গত আগস্ট মাসের গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে শিক্ষাদীক্ষায় অন্যান্য দেশের মানুষের শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি ছিলেন না, যাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধান হিসেবে গ্রহণ করা যায়। তা না করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাংশ, জামাতে ইসলামী, পাকিস্তানপন্থীরা, মৌলবাদীরা এবং কয়েকটি ছাত্র সংগঠন দিনে দিনে বিদেশে বসবাসকারী শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মহম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের পক্ষে বসানো। খান সাহেবকে সুদূর প্যারিস থেকে উড়িয়ে এনে এই পদে বসানো হল। আওয়ামি লিগ সরকারের শাসন কালে তাঁর বিরুদ্ধে নৈতিকতা বিরোধী অনেকগুলি কেস ছিল কোর্টে। পদে বসার প্রাক্কালে তাঁর বিরুদ্ধে এইসব কেস তুলে নেওয়া হল। পদে বসেই তদারকি সরকারের প্রধান ঘোষণা করলেন আগস্টের মারদাঙ্গায় বাংলাদেশে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সংস্কার করবেন, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন— এই কাজের পর তিনি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন— এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হবে। বাংলাদেশের জনগণকে এই আশ্বাস দিলেও বাস্তবে সংস্কারের নামে আহামরি কিছু হয়নি। সেনাবাহিনী সহ দেশের জনগণ তাঁর এই ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করলেন। তাঁর শাসনকালে অনেক তালগোল পাকিয়ে গেল বাংলাদেশের রাজনীতি। ছাত্র সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার বদলে রাজনীতি নিয়ে মজে গেল ছাত্ররা। .বাংলাদেশের সৃষ্টিকর্তা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলা হল।
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের একাংশের প্ররোচনায় জামাত, মৌলবাদী এবং পাকিস্তানপন্থীদের চাপে পড়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগ, যে দল দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের শাসনকার্য চালিয়েছে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। তার অনেক আগেই আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বচরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে তদারকি সরকারের প্রধান সংস্কারের কাজে আহামরি কিছুই করতে পারলেন না। ফলে সেনাবাহিনী, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে আশু নির্বাচনের জন্য ইউনূস খানের ওপর চাপ সৃষ্টি করল। খান সাহেবের ইচ্ছা না থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হবে, ঘোষণা করলেন। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, তদারকি সরকারের প্রধান তাঁর এই পদে আর না থাকার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। একটি রাস্তা তাঁর সামনে খোলা। সেটা কী?
Advertisement
তলে তলে গোপনে, কিছু রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে—তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাসনা জানালেন। তাহলে বর্তমান প্রেসিডেন্টকে কি অপসারণ করা হবে? না, তাও নয়, তাঁকে একেবারে সরিয়ে অন্য কোনও দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ইউনূসের মনোবাসনা তাহলে পূর্ণ হতে পারে। কিন্তু তাই বা কী করে সম্ভব? দেশের প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা তো ঠিক করবেন বাংলাদেশ সংসদের সাংসদরা। তাঁর নিজের ইচ্ছে মতো তো প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। কিন্তু শান্তির জন্য লোবেল পুরস্কারে ভূষিত ইউনূস তা মানতে নারাজ। বিএনপি আশা করে, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করবে— দল ঠিক করবে কে দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু ইউনূসের অনুগামী যাঁরা, তাঁরা বললেন, খান সাহেবই প্রেসিডেন্ট হবেন। এই প্রশ্নে বিতর্ক এখন দানা বাঁধছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, তত বাংলাদেশের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিএনপি ইতিমধ্যেই তাঁদের দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে লড়বেন— তার মধ্যে বগুড়া এক নম্বর আসনটি রয়েছে। তাঁর পুত্র তারেক, যিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান, লড়বেন একটি আসন থেকে। তিনি এখনও বিদেশে অবস্থান করছেন। অন্যান্য দলও তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের সংসদে সদস্য সংখ্যা ৩০০।
Advertisement
ইউনূসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা শুনে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা অবাক। তাঁদের মধ্যে কবি, সাহিত্যিকরাও রয়েছেন। ইউনূসের চেষ্টাতেই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্যতা হয়েছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এই দহরম-মহরম পছন্দ করেন না বাংলাদেশের বিশিষ্ট জনেরা। যে কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ফাটলেরও সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দেশের অনেকেই মনে করেন, ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের চলা কঠিন। ভারতও চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। মানুষ শান্তিতে বাস করুক। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক।
বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের বন্ধুত্ব দৃঢ় করার জন্য করাচি বন্দর বাংলাদেশকে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। অচিরেই বাংলাদেশ ও ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলও শুরু হবে। এই সব বিষয়গুলি পছন্দ করছেন না বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলেন যে, পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধ কালে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করেছে, সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চলে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারের ঘনঘন বাংলাদেশে আাসেন। পাক প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। তাই বাংলাদেশের উন্নতির জন্য যত প্রয়োজনীয় সাহায্যের প্রয়োজন তা দেওয়া হবে। এদিকে ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশ বলেছে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ হয় এবং প্রতিষ্ঠিত সব দলকেই যেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক।
Advertisement



