আসাদুজ্জামান খান মুকুল
তুলির বয়স ন’বছর। সে খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে— খেলা করে, নিজের মতো কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়ায়। তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হলো রঙ-পেন্সিল আর ছবি আঁকার খাতা। মা প্রায়ই বলে, ‘তুলি, তুই শুধুই ছবি আঁকিস আর স্বপ্ন দেখিস কিন্তু, একটুও লেখাপড়া করিস না!’
Advertisement
তুলি হেসে জবাব দেয়, ‘মা, আমি ঠিকই মন দিয়ে পড়ি, আর পাঠ শেষ করেই আঁকিবুকি করি। শোনো মা, আঁকিবুকিও কিন্তু লেখাপড়ারই একটা অংশ।’
Advertisement
একদিন বিকেলে, স্কুল থেকে ফিরে তুলি নিজের ঘরে বসে ছবি আঁকছিল। সেই অঙ্কনটি ছিল এক অদ্ভুত রকমের পাখির ছবি— রঙিন পালক, চোখ দুটি মায়াবী, আর ডানায় তারার মতো ঝিলিক। হঠাৎ তার মনে হলো, এমন পাখি যদি সত্যিই থাকত!
ঠিক সেই মুহূর্তে জানালার বাইরে থেকে একটা মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এলো— ‘তুমি কি আমাকে এঁকেছো তুলি?’
তুলি চমকে গিয়ে জানালার দিকে তাকায়— দেখল ঠিক তার আঁকা সেই পাখিটাই জানালার ধারে বসে আছে। চোখে বিস্ময়, মুখে অপার কৌতূহল নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল—
—‘তুমি কি সত্যিই আমার আঁকা পাখি?’
পাখিটি মাথা নেড়ে, ডানা মেলে বলে— ‘হ্যাঁ, আমিই এই পাখি। যে রঙিন পাখিদের দেশ থেকে এসেছি। আমি অনুভব করেছি, তুমি আমাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে এঁকেছো। তাই আর থাকতে না পেরে তোমার কাছে চলে এসেছি। আমি সেইসব শিশুর কল্পনায় বাস করি, যাদের মনে ভালোবাসা আর স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে।’
তুলি হতবাক! পাখিটি আবার বলে— ‘চলো, তোমাকে আমাদের দেশে নিয়ে যাই। সেখানে তুমি কল্পনা করবে, আঁকবে এবং মুক্তভাবে আমাদের সঙ্গে খেলবে।’
তুলি সানন্দে রাজি হয়ে গেল। সে বাইরে গিয়ে পাখির পিঠে চড়ে বসে। চোখ বন্ধ করতেই বুঝতে পারে— সে শূন্যে উড়ছে! ঘরবাড়ি, গাছপালা, শহরের ছাদ— সব পিছনে ফেলে আকাশে ভেসে চলেছে।
খুব অল্প সময়েই তারা এক রঙিন দেশে গিয়ে পৌঁছয়। সেখানে আকাশে উড়ছে হাজারো রঙিন পাখি, গাছে গাছে বাহারী রঙের ফুল, ফলগুলো চকোলেটের মতো আর জলে ঝিকমিক করছে রংধনু। পাখিটি বলে, ‘এখানে সবাই ছবি আঁকে, কল্পনা করে, আর কারো মনে কোনো কষ্ট নেই।’
তুলি মুগ্ধ হয়ে চারদিকে তাকায়। হঠাৎ এক জায়গায় সে দেখতে পায় একটি পাখি কাঁদছে। তুলি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে— ‘ও কাঁদছে কেন?’
পাখিটি জবাব দেয়— ‘ওর ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। যে শিশুটি ওকে এঁকেছিল, সে এখন আর কল্পনা করে না, আঁকাআঁকিও করে না। সারাদিন শুধু মোবাইল নিয়ে খেলে।’
তুলির মন খারাপ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে— কল্পনা শুধু খেলা নয়, কল্পনায় থাকে এক ধরনের আবেগ আর ভালোবাসা।
তুলি বলে— ‘আচ্ছা আমি কথা দিচ্ছি, আমি ওকে নিয়ে সবসময় ভাববো, কল্পনা করবো, আর অন্যদেরও শেখাবো আঁকতে, ভাবতে আর গড়তে!’
তুলির কথা শুনে চারদিকে পাখিরা হাততালি দেয়, আর আকাশ জুড়ে আলো ঝলমল করে ওঠে। হঠাৎ, তুলির চোখে ঘুম নেমে আসে। আবার যখন জেগে ওঠে, দেখে— সে নিজের ঘরে, নিজের বিছানায়। পাশে পড়ে আছে তার আঁকার খাতা। কিন্তু খাতার পাতায় যে পাখিটা সে এঁকেছিল, তার নিচে ছোট্ট করে লেখা—
‘ধন্যবাদ তুলি।
তুমি আমাদের রঙিন পৃথিবীর বন্ধু।’
Advertisement



