• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রতিষ্ঠার ২৬তম বর্ষে প্রিমিয়ার ডিভিশনে পৌঁছল বিধাননগর

সাম্প্রতিক মরশুমের ক্যালকাটা ফুটবলে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি প্রথম বিভাগ থেকে প্রমোশন পেয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনে উঠে এসেছে।

রণজিৎ দাস

কলকাতা লিগের ফুটবল মানচিত্রে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৯ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি গত পঁচিশ বছর ধরে কেবল ক্রীড়াবিদ তৈরিই করেনি, বরং ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের সেই বৃহত্তর নগর পরিকল্পনার ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। পৌরসংস্থা পরিচালিত একটি ক্রীড়া অ্যাকাডেমির পক্ষে কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ বিভাগে নিজেদের জায়গা করে নেওয়া এক বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য।

Advertisement

সাম্প্রতিক মরশুমের ক্যালকাটা ফুটবলে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি প্রথম বিভাগ থেকে প্রমোশন পেয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনে উঠে এসেছে। এটি কেবল একটি স্থানীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয়, বরং পেশাদার ফুটবলের উচ্চ স্তরে লড়াই করার ক্ষমতায় স্বীকৃতি পায়। নার্সারি লিগ দিয়ে যাত্রা শুরু। একসময় প্রখ্যাত কোচ অমল দত্তের প্রশিক্ষণে আবাসিক ক্যাম্প চলতো। প্রাক্তন ফুটবলার শ্যামল ঘোষের মতো প্রশিক্ষকের সান্নিধ্যে এবং তাঁর আদর্শে বেড়ে ওঠা এই অ্যাকাডেমির দিলীপ পাল, গৌরাঙ্গ ব্যানার্জী ও মইদুল ইসলাম— সকলে যুক্ত ছিলেন প্রশিক্ষক হিসেবে। নার্সারি লিগে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ান বা রানার্স আপ হওয়ার পাশাপাশি, তারা পরবর্তী সময় সর্বভারতীয় যুব লিগের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০২২ সালে তারা নার্সারি লিগের পাশাপাশি কলকাতা ফুটবল লিগের তৃতীয় বিভাগেও খেলার সুযোগ পায়। তিন বছরেই তারা যোগ্যতা অর্জন করে প্রিমিয়ার ডিভিশনে পৌঁছে গেল। পুরনিগমের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী খেলোয়াড়দের এই সাফল্যে উল্লসিত। মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর নেতৃত্ব এবং একাডেমি পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে ওনার সহযোগিতার কথা জানতে পারা যায়। ক্রীড়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ আরত্রিকা ভট্টাচার্যের পূর্ণ সহযোগিতা এবং সমর্থন এই অ্যাকাডেমির চলার পথ সহজ হয়েছে। এ ছাড়াও প্রশাসনিক সমস্ত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সাহায্য অ্যাকাডেমির চলার পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে, আরো অনেকের সঙ্গেই এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল কান্তি করণ ও পৌর-কমিশনার সুজয় সরকারের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

Advertisement

সকলের সহযোগিতায় অ্যাকাডেমির এই বিরাট কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন এই পুরনিগমের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়ম দে, যিনি এই অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক।

একটি পুরনিগমের উচ্চপদস্থ আধিকারিক হিসেবে প্রিয়ম দে-র উপস্থিতি অ্যাকাডেমির দীর্ঘমেয়াদী সাংগঠনিক সুরক্ষা ও শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা দিয়েছে। প্রখ্যাত ফুটবলার ও বর্তমান অ্যাকাডেমির টিডি বাসুদেব মণ্ডল, কোচ সুকান্ত বোস, গোলকিপার কোচ বৈশাখী মণ্ডলদের নিয়ে গঠিত কোচিং স্টাফদের সঙ্গে তার প্রতিদিনকার যোগাযোগ, সাফল্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক। অ্যাকাডেমির সাফল্যকে কেবল খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য হিসেবে না দেখে, সকলের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে প্রিয়ম দে চিহ্নিত করলেন। ভুললেন না প্রশিক্ষক নীলাঞ্জন গুহর অবদানের কথা যিনি প্রয়োজনের সময় এই দলকে সাহায্য করেছেন।

এই অ্যাকাডেমিতে ৫ বছর বয়স থেকে ১৩ বছরের বিভিন্ন গ্রুপের প্রশিক্ষণ হয়। প্রায় ৩৬০ জন ফুটবলারের নাম সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নথিভুক্ত করা আছে। এদের রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নার্সারি থেকে প্রিমিয়ার লিগের টিমের প্র্যাকটিস হয়। প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ আছে। এমন প্রক্রিয়াতেই নার্সারী এবং যুব লিগ থেকে উঠে আসা মিলন মান্ডি, বরুন মুর্মু, সূর্য বেসরা ও সুমিত মজুমদার— এরা এখন প্রিমিয়ার ডিভিশনেও খেলবে। মাধব দাস, অখিল রাজবংশী, শঙ্কর রায়, সুজিত সাঁধুদের সঙ্গে বর্তমানে সঞ্জয় ওঁরাও, সন্দীপ মালিক, দীপ্রভাত ঘোষরা বড়দলে খেলার সুযোগ করে নিচ্ছে— ফুটবলারদের এমন উত্থানে অ্যাকাডেমি গর্ব অনুভব করে। পৌরসভা থেকে প্রতিটি খেলোয়াড়দের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি, অভিভাবকদের মতামতকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ্রাসরুটের উন্নতিই প্রধান লক্ষ্য। ফুটবলের সঙ্গে ক্রিকেট ও সাঁতারেও আকর্ষণীয় সাফল্যে আছে।

ডা. বিধান চন্দ্র রায় ও আধুনিক বিধাননগরের ভিত্তি— বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমির মূল আদর্শে নিহিত রয়েছে। শহরের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের বৃহত্তর সামাজিক এবং নাগরিক দর্শন— অ্যাকাডেমির প্রেরণা ও চালিকাশক্তি।

অ্যাকাডেমি কেবল প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল দল তৈরি করছে না, বরং একটি সক্রিয় ক্রীড়া সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে।

ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের স্বীকৃতিতে জাতীয় মানদণ্ড বজায় রাখা এবং বাংলায় পেশাদার খেলোয়াড় তৈরির গুরুদায়িত্ব অ্যাকাডেমির উপর বর্তেছে।
সাম্প্রতিক মরশুমে বিধাননগর স্পোর্টস অ্যাকাডেমি তাদের গ্রুপ পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়ে সুপার সিক্সের কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে। এই পর্যায়ে, তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে। উল্লেখযোগ্য জয় হলো ক্যালকাটা পোর্ট ট্রাস্টের বিরুদ্ধে

১-০ গোলে এবং উত্তরপল্লী মিলন সংঘের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে। কেবল অংশগ্রহণকারী নয়, বরং প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলার যোগ্য এক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। রাজ্য সরকারের বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি ও পৌর নিগমের বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্ট অ্যাকাডেমি মধ্যে ‘ডার্বি’ লড়াই উল্লেখযোগ্য। যে কোনও পর্যায়ে এই দুই দল মুখোমুখি হলে টানটান উত্তেজনায় খেলা হয়। গ্রুপ পর্যায়ের এই ডার্বিতে বিধাননগর জয়ী হয়। এবারের চ্যাম্পিয়ন দলের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সে গোলকিপার দেবা বক্সির নাম উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু আক্রমণভাগের মিলন ও সুমিত মজুমদার ১২টা গোল করেছে। সুমিত একাই ৯টা গোল করেছে। দু’জনেই নার্সারি লিগ থেকে খেলতে খেলতে উঠে এসেছে।সুমিত ও মিলন— বিধাননগর অ্যাকাডেমির সম্পদ। সমরেশ বর্মন, তৌসিফ আলি আনসারি, রবি মণ্ডল, স্বর্ণদীপ দাস, বরুন মুর্মু, সূর্য বেসরা, কুন্তল মণ্ডল, মোহন বৈরাগি, রীতেশ ঠাকুর, সুখেন্দ্র ওঁরাও, সোমনাথ যাদব, প্রীতম কোলে, সম্রাট কায়পুত্র, রাহুল বাউরি— প্রত্যেকেই দলে নিয়মিত ভালো খেলেছে। দলে অনেকেই সুযোগ পায়নি। কিন্তু দলে তাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং এই টিম স্পিরিটই সাফল্যের মূলস্তম্ভ ছিল। এছাড়া ম্যাচে অভিভাবকদের উপস্থিতি নজর কাড়তো।

প্রিমিয়ার ডিভিশনে উন্নীত হওয়া বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমির ২৫-২৬ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার এক বিশাল বিজয়। যে জয়, বিধাননগর পৌরসভার ক্রীড়া উদ্যোগের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করেছে।

Advertisement