রবীনা মিত্র
বাঙালি চিত্রপরিচালক জয়ব্রত দাসের প্রথম সিনেমা ‘দ্য আ্যকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’কে বাংলা সিনেমায় প্রকৃত ‘নিও-নোয়ার’ ছবি তৈরির ক্ষেত্রে একটি সফল প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে। ছবিটি ‘নোয়ার’ সিনেমা পরিচালক কোয়েন্টিন টারানটিনোকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে তাঁর ছবির ক্লাসিক স্টাইল তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
১৮৯০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত সময়কাল নিম্ন ও মধ্যমেধার গোয়েন্দা গল্প, ক্রাইম-থ্রিলার, কল্পবিজ্ঞান বিষয়ক গল্প ছাপা হত কমদামি, কাঠের মণ্ড (উড পাল্প) থেকে তৈরি একধরনের কাগজে (যা ‘পাল্প ফিকশান’ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে)। বাংলায় যদিও এই ‘পাল্প’ সাহিত্যের গোড়াপত্তনের ইতিহাস গতি পেতে শুরু করে ১৮১৬ সালে ছোটো ছোটোছাপাখানা তৈরি হওয়ার পর। ১৮১৬ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘বটতলার বই’ যা খুব নিম্নমানের পৃষ্ঠায়, আদিরসাত্মক ভাষা ব্যবহার করে, ১০-২০ পাতার পত্রিকা হিসাবে ছাপা হত। এই ‘বটতলা’ সাহিত্যই বিংশ শতকের গোড়া থেকে ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। শুরু হয় গোয়েন্দা গল্প, রোমাঞ্চকর কল্পবিজ্ঞানের গল্প, খুন-রক্তারক্তি, নিষিদ্ধ এবং অশ্লীল যৌনতার গল্প লেখা। এই পাল্প সাহিত্য হুড়মুড়িয়ে বিক্রি হতে থাকে স্বল্প-শিক্ষিত জনতার মধ্যে এবং খুব দ্রুততাহয়ে ওঠে লোকসংস্কৃতির একটি অংশ।
Advertisement
‘নিও-নোয়ার’ জঁরার বিশেষত্ব হল ‘ভিস্যুয়াল কোয়ার্ক’। এই ‘ভিস্যুয়াল কোয়ার্ক’কে সফলভাবে ধরেছে জয়ব্রত দাসের নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘দ্য আ্যকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’। এই সিনেমাটিকে একটি ‘পাল্প অ্যাকশন-থ্রিলার’ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, যার একটি নিজস্ব মৌলিক বাঙালি স্বাদ রয়েছে। গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছেএকদল পেশাদার অপরাধী যারা একটি বিরল, অনেক পুরোনো মদের বোতল চুরি করার চেষ্টা করে। এই বোতল চুরি করতে গিয়ে দর্শকদের পরিচয় হয় অপরাধীদের দলের প্রত্যেকের সঙ্গে। গল্পটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রকে অনুসরণ করে এবং তাঁদের অতীত এবং বর্তমানের কথা দর্শকদের জানায়। গল্পটি বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভালোবাসা থেকে ধীরে ধীরে পরিণত হয় বিশৃঙ্খলা, হিংসা, বিশ্বাসঘাতকতা, হত্যা, রক্তারক্তি এবং অন্ধকার হাস্যরসের একটি গল্পে।
Advertisement
সিনেমাটির মেজাজ এবং মেজাজ পরিবর্তনকে তুলে ধরেছে অন্য মাত্রায়। পরিচালনার গুণে প্রাপ্তবয়স্ক হাস্যরস এবং অশ্লীল ভাষার প্রভাব অনেক জায়গায় লঘু হয়ে গিয়েছে। ছবিতে কথকের চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষ। রুদ্রনীলের অভিনয় সাবলীল এবং কিছু জায়গায় অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অন্যান্য মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরভ দাস, রাহুল ব্যানার্জি, ঋষভ বসু, সুদীপ মুখার্জি, পায়েল সরকার, অনুরাধা মুখার্জি, অমিত সাহা প্রমুখ জনপ্রিয় অভিনেতারা। প্রত্যেকের অভিনয়ই প্রশংসার দাবি রাখে।
Advertisement



