‘সিমলা ব্যায়াম সমিতি’-র শতবর্ষ উপলক্ষে গত ১৫ ও ১৬ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল সমিতির পূজাপ্রাঙ্গণে। প্রথম দিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী শিল্পী বর্তমান প্রজন্মের প্রতিভাবান সরোদিয়া অভিষেক লাহিড়ী। পিতা অলোক লাহিড়ীর কাছে মাইহার, শাহ্জাহানপুর ও সেনিয়া-বাঙ্গাশ ঘরানায় তালিমপ্রাপ্ত অভিষেক মাইহার শৈলীতে প্রথমে শোনালেন পুরিয়াধানেশ্রী। শিল্পীর গায়কী অঙ্গের স্ট্রোকের মিষ্টত্বে ও বোলবাণীর সৌন্দর্যে , তানকারীর যথার্থতায় পরিবেশন ছিল শ্রুতিনন্দন। পরে শ্রোতাদের অনুরোধে বাজান মিশ্র খাম্বাজ ধুন ও রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’। শিল্পীর সঙ্গে বর্তমানের প্রতিভাবান তবলা শিল্পী রোহেন বোসের সঙ্গত প্রশংসনীয়। ‘কোথুমবালম’ গোষ্ঠী ও ‘ডাকঘর’-এর সদস্যরা এবং কণ্ঠ শিল্পী মনোজ-মনীষা মুরলীর সহযোগিতায় প্রতিভাময়ী নৃত্যশিল্পী সৌরজা ঠাকুরের আকর্ষণীয় পরিবেশন ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’।নৃত্যনাট্যটি ছিল সুপরিকল্পিত এবং শিল্পীরা প্রত্যেকেই তাঁদের ভূমিকায় ছিলেন যথার্থ। শেষ শিল্পী রাঘব চ্যাটার্জী (কণ্ঠ) পরিবেশন করেন তাঁর জনপ্রিয় কিছু গান। ফিউশন-ধর্মী গানের মধ্যে ছিল ভীমপলশ্রী ও মিশ্র পিলু। এছাড়া সুফি গানও ছিল তাঁর চয়নে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানটি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। সেদিন তন্ময় বসুর ‘তালতন্ত্র’ ও নান্দীকার প্রযোজিত ‘বাহনের বায়নাক্কা’ প্রভূত আনন্দ দিয়েছে শ্রোতাদের। সুবিখ্যাত তবলা শিল্পী তন্ময় বোসের এই সঙ্গীত প্রকল্প মূলতঃ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, জ্যাজ, লোকসঙ্গীত ও ‘দেশীয় ড্রামিং’-এর মিশ্রণ নিয়ে। এই স্বতন্ত্র অনন্য সংশ্লেষণে ‘তালতন্ত্র’ নামটি ছন্দের মাধ্যমে এক উপাসনা। বেহালা, সেতার, পারকাসন, কি-বোর্ড, ড্রাম, তবলা সব মিলিয়ে এক অন্য রূপ নেয় সঙ্গীত, সৃষ্টি হয় এক চিত্তাকর্ষক আবহ। ‘খণ্ডম’ অংশটি কলাবতী রাগে পাঁচ মাত্রার বোলে চমৎকার। মিসিসিপি ডেলটা অঞ্চলের ঐতিহ্যময় ‘ডেলটা ব্লুজ্’ সঙ্গীতবিন্যাসের সঙ্গে একই তালে শান্তিনিকেতনের কৃষ্ণদাস বাউলের সুন্দর পরিবেশন লালন ফকিরের ‘সাঁঈ আমার কখন খেলে’। ‘ব্লুজ’ সঙ্গীতের আবহে এই গান সৃষ্টি করে এক অদ্ভুত পরিবেশ। তন্ময় বোসের কণ্ঠে ‘মহানন্দে মহামিলন’ গানটি ও তারপরের ‘বোল-কহন’ মুগ্ধ করে শ্রোতাদের। এরপর পাশ্চাত্য সঙ্গীত-আবহে কৃষ্ণদাসের ‘বাঁকুড়ার মাটিতে’ শুনতে ভাল লাগে। সম্মিলিত বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে যোগ রাগে (আদিতাল/৮ মাত্রা) বিন্যাসে প্রস্ফুটিত শিল্পীদের নৈপুণ্য।
Advertisement
শেষে ঐ আবহেই ঢাকের বাদ্যে শেষ হয় অনুষ্ঠান। ঢাকবাদনে ছিলেন পদ্মশ্রী গোকুলচন্দ্র দাস ও কৃষ্ণ ঢাকী। চিত্তাকর্ষক এই অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে তুলেছেন বেহালায় সৌপ্তিক, কি-বোর্ডে অর্ণব, সেতারে অয়ন সেনগুপ্ত, কণ্ঠে সাগ্নিক, পারকাসনে রাতুলশঙ্কর ঘোষ, ড্রামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়, বাস্ গীটারে মৈনাক নাগচৌধুরী ও সর্বশ্রী তন্ময় বোস। প্রশংসনীয় শুভায়ন গাঙ্গুলির শব্দগ্রহণ। শেষে মঞ্চস্থ হল অর্ঘ্য দে সরকারের পরিচালনায় নান্দীকার প্রযোজিত হাসির নাটিকা ‘বাহনের বায়নাক্কা’। সুদূর কৈলাসে মাদুর্গা, শিব ও তাঁদের সন্তানদের কেন্দ্র করে এই নাটকের উপজীব্য প্রতিটি দেব-দেবীর বাহন নিয়ে মজাদার কাহিনী। দীপান্বিতা রায়ের গল্পে দেখানো হয়েছে দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের বাহনরা কিভাবে তাঁদের সঙ্গী হলেন। হাস্যরসাত্মক এই নাটকটির রঙ্গ সুন্দরভাবে চিত্রিত কুশীলবদের সুন্দর অভিনয়ে।
Advertisement
অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় ছিলেন সোহিনী রায় এবং ব্যবস্থাপনায় শুভদীপ রায়। তন্ময় বোস কে সন্মাননা জ্ঞাপন করেন বেঙ্গল জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ধীরা রায়। এছাড়া প্রথম দিনের সব শিল্পীই ছিলেন সন্মাননা প্রাপক।
Advertisement



