ্যাই এখনও পর্যন্ত বেশি হলেও পরবর্তীতে সংক্রমিত ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বিষয়ে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিযুক্ত বিশ্ব চিকিৎসক পরামর্শদাতা পর্ষদের সদস্য সুকুমার মুখার্জি এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গবাসীকে করােনা সুনামির জন্য তৈরি থাকতে হবে। কারণ বিজেপির প্রাক পুজো রাজনৈতিক সমাবেশ, প্রাকপুজো কেনাকাটা এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য করে মানুষের যথেচ্ছ মেলামেশা ও গমনাগমন সংক্রমণের আশঙ্কাকে সহস্রগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। এর ফলে কোনও চিকিৎসার সুযােগ ছাড়াই বাড়িতেই শ্বাসকষ্টজনিত তীব্রতায় মৃত্যু হলেও কিছুই করার থাকবে না।
Advertisement
অন্যদিকে দিল্লিতে ন্যাশনাল সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোল এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, শীতের মরসুমে আবহাওয়ায় দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি, উৎসবের জন্য মানুষের জমায়েতের ফলে করােনা সংক্রমণে প্রতিদিন পনেরাে হাজার মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। এতে হাসপাতালগুলিও তাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে পরিষেবা দিতে অপারগ হলে কোনও কিছুই বলার থাকবে না।
Advertisement
যদিও দিল্লিতে সরকারি নিদের্শ যেমন মাস্ক ব্যবহার বা দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক স্তরে কড়াকড়ি করা হয়েছে। বিশেষত মাস্ক না পড়লে জরিমানা করার ফলে মানুষ বাধ্য হয়েই মাস্ক পরা অভ্যেসে পরিণত করেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের মাস্ক ছাড়াই বাজার এলাকায় জমায়েত হতে এবং দূরত্ব বিধি ভঙ্গ করাটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে উৎসাহ দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ রাজ্যে করােনা নিয়ে সতর্কবার্তাও প্রচার করা হচ্ছে। এযেন সেই ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরার প্রচেষ্টা।
বিপরীত পক্ষে ডাক্তার মুখার্জির সতর্কবাণীও উপেক্ষার নয়। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রধান দুই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সেই দুই যুবকের মৃত্যুর খবর আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি। তাই রাজ্যে চিকিৎসার অপ্রতুলতার কথাও উল্লেখ না করলে নয়।
কোনও আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেসরকারি হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হওয়ার জন্য যদি দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হয় তবে পূজা পর্তী সময়ে বাড়তি সংক্রমণের সংখ্যার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুজোর সময়ে সরকার আইসিইউ এর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে।
এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তা করা সম্ভব কিনা সেটিও বিচার্য। যদিও দিল্লি সরকার অধিক সংখ্যক সংক্রমিত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে যাবতীয় ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই সাফল্য দেখিয়েছে। কেবল আশঙ্কাজনক ব্যক্তিকেই হাসপাতালে ভর্তি করানাের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কিন্তু এনসিডিসি’র আশঙ্কা সত্যি হলে কেবল যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে তাই নয়, সংক্রমণের তীব্রতাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে হাসপাতালগুলির ওপর চাপ বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। এছাড়া, আন্তঃরাজ্য গমনাগমনে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার ফলে সংলগ্ন রাজ্যগুলি থেকেও চিকিৎসার জন্য দিল্লির হাসপাতালগুলিতে ভিড় বাড়বে। একারণে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির প্রশাসনিক তৎপরতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও জোরদার করা জরুরি।
Advertisement



