দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া। আর এই এসআইআর-কে ঘিরে বাড়ছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে, সেখান থেকে এই কাজের একেবারে প্রাথমিক স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন বুথ লেবেল অফিসার (বিএলও)-এর মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক আরও দানা বেঁধেছে। গত তিন সপ্তাহে এমন ৭ রাজ্যে ১৫ জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে নানাভাবে। মৃতদের পরিবারের অভিযোগ, কম সময়ের মধ্যে এমন বিপুল কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি এর মধ্যে রাজ্যে এক বিএলও-র আত্মহত্যার ঘটনাকে ঘিরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে। পরপর এতজন বিএলও-র মৃত্যুর জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিজেপিকে নিশানা করে এসআইআর প্রক্রিয়াকে ‘গায়ের জোরে চাপিয়ে দেওয়া নির্যাতন’ এবং ‘নাগরিকদের হেনস্তা করার সুচিন্তিত ছক’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি বিএলও’দের মৃত্যুকে অপ্রয়োজনীয় চাপের ফলে এই ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও উপেক্ষা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। বিরোধী দল কংগ্রেস অবশ্য প্রথম থেকেই বলে আসছে যে, ভোট চুরির লক্ষ্যে কমিশনকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে নিচ্ছে বিজেপি।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে অভিযোগ করেছেন যে, এসআইআর-এর নামে গোটা দেশে ডামাডোলের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে তিন সপ্তাহে ১৫ জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে দেশে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি আত্মঘাতী হয়েছেন কেউ কেউ। ফলে এসআইআর কোনও সংস্কার নয়, এটা গায়ের জোরে চাপিয়ে দেওয়া নির্যাতন। কটাক্ষ করে রাহুল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন এমন এক ব্যবস্থা চালু করেছে যেখানে নাগরিকদের ২২ বছর আগের ভোটার তালিকার স্ক্যান করা হাজার হাজার পাতার মধ্যে থেকে নিজের নাম খুঁজে বের করতে হচ্ছে। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, প্রকৃত ভোটারের নাম ছেঁটে ফেলে ভোট জালিয়াতির প্রক্রিয়া অক্ষত রাখা।
Advertisement
রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, ‘ভারত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অসংখ্য উদাহরণ তুলে ধরেছে বিশ্বের সামনে। সেখানে নির্বাচন কমিশন এখন মান্ধাতা আমলের কাগজপত্রের জঙ্গলেই আটকে রয়েছে। যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে এই তালিকা ডিজিটাল করা হতো। মেশিনে পড়া সম্ভব হলে নাম খুঁজে নেওয়াও সহজ হতো। নিজেদের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য আরও সময় নেওয়া উচিত ছিল কমিশনের। কিন্তু তার বদলে ৩০ দিনের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া গুটিয়ে আনতে তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে।’
Advertisement
দেশের নাগরিকদের হেনস্তা করার পরিকল্পিত ছক হলো এসআইআর। আর বিএলও-দের মৃত্যু হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় চাপের বিষয়টি ক্রমাগত উপেক্ষা করার ফলে। এটা কোনও ব্যর্থতা নয়, এটা একটা ষড়যন্ত্র। ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখতে আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে গণতন্ত্রকে। বস্তুত, গত কয়েকদিনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, কেরালা, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে ১৫ জন বিএলও প্রাণ হারিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের রাইসেন ও দামো জেলায় ২ জন বিএলও অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারান। তাঁদের পরিবারের অভযোগ, বিএলও হিসাবে অত্যাধিক কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন এমনও অভিযোগ করেছেন যে, ওপর মহল থেকে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাঁরা দু’জনেই শিক্ষক। পড়ানোর পাশাপাশি এসআইআর-এর চাপ এঁরা নিতে পারেননি বলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই রাজ্যে আরও দু’জন বিএলও-র একই কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। আবার চাপ থেকে মুক্তি পেতে এক বিএলও ৬ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কেরালা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। সবারই পরিবারের অভিযোগ একই রকম প্রায়। এত কম সময়ের মধ্যে এই বিপুল পরিমাণ কাজের চাপ তাঁরা নিতে পারেননি। উত্তরপ্রদেশে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে এক বিএলও-র। আগে কয়েকদিন ধরেই তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এতো মৃত্যুর পরও কমিশন কোনওভাবেই চাপের কথা মানতে চাইছে না। তাড়াহুড়ো করে গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করার উদ্যোগ চলছে। রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও এসআইআর নিয়ে তাড়াহুড়োর অভিযোগ তুলে একে নোটবন্দি এবং কোভিড-১৯ সময়কালের লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘ভোট চুরি করতে গিয়ে প্রাণঘাতী পরিণতি ঘটছে।’ নীরব দর্শকের ভূমিকায় নির্বাচন কমিশন।
Advertisement



