• facebook
  • twitter
Friday, 12 December, 2025

নিবিড় সংশোধনে আকাশছোঁয়া গরমিল, ১২ লক্ষ ভোটারের বাবার বয়স ১৫ বা তার কম

কমিশনের মতে, এই গরমিলগুলির বড় অংশই ‘ডেটা এন্ট্রি’র ভুল, ভুল নথি থেকে তথ্য প্রতিলিপি বা পুরনো রেকর্ডের অসামঞ্জস্য থেকে ঘটেছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের প্রথম পর্যায় শেষ হতেই উঠে এল একাধিক বিস্ময়কর তথ্য। ১১ তারিখ এনুমারেশন ফর্ম জমা পড়ার পর কমিশন যে ডেটা হাতে পেয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ভোটারদের তথ্যভাণ্ডারে অন্তত সাত ধরনের গুরুতর অসামঞ্জস্য বা ‘লজিক্যাল ডিসক্রেপ্যান্সি’ ধরা পড়েছে। যেগুলি পুনরায় খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন সূত্রের দাবি, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডারে ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এবার যে বিপুল পরিমাণ অসঙ্গতি সামনে এসেছে, তা নজিরবিহীন। কমিশনের মতে, এই গরমিলগুলির পরিমাণ এতটাই অস্বাভাবিক যে, এগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে ফের খতিয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই।

Advertisement

বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রায় ১১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৩১টি ফর্মে বাবা-মা এবং সন্তানের বয়সের ফারাক ১৫ বছর বা তারও কম। আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নীচে বিবাহ বেআইনি। ফলে এত কম বয়সে সন্তানের জন্ম দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কমিশনের মতে, সীমিত কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্য হতে পারে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ ভোটারের ক্ষেত্রে এমন হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

Advertisement

আবার আরও চমকপ্রদ তথ্য হল, প্রায় ৮৫ লক্ষ ১ হাজার ৪৮৬টি ফর্মে বাবার নাম রেকর্ডের সঙ্গে মিলছে না। এমন গরমিল হওয়া ফর্মের সংখ্যা ১১ শতাংশেরও বেশি। কমিশন এটিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে দেখছে।

কমিশন দেখেছে, ২৪ লক্ষ ২১ হাজার ১৩৩টি ফর্মে একই পরিবারে ছয় বা তার বেশি সন্তানের তথ্য উঠে এসেছে। কমিশনের অনুমান, এর বেশির ভাগই পুরোনো রেকর্ড থেকে কপি করা ভুল এন্ট্রির ফল।

এছাড়া আরও পাঁচ ধরনের বয়স-সম্পর্কিত অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। যেমন– বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বয়সের ফারাক ৫০ বছরের বেশি এমন ফর্ম পাওয়া গিয়েছে ৮,৭৭,৭৩৬টি। দাদু-দিদার সঙ্গে নাতি-নাতনির বয়সের ফারাক মাত্র ৪০ বছর বা তার কম। এমন ফর্ম পাওয়া গিয়েছে ৩,২৯,১৫২টি। আবার ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সে প্রথমবার ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন জমা পড়েছে ২০,৭৪,২৫৬টি। আবার লিঙ্গ নির্ধারণেও বহু ভুল ধরা পড়েছে। প্রায় ১৩,৪৬,৯১৮টি ফর্মের ক্ষেত্রে পুরুষ না মহিলা বোঝা যাচ্ছে না।

কমিশনের মতে, এই গরমিলগুলির বড় অংশই ‘ডেটা এন্ট্রি’র ভুল, ভুল নথি থেকে তথ্য প্রতিলিপি বা পুরনো রেকর্ডের অসামঞ্জস্য থেকে ঘটেছে। তবে এত বিপুল পরিমাণ সংখ্যাগত ত্রুটি নির্বাচনী নথির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে, যা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন কমিশন।

ফলে ভোটার তালিকাকে আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল এবং আধুনিক করতে কমিশন ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলায় তথ্য যাচাইয়ের টিম তৈরি করেছে। এই টিম গরমিল হওয়া প্রতিটি ফর্ম পুনরায় খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তথ্য যাচাই করবে।

কমিশনের লক্ষ্য একটাই, ‘নির্ভুল, স্বচ্ছ এবং আধুনিক ভোটার তালিকা’ তৈরি করা। আগামী ধাপে এই যাচাইয়ের পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তালিকায় কোন নাম থাকবে এবং কোন তথ্য সংশোধিত হবে।

Advertisement